• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আমাদের বজরঙ্গি ভাইজান

মোঃ কামাল হোসেন

  ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:২১

বজরঙ্গি ভাইজান সিনেমায় সালমান খান যা করেছিলেন, বাস্তবে তাই করলেন বাংলাদেশের সোহেল রহমান। প্রায় দেড় বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ফাহিনুর নামের একটি মেয়েকে ফিরিয়ে দিলেন বাবা-মা’র কোলে।

শনিবার চট্টগ্রামের অলঙ্কার মোড়ে বাবা-মার কাছে ফাহিনুরকে পৌঁছে দেন ব্রিজ এশিয়া লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোহেল ও তার পরিবার। ফাহিনুরের গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার ঘোষেরহাট। বাবার নাম হানিফ মার নাম জরিনা। সোহেলের বাড়িতে ফাহিনুরকে টুম্পা নামে ডাকা হতো।

ফাহিনুরের বাবা-মাকে খুঁজে পেতে সোহেল রহমান গেলো বছরের ২৯ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য পোস্টটি দেয়া হলো:

‘আমাদের বাসা আর আমার বউয়ের বোনের বাসার কাজের লোকেরা মাঝে মাঝেই এই দুই বাসা এক্সেঞ্জ করে। ধরেন কাজ করতে করতে ওরা বের হয়ে গেলে আমাদের টা ওদের বাসায় বেড়াতে যায় ,আর ওদেরটা আমাদের বাসায় আসে। তবে কিছুদিন আগে ওদের বাসা থেকে মেয়েটা আমাদের এখানে এসে আর যেতে চাচ্ছিল না। ওর বয়স ১০/১১ এর মত হবে। মানে আমার মেয়ে আবৃতির সমান। আমি বললাম থাকুক। তারপর থেকে মেয়েটা এখানেই আছে। স্বাভাবিকভাবেই ওকে আমি ওর দেশের বাড়ি, বাবা মা সবকিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। মেয়েটা খুবই লাজুক স্বভাবের। কিছু জিজ্ঞেস করলে কোন কথা বলে না। শুধু মাথা নিচু করে থাকে। পরে আমার বউ যা বলল আমার শুনে খুব কষ্ট লাগল।

ওকে নাকি পাওয়া গিয়েছিল উত্তরায় একটা চায়ের দোকানের পাশে ক্রন্দনরত অবস্থায়। মুন্নি আপা (বউ এর বড় বোন) ওকে ওই অবস্থায় পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল কোথায় বাড়ি, কেন কান্না করছে এইসব। সে কোন উত্তর না দেয়ায় বাসায় নিয়ে গিয়েছিল এই ভেবে যে কোন দুষ্টু লোকের পাল্লায় যেন আবার না পড়ে। শেষে সে শুধু এইটুকু বলেছিল যে সে এক বাসায় কাজ করে, সেখানে তাকে নাকি শুধু মারে। সেদিন নাকি অনেক মেরেছিল সে জন্য সে পালিয়েছিল। পরে মেয়েটা সে বাসার ঠিকানাও বলতে পারেনি। এ ঘটনা আরও কয়েক বছর আগের। আজকাল মেয়েটা কিছু কিছু কথা মনে করতে পারছে বলে আমার মেয়ে আবৃতি আমাকে জানালো। প্রথমে বলল ওকে নাকি ওর বাবা রেখে গেছিল। ওরা নাকি লঞ্চে এসেছিল, ব্যস, ওইটুকুই।

গতকাল বলছে আরও কিছু। যেমন ওর বাবা মায়ের নাম, এক চাচার নাম, গ্রামের নাম ইত্যাদি। শুধু গ্রামের নাম দিয়ে আমাদের দেশে এরিয়া খুঁজে বের করা অতটা সোজা না এখনও। কিন্তু আমার মনে হল ওকে ওর বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়াটা খুবই জরুরি। এই মুহূর্তে এর চেয়ে আর কোন মহৎ কাজ আমার জন্য আর হতেই পারেনা। যেহেতু গ্রামের নাম বলেছে ঘোষেরহাট, আমি লঞ্চে যাওয়া যায় এমন এলাকাগুলো খোঁজা শুরু করলাম। পরে বের করলাম এটা নাকি ভোলায়।

পরে কাকতালীয়ভাবে আমার সাথে ভোলার একজন ভদ্রলোকের (Asad Zaman) পরিচয় হয়। উনি একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীতে চাকুরি করেন। ওনার বাড়ি ভোলা শুনে ওনাকেই খুলে বললাম সব। উনি আমাকে কথা দিলেন মেয়েটা যদি আসলেই সেখানকার হয় তবে তিনি আমাকে সাহায্য করবেন যেন মেয়েটাকে তার বাবা মার কাছে পৌঁছে দেয়া যায় এবং তার সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ করছি তারপরও, যদি এই পোস্ট ভোলার ওই এলাকার কোন মানুষ পান, দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করবেন। আপনার কাজ হচ্ছে আমি নিচে মেয়েটার নাম, গ্রামের নাম সহ আমার কাছে যা আছে আমি লিখছি, আপনি এগুলো মিলিয়ে দেখবেন, যদি সব ঠিক থাকে তবে আমরা নিজে গিয়ে মেয়েটাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসব।

মেয়েটার নাম : ফাইনুর

বাবার নাম :হানিফ (জেলে)

মায়ের নাম : জরিনা বেগম

মামার নাম :খালেক মেকার

গ্রাম : ঘোষের হাট

জেলা : ভোলা

কাজের মেয়ের এই কঠিন বাজারে এই কাজটা আমার জন্য কঠিন । তবু বিবেকের তাড়নায় হারানো মেয়েকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার যে আনন্দ, সে লোভ ছাড়তে পারলাম না। আমাকে কেউ একজন কাজের লোকের সন্ধান দিয়ে সাহায্যও করতে পারেন। কারণ আমার মনে হয় না মেয়েটা আর ফিরে আসবে।

আপনার একটা শেয়ার আশা করছি । কারণ কে জানে ভোলার ঘোষেরহাটের নিশ্চয়ই কেউ না কেউ দেখবে!!!!’

সোহেলের পোস্ট দেখে মহাসিন উদ্দিন আহমেদ নামের একজন তাকে জানান, মহাসিনের কাজিন চরফ্যাশন থানার ওসি এবং ঘোষেরহাট এই থানার একটি জায়গা। তিনি জানান তার কাজিন স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন সব ঠিক আছে। তারা মেয়ে হারিয়ে যাওয়া পরিবারটি খুঁজে পেয়েছেন। এখন আমি তাদের ছবির জন্য অপেক্ষা করছি। যাতে মেয়েটি তার পরিবারকে শনাক্ত করতে পারে।

এভাবে সোহেল ফাহিনুরের মামা খালেকের ছবি পেয়ে যান।

আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন লিমিটেডের নির্বাহী আসাদ জামান ১০ জানুয়ারি সোহেলের পোস্টে ফাহিনুরের বাবা-মার ছবি দিয়ে কমেন্ট করেন। এসময় তিনি ফাহিনুরের মার ফোন নম্বর দিয়ে জানান, মেয়ের সঙ্গে মা কথা বলতে চান।

সোহেল ছবিগুলো দেখালে ফাহিনুর ছবির মানুষগুলোকে শনাক্ত করতে পারে। তিনি জানতে পারেন ফাহিনুরের বাবা-মা এখন চট্টগ্রামের অলঙ্কার মোড়ে থাকেন।

শুক্রবার তিনি ফাহিনুরকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এতোদিন পরে বাবা-মার সঙ্গে ফাহিনুরের মিলিত হবার মাহেন্দ্রক্ষণটি তিনি ফেসবুকে লাইভ করেন।

সোহেল রহমান আরটিভি অনলাইনকে জানান, টুম্পাকে তার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করাতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। ব্যাপার হলো দেখা শেষ হবার পর মেয়েটা ওখানে আর থাকতে চাচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে আসতে প্রস্তুত। পরে আমরা বুঝিয়ে বললাম তাদের সঙ্গে কিছুদিন থাকার জন্য। পরে ঠিক হলো কিছু দিন ওখানে থেকে ফের আমাদের এখানে আসবে। আমি তার সব দায়িত্বই নেবো। তাকে স্কুলে ভর্তি করাবো।

তিনি আরো জানান, আজকাল সবকিছুই সহজ। কেউ যদি ভালো কাজ করে ছড়িয়ে দিতে চায় সেটা যেমন খুব সহজ, তেমনি কেউ যদি খারাপ কিছু করে ছড়িয়ে দিতে চায় সেটাও সহজ। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আরো অনেক কিছু করতে চান। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতাও চান।

কে/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh