• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আমার দেবার যে সময় এসেছে

জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু, আরটিভি অনলাইন

  ০৭ মার্চ ২০১৮, ১৪:২৬

চেতনা। স্বপ্ন। ভালোবাসা।

শব্দগুলো বড্ড বেশি ঠুনকো লাগে। সবসময় কেন যেন মনে হয় আমি, আমরা খুবই অভাগা যারা বায়ান্ন পাইনি বাস্তবে কিংবা ধারণ করতে পারিনি আমাদের অস্তিত্বে। আর একাত্তর? এ তো আমাদের কাছে লোমহর্ষক হলিউডের কোনো মুভি। কল্পনায় ইতিহাসের প্রেক্ষণবিন্দুতে বাস করলেও ইতিহাস হয়ে ওঠা হয়নি আজও। দুঃস্বপ্নের ঘোলাটে এক অনুভূতি ক্যালেন্ডারের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকা সেই নয় মাস যেখানে- বাঙালির বুকের কাছে রিকোয়েলেস রাইফেল। ব্যালটের পায়রায় স্বাধীনতার হৃৎপিণ্ড। স্বাধীন মাটির স্বপ্নে বিভোর এক উদ্ভ্রান্ত উদ্বাস্তু জাতি - বাঙালি।

আমার কাছে

বাঙালি- মহাকাব্যের উপমার মতো উদ্বেল একটি শব্দ; বাংলাদেশ-অসীম নীলিমার মতোই স্নিগ্ধ,পবিত্র।
মুক্তিযুদ্ধ-জেগে ওঠা নতুন ভোরের সূর্যের মত মায়াময়।

সাড়ে সাতকোটি বাঙালি হয়ে ওঠে যেন এক নিটোল কবিতা। একজন মুক্তিযোদ্ধার চোখের ফ্রেমে নাকি হাজার টুকরো স্বপ্ন দেখা যেত যাকে একসাথে করলে পাওয়া যাবে একটি নতুন সকাল। লিয়ার লেভিনরা ক্যামেরা জুম ইন-আউট করে সেই মুক্তির গানের সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছেন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।

একটি সপ্নাতুর জাতির অস্তিত্বের লড়াইয়ে আমরা পেয়েছি মানচিত্র,আমার পতাকা।ছেলেবেলা থেকে পতাকা পেলেই আমি তা জড়িয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিতাম। কেমন যেন দোলনচাঁপার মিষ্টি একটা ঘ্রাণ।বাবা বলেছিল- "দোলনচাঁপার গন্ধ বুকে নিয়ে পাঠ করলে দেখা যায়, সে নামটি ‘বঙ্গবন্ধু’ "

আমরা আসলেই অভাগা। সূর্যসন্তানদের আমরা আগলে রাখতে পারিনি, বেয়োনেটের আঘাতে জর্জরিত ছেলের মায়ের সাথে শেষ দেখায় গরম ভাত খেতে চাওয়ার আকুতি পূরণ করতে পারিনি। পারিনি সেই মাকে দু'মুঠো ভাতের খোঁজে ভিক্ষার থালা হাতে পথে নামা থেকে আটকাতে। এত লজ্জা, এত গ্লানি নিয়ে আমরাই কিনা বিজয় উৎসবে, স্বাধীনতা উৎসবে মাতি প্রতিবছর।

সত্যি সেলুকাস, বড্ড বিচিত্র এই জাতি, এই প্রজন্ম, আরো ক্ষুদ্র অর্থে বললে, "আমি"।

নিয়ম করে প্রতিবছর পাড়ার মোড়ে রিমিক্স কিছু গান বাজে সকাল-সন্ধ্যা স্বাধীনতা দিবসের আগমনী জানাতে, ফ্যাশনে লাল-সবুজ, কিংবা আমার মত ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে নিজের অভিমত। স্বাধীনতা কী, কেন পেলাম, না পেলেই বা কী এমন হত? খুব জানতে ইচ্ছে করে, উত্তর দেবার মত কেউ কী আছে আদৌ?

হাজার প্রশ্নের ক্যানভাসে রংচ্ছটায় সাজিয়েছি উত্তরগুলো আমার মত করে।

"স্বাধীনতা"- বাংলা একাডেমির অভিধানে পাওয়া কেবল শব্দ না, আমার মায়ের স্নেহমাখা কোমল হাত, স্বাধীন বাংলা বেতারের উদ্দাম কন্ঠ, অথবা দেশের তরে সব হারানো বাবার জ্বলজ্বলে চোখের চাহনি।

ছেলেবেলায় স্কুলের এসেম্বলিতে তাই কোরাসে কখনো "আমার সোনার বাংলা" গাইতে পারিনি। অজানা এক কষ্টে আমি কাঁদতাম, তখন বুঝিনি যে, আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ কোনো ঘটনা নয়, এটা আমার অস্তিত্ব। আমার সম্পদ যা আমি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির রক্তের সিড়িতে দাঁড়িয়ে কেবল ভোগ করেই যাচ্ছি।

এ ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয়নি, কিন্তু বিবেক, মূল্যবোধকে বিসর্জন করাও তো শেখায়নি। দিবসের বেড়াজালে আটকে থাকা সকল শ্রদ্ধা, দায়বদ্ধতা মুক্তি পাক।

সূর্য ডুবছে
বছর পেরোচ্ছে.. আমার দেবার যে সময় এসেছে।
সেদিনের অপেক্ষায়, যেদিন সত্যিই বুকে হাত রেখে দীপ্ত কন্ঠে বলতে পারবো-

"আমার সোনার বাঙলা
আমি তোমায় ভালোবাসি"

জান্নাতুল ফেরদৌস রিমু, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • শিল্প-সাহিত্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh