• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যে কারণে জাহাঙ্গীরনগরে সাইবেরিয়ান অতিথিরা

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ০৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৪৪

রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শীত এলেই বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়ার অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে অবস্থান নেয় জাহাঙ্গীরনগরের লেক, জলাশয়, বন, জঙ্গলে। এসময় ক্যাম্পাসে পাখি দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরাও। শীতপ্রধান দেশের এই পাখিরা প্রতিবছর হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে কেন? জাহাঙ্গীরনগরই বা তাদের পছন্দের জায়গা কেন?

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতপ্রধান দেশে এই পাখিদের বসবাস হলেও তীব্র শীতে টিকে থাকতে না পেরে পাড়ি জমায় বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশে আসে।

পাখি গবেষক অধ্যাপক কামরুল হাসান বললেন, বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অন্যতম। এ দেশে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, নভেম্বর-জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এ তিনটি পর্যায়ে অতিথি পাখিরা আসে। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা বাংলাদেশে আসে। আবার মার্চের শেষদিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

তিনি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শীতের পাখি নিয়ে কাজ শুরু করে ১৯৮৬ সাল থেকে। ক্যাম্পাসের মধ্যে ছোট-বড় ১৭টি লেক রয়েছে। পাখিদের বসবাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুটি লেককে অভয়াশ্রম করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিথি পাখি বরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রধান দুটি লেকে অতিথি পাখি বসে যেগুলোতে মাছ চাষ নিষিদ্ধ করে। অনেকটা অনুকূল পরিবেশ হওয়ায় অতিথি পাখিরা জাহাঙ্গীরনগরে ভিড় করে।

জাহাঙ্গীরনগরে ঠিক কী ধরণের পাখি আসে, সেসব নিয়ে আলাপ হলো বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজের সঙ্গে। তিনি বলছেন, 'এখানকার জলাশয়ে ১৮৯ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৬০-৬৫ পরিযায়ী সারা বছর আসে। এদের মধ্যে দেশীয় অনেক প্রজাতির পাখি আছে। যেমন: জলপিপি, হটটিটি। এরা খোলা জায়গায় বাসা করে। গেলো কয়েক বছরে প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে মাছ চাষ কমানোর পর পাখিদের সংখ্যা আরো বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ''শীতকালে পাখি আসা শুরু হলেও এ বছর একটু পরে ডিসেম্বরের দিকে থেকে আসা শুরু করেছে। সেগুলো আবার ফেব্রুয়ারি-মার্চে চলে যাবে। সাইবেরিয়া ছাড়াও হিমালয়, কাশ্মীর থেকেও পাখি আসে বলে জানান এই পাখি গবেষক।

জানালেন পাখিদের বৈচিত্র্যপূর্ণ নামও-'সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারী অন্যতম। এ ছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি পাখি এ দেশে অতিথি হয়ে আসে প্রতিবছর।'

এসজে/এএইচ/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh