• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভার্সিটির পুলা-মাইয়ারা পাপড় খায় না, পুচকা খায়!

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:০২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মল চত্বরে বেশ জনসমাগম। চলছে বিজয়ের গান। তার একপাশেই বাড়িতে বানানো পাপড়ের ঝাঁকা নিয়ে বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব মুজাহিদ। এসেছেন মাদারীপুর থেকে। কেমন বেঁচা বিক্রি জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘ব্যবসা নাই। প্রতিদিন অন্যখানে বেচি। আইজ ভাবলাম এখানডায় আসি, বিজয়ের দিন ব্যবসা ভালো হইবো। সকাল থাইক্যা মাত্র একশ টাকার পাপড় বেচছি। অন্যদিনকা তিন-চারশ’ টাকা হইয়া যায়। ভার্সিটির পুলা-মাইয়ারা পাপড় খাইতে চায় না, সবাই পুচকা (ফুচকা) খায়।’

কিছুক্ষণের আলাপে ভাব জমে যায়। দু’ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। দু’মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দু’টাও পাপড় বিক্রি করেন। মাদারীপুর থেকে প্রতিদিন পাপড় বানিয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। মূলত মিডফোর্ড বাবুবাজারের দিকেই পাপড় বিক্রি করেন মুজাহিদ। গত ১০ বছর ধরে এ ব্যবসাই করে আসছেন তিনি। তবে এখন আগের মতো বেচাবিক্রি নেই। একদিকে আর্থিক অনটন অন্যদিকে বার্ধক্য দু’টোই তার জন্য পীড়ার হলেও সংসার চালাতে প্রতিদিনই পাপড় নিয়ে রাস্তায় আসেন।

মুজাহিদ বললেন, ‘ট্যাহা নাই, খামু কী? ঘরে নাতিসহ মাইয়া থাহে। উপোষ থাকতে থাকতে আর বালো লাগে না। কেউ সাহায্যও করে না।’ বিজয় দিবস কেমন কাটাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমরা তো পাকিস্তান দেখসি, বাংলাদেশও দেখতাসি। দ্যাশ তো স্বাধীন হইসে, রাস্তাঘাট বদলাইসে, বাড়িঘর বদলাইসে। কিছু বড় বড় লোক আরো বড় লোক অইসে। কিন্তু আমাগো কিসু বদলায় নাই। আমরা আগেও গরীব আছিলাম, এখনও গরীব। আমাগো আবার বিজয় দিবস কী?’

কথা বলতে বলতেই হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মুজাহিদ। ‘বুঝলেন ভাই, জীবনে খুব কষ্ট। সারাজীবন বহুত কষ্ট করছি। আর বালো লাগে না। তবু পেট চালাইতে গেলে এইসবই করতে হইবো।’ হঠাৎ করেই বললেন, ‘আরেক দিন কথা হইবো মামা, এখন শাহবাগের দিকে যাই। ওখানেও গান হইতাসে। দেহি বেচাবিক্রি বাড়ে কি না। বালো থাহেন।’

কথা বলতে বলতেই মাথায় তুলে ফেললেন পাপড়ের বড় ঝাঁকাটি। হেঁটেই এগোলেন শাহবাগের দিকে।

এসজে/ এস

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh