• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নাজিমউদ্দিন রোডের মঞ্চে যত ফাঁসি

হুসাইন তারেক

  ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:১০

১৭৮৮ সালে একটি অপরাধ ওয়ার্ডের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু। ব্রিটিশ শাসক তাদের দরকারে, তাদের মতো করেই তৈরি করে কারাগারটি। এরপর পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ। ২শ’ ২৮ বছরের ইতিহাস ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার। তবে গেলো ২৯ জুলাই ঐতিহাসিক এই কারাগার সরিয়ে নেয়া হয় কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায়।

২শ’ ২৮ বছরের ইতিহাসে অনেক অপরাধীর ফাঁসির নীরব সাক্ষী এই কারাগার। এখানে যেমন রক্ত পিপাসু ইংরেজদের হাতে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক মজুরকে। তেমনি পাকিস্তানি হায়েনা গোষ্ঠিও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে আরো ভয়াবহভাবে।

স্বাধীন বাংলার স্বপ্নে বিভোর বাংলার সূর্যসন্তানদের রক্ত ঝরানো হয়েছে এই কারাগারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের কারাবরণের অনেক গৌরবের ইতিহাসও জড়িত নাজিমউদ্দিন রোডের এই দালানে। ৭৫ এ বাংলার মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ৩ নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় ৪ নেতাকে।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এই ফাঁসির মঞ্চে কতজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসেব না থাকলেও স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনার পর এখন পর্যন্ত ৪শ’ ৩৩ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। দেশের ঐতিহাসিক প্রায় সব ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এখানে।

১৯৭৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে স্বাধীন দেশে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম রক্ত ঝরানো হয়। ফের যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির মাধ্যমে ২শ’ ২৮ বছরের ইতিহাসের অধ্যায় শেষ হয়।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই কারাগারের ফাঁসির মঞ্চেই কার্যকর করা হয় ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫ আসামি সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, একেএম মহিউদ্দিনের।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার দায়ে ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ১২ জন সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয় ২শ’ ২৮ বছরের পুরোনো এই কারাগারে। ১৯৮২ সালে ৬ এবং ১৯৮৩ সালে ৭ জনের রায় কার্যকরও হয় এখানে।

এরপর ১৯৮৫ সালে ১৩ জন ও ১৯৮৬ সালে ২৬ জনের ফাঁসি হয়। ১৯৮৮ সালে দু’জন ও ১৯৯০ সালে ১ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। ১৯৯২ সালে ফাঁসি হয় ৫ জনের। ১৯৯৪ সালে কার্যকর হয় দু’জনের ফাঁসি। ১৯৯৭ সালে আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ দু’জনের ফাঁসি হয়।

এরপর ২০০১ সালে ৩ এবং ২০০২ ও ২০০৩ সালে দু’জন করে ৪ জনের ফাঁসি হয়। ২০০৭ সালে স্ত্রী হত্যার দায়ে নারায়ণগঞ্জের রিপনের ফাঁসি হয় কেন্দ্রীয় কারাগারের এই মঞ্চে।

পরকীয়ার জেরে স্ত্রী হত্যার দায়ে ডা. ইকবালের ফাঁসি, শারমিন রীমাকে হত্যার দায়ে স্বামী মনিরের ফাঁসিও কার্যকর হয় পুরোনো এই ফাঁসির মঞ্চে।

তবে সবচেয়ে আলোচিত ফাঁসি কার্যকর হয় শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ও ৭১ এর ৫ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল ২শ’ ২৮ বছরের পুরোনো ফাঁসির মঞ্চটি।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামান এবং একই বছরের ২২ নভেম্বরে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদেরও ফাঁসি কার্যকর হয় একই মঞ্চে।

গেলো ২৮ ও ২৯ জুলাই পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড় থেকে ২শ’ ২৮ বছরের কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর হয়।

২০০৭ সালে ৪শ’৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ একর জায়গার ওপর কেন্দ্রীয় কারাগার তৈরি শুরু হয়।

এইচটি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • ফিচার এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh