• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ডাকসু এখন শুধুই ক্যান্টিন!

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:১০

বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বই’র স্বৈরাচার পতন-অধিকার আদায়ের সব গণআন্দোলনেই এদেশের মানুষকে পথ দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু'র নেতারা। কিন্তু ডাকসু গঠিত যে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য, তারাই আজ ভুলতে বসেছে এ সংগঠনকে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ডাকসু এখন কেবলই একটি ক্যান্টিন!

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদেরই সংগঠন হলেও এটি কী, এর কর্মপরিধিই বা কী-সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা। অনেকে আবার ডাকসু শব্দটার সঙ্গেই পরিচিত নন। শিক্ষকরা সংগঠনটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কিছু জানান না। ২৭ বছর ধরে নির্বাচন না হওয়াই এ দশার কারণ বলছেন তারা।

পারফরম্যান্স স্টাডিজের শিক্ষার্থী রাগীব নাঈম বলছেন, ‘ডাকসু একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নাম ছিল। এখন এর পরিচয় শুধুই ক্যান্টিন। অধিকার আদায়ে ডাকসুর ভূমিকা এখন কেবলই ইতিহাস। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে জানেন না। অথচ এটা শিক্ষার্থীদেরই সংগঠন।

ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব মোহাম্মদ আশিক বলছেন ‘শিক্ষার্থীদের দাবি ডাকসু নির্বাচন। কিন্তু প্রশাসন বরাবরই এটা আড়ালে রাখতে চাইছে। শিক্ষকরাও এ নিয়ে আলোচনা করেন না। ফলে ডাকসু'র কার্যক্রম এখন কেবল সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ।'

১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু ও ১৮টি আবাসিক হল সংসদের সবশেষ নির্বাচন হয়। এরপর থেকেই ডাকসু বন্ধ, অবরুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক বিকাশ। ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেটে আইন ‘পাস’ হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর টাকা নেয়া হলেও এর কোন হদিস মেলে না।

ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু কর্তৃত্ব হ্রাস পাবার শঙ্কায় প্রশাসন ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই নির্বাচন দিচ্ছে না। ডাকসুকে ক্যান্টিন বানিয়ে রেখেছে। কারণ, ডাকসু সবসময়ই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের প্রতিবাদ করে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান বলছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। আমরাও চাই ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে সিনেটে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকুক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে দাবি জানানো হবে। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গেও আমরা এ নিয়ে আলাপ করবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি তুহিন কান্তি দাস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জানা নেই-ডাকসু কী। এটা প্রশাসনের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রেরই ফল। মুখে যে যা-ই বলুক, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনও চায় না, নির্বাচন হোক। কারণ, ডাকসুর ইতিহাস বলে সরকারবিরোধীরাই ডাকসুতে বিজয়ী হয়েছেন বারবার। এজন্যই নির্বাচন হচ্ছে না।'

অভিযোগ করলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও। তিনি বলছেন, ‘দেশে বিরাজনীতিকরণের একটি ধাপ হচ্ছে এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য রাখা জরুরি। সরকার সে কাজটিই করছেন সুকৌশলে।'

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং পদাধিকার বলে ডাকসু সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলছেন ভিন্ন কথা। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বললেন, 'ডাকসু শুধুই ক্যান্টিন-এমনটা সত্য না। নির্বাচন না হলেও এখানে বড় সংগ্রহশালা আছে। উপরের রুমগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়মিতই মিটিং করে। আলোচনা হয়। এটা নির্বাচিত সংসদ থাকাকালীনও হতো।'

নির্বাচন দিচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের কোন সংগঠনের নেতৃত্বেই নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই। অ-ছাত্ররা যদি সংগঠনের নেতৃ্ত্বে থাকেন, তাহলে নানান সংকট সৃষ্টির শঙ্কা থাকে। দু’শ্রেণিকে তো এক কাতারে ফেলা যায় না। এজন্য আগে চাই, নিয়মিত ছাত্রদের হাতে সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব। তবেই নির্বাচন সম্ভব। নয়তো নতুন সংকট তৈরি হবে।'

এসজে/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh