• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তার লেখায় ছিল সম্মোহনী শক্তি

মাজহার খন্দকার

  ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ১২:০২

হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখকও মনে করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দু’শতাধিক।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ায় জন্ম নেন এ গুণী সাহিত্যিক।

কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়া হুমায়ূন আহমেদের চাইতে গুরুত্বর্পূণ অনেক লেখক থাকলেও তার মতো জনপ্রিয় লেখক বাংলা ভাষার ইতিহাসে বিরল। পাঠকদের ধরে রাখার মতো অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তার। হুমায়ূন আহমেদের বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তও হয়েছে।

তার সৃষ্ট হিমু , মিসির আলি ও শুভ্রা চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তার টেলিভিশন নাটকগুলো ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

দুর্লভ প্রতিভার অধিকারী সৃষ্টিশীল সাহিত্য জগতের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ তার কর্মকাণ্ডের মধ্যমে দু’বাংলায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিলেন। তার লেখার মূল উপকরণের সাথে সহজ ও সাবলীল ভাষায় রসবোধ ঢুকিয়ে মধ্যবিত্ত জীবনের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, আবেগ, ভালোবাসা, আনন্দ-বেদনাকে ভিন্ন দৃষ্টিভংঙ্গিতে রূপায়ণ করেছেন।

তার প্রথম প্রকাশিত ‘নন্দিত নরকে ও শংখনীল কারাগার’ উপন্যাসে মধ্যবিত্ত জীবনের গভীরতর বেদনাকে গল্পের বুননে এমন চিরচেনা চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন, যা পাঠককে সম্মোহনী শক্তিতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।

জীবনের বাস্তবতা, সামাজিক জীবনের ভেতরের জটিলতাকে নিজস্ব জগতের রহস্যময়তায় উপস্থাপন করতেন তিনি। তাইতো উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, ছোটগল্পসহ নানা শাখায় তার অবাধ বিচরণ ঘটে। লেখায় কল্পনার বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে নিঁখুত জীবন শৈলীর রূপায়ণ ঘটিয়েছেন।

নিজের রচনাকে জনপ্রিয় করে তোলার কলা-কৌশল বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন। নন্দিত নরকের কাহিনী গড়ে উঠেছিলো মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখ গাথা এক কাহিনীতে। আবার মধ্যাহ্ন সৃষ্টি করেন ১৯০৫ সালের প্রেক্ষাপট নিয়ে। ভারতবর্ষে বঙ্গভংঙ্গের তোড়জোড় । হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গার বিষয়গুলো উঠে আসে সেখানে। ‘দেয়াল’ সৃষ্টি করেছেন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে। একাত্তোরের পটভুমিতে সৃষ্টি করেছেন মন ছুঁয়ে যাওয়া উপন্যাস ‘জোছনা ও জননীর গল্প’।

শুধু উপন্যাসে নয় গল্পেও বহুমাত্রিকতার সম্ভাবনা দেখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ভৌতিক গল্প, অতি প্রাকৃত গল্প, এসব শিরেনামে যে গল্পগুলো লিখেছেন তা বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে।

নন্দিত নির্মাতাও হুমায়ূন আহমেদ। আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া ,শ্রাবণ মেঘের দিন মুক্তিযুদ্ধভিওিক চলচ্চিত্র তৈরি করে তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশের জন্ম ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। এছাড়া দুইদুয়ারি, চন্দ্রকথা বা ঘেটুপুত্র কমলা তার রসবোধ দিয়ে তৈরি করে হল বিমুখ দর্শকদের হলে আসতে বাধ্য করেছেন।

আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটক রচনা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। প্রথম থেকেই তার ধারাবাহিক নাটকগুলো দর্শকপ্রিয়তা পায়। কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি, অয়োময়, এই সব দিন রাত্রি, মেঘ বলেছে যাব যাব, নীতু তোমাকে ভালোবাসি নাটকগুলো দু’ যুগ পরেও মানুষের মুখে মুখে।

অন্যদিকে ও আমার উড়াল পঙ্খিরে, একটা ছিলো সোনার কন্যা, বর্ষার প্রথম দিনে, চাঁদনি পসর রাইতে আমার, ঢোল বাজ দোতারা বাজে, আজই আমার কুসুম রাণীর এসব জনপ্রিয় গান সৃষ্টি করে অমর হয়ে রয়েছেন।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই এই জগতের সব মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান এ গুণী সাহিত্যিক চলচ্চিত্র ও নাট্যকার। যে ভূবনে তিনি প্রবেশ করেছেন তা থেকে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই । তবুও তার প্রতিভার স্পর্শে ও সৃষ্টিশীল মনন ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে সমাদৃত থাকবেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। তিনি স্বতন্ত্র মহিমায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন এ বাংলায়।

এমকে/এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh