• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সব সমাধান মোবাইল অ্যাপে

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ২০:৫৯

একটা সময় ছিলো যখন মোবাইল ফোন সবাই ব্যবহার করতো কথা বলার জন্য। অবশ্য তখন মোবাইল ফোন সেটের ব্যবহার এর বাইরে ছিলো না। এর সফটওয়্যার কিছু নির্ধারিত কাজের জন্য তৈরি। দিন দিন আপডেট হতে থাকে মোবাইল ফোন সেট। বাড়ে তার কর্ম পরিধি। মোবাইল ফোন সেটের আপডেট ভার্সন এখন স্মার্টফোন হিসেবে পরিচিত। দিন যত যাচ্ছে ততই এটি সহজ লভ্য হচ্ছে। আর এ ফোন দিয়ে শুধু কথা বলাই নয়, বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। একইসঙ্গে এটি দিয়ে সেরে নিচ্ছি অনেক দরকারি কাজও।

স্মার্টফোনের সঙ্গে ব্যবহার বাড়ছে মোবাইল অ্যাপ’র। কী এই মোবাইল অ্যাপ? কেন আমরা ঝুঁকছি অ্যাপ ব্যবহারের দিকে?

বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হলো ডেস্কটপ পিসি দিয়ে। টেবিলে একটি টেলিভিশনের মতো মনিটর, সঙ্গে একটি বাক্স যেটির নাম সিপিইউ, কি-বোর্ড, মাউস, স্পিকার- এসব নিয়েই ডেস্কটপ কম্পিউটার। এরপর এলো ল্যাপটপ কম্পিউটার। আমাদের পরিচিত কম্পিউটার আকারে হয়ে গেলো ছোট, দরকারে এটি কাঁধের ব্যাগে নিয়ে চলাফেরাও করা যায় সব জায়গায়। ইন্টারনেট এরইমধ্যে অনেকটা সজহলভ্য হতে শুরু করেছে। প্রযুক্তির প্রসারে বাংলাদেশও হচ্ছে ডিজিটাল।

ল্যাপটপের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বদলেছে মোবাইলের ধরণ, পরিচিত কথা বলার কিপ্যাডওয়ালা মোবাইল পাল্টে গেলো টাচস্ক্রিনওয়ালা স্মার্টফোনে। আর এখন যতোই বাড়ছে স্মার্টফোনের ব্যবহার, ততোই দ্রুত ডিজিটালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও।

ডেস্কটপ-ল্যাপটপে যে সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামগুলো আমরা ব্যবহার করি, সেগুলো চালাতে দরকার হয় ভালো মানের বা গতিসম্পন্ন কম্পিউটার। স্মার্টফোনের ব্যবহার যখন বাড়লো তখন কম্পিউটারের সেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করার চাহিদা মানুষ অনুভব করলো হাতের ছোট স্মার্টফোনে। আর এ চাহিদা থেকেই মোবাইলে ব্যবহার করা শুরু হলো অনেক রকম অ্যাপ। অ্যাপ’র পুরো মানে হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন, এটিও এক ধরনের সফটওয়্যার।

অ্যাপ চালানোর জন্য খুব ভালো মানের কম্পিউটার দরকার হয় না, সাধারণ মানের একটি স্মার্টফোনই যথেষ্ট। অ্যাপ এমন একটা সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন, যেটা মানুষ চলতে ফিরতে কিংবা বাসা-অফিসে বসে যে কোনো সময় ব্যবহার করতে পারে। বাসায় কিংবা অফিসে বসে যে কাজটা করতে হতো, এমন অনেক কাজই মানুষ এখন অ্যাপে সেরে নিচ্ছে যে কোনো জায়গায়।

স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট এ দু’টি যখন মানুষের পকেটে সহজলভ্য হলো তখন থেকেই বেড়েছে মোবাইল ফোনে অ্যাপের চাহিদা। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অনলাইন অ্যাপ, আর না থাকলে অফলাইন অ্যাপ- থেমে নেই অ্যাপ’র ব্যবহার।

সময় কাটাতে গেম খেলতে চান, আছে গেম খেলার অ্যাপ। দেশে-বিদেশে অনলাইন পত্রিকাগুলোর আপডেট পেতে চাইলে স্মার্টফোনে ইনস্টল করে নিতে পারেন সেসব পত্রিকার অ্যাপ। তখন অ্যাপই আপনাকে জানিয়ে দেতে সবশেষ আপডেট সংবাদ।

দেশে-বিদেশে কারো সঙ্গে কথা বলবেন, আছে স্কাইপি, ভাইবার, হোয়াটস আপ, ইমো, ট্যাঙ্গো। এ অ্যাপগুলো দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেই কথা বলা যায়, লাগে না কোনো অপারেটরের মোবাইল নম্বর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন মা পাশের বাড়ির কারো স্মার্টফোন দিয়ে বিদেশে থাকা ছেলের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারছেন এসব অ্যাপ দিয়ে। ফোন নম্বরে কথা বলতে খরচ হতো বেশি কথা হতো কম। আর এখন মা-ছেলে নিজেদের মোবাইল স্ক্রিণে নিজেদের দেখে কথা বলতে পারছে খুবই কম খরচে।

বর্তমানে জনপ্রিয় একটি জিনিস হচ্ছে সেলফি। স্মার্টফোনে সেলফি তোলার পর দরকার হয় সেটি এডিট করে একটু সুন্দর কিংবা রংবদল করার। সেজন্য সেলফির সঙ্গে বেড়েছে ছবি এডিট করার অ্যাপ’র চাহিদা।

ইন্টারনেটে বহুল ব্যবহৃত তথ্যকোষ উইকিপিডিয়া। এটির অ্যাপ সংস্করণ মোবাইল ফোনে ইনস্টল করে নিলে ইন্টারনেটে না থাকলেও দরকারে জানা যাবে অনেক তথ্য। অনুবাদের জন্য অনেকেই ইন্টারনেটে ব্যবহার করেন গুগল ট্রান্সলেটর। এটিরও অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে কাজ করা যাবে ইন্টারনেট না থাকলেও।

বিরক্তিকর কল ব্লক করতে, ভাইরাস থেকে মোবাইল নিরাপদ রাখতে, মোবাইলের দরকারি নম্বর-মেসেজ ব্যাকআপ রাখতে, বাংলা লিখতে আমরা ব্যবহার করছি বিভিন্ন অ্যাপ।

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলেয়ে বেড়েছে বাংলাদেশেও প্রযুক্তির ব্যবহার। উন্নত দেশ গড়তে সরকার জোর দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তিতে। সারাদেশকে এর আওতায় আনা হচ্ছে।

জনগণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে গেলো অক্টোবরে ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইন’অ্যাপ উদ্বোধন করে বাংলাদেশ পুলিশ। এ অ্যাপ ব্যবহার করে পুলিশের কাছে যে কেউ অপরাধ এবং অপরাধী সংক্রান্ত তথ্য জানাতে পারবেন, যে কোনো থানার ওসির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করতে পারবেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও ফাইল আদান-প্রদানের জন্য গেলো সেপ্টেম্বরে চালু করা হয় মেসেজিং অ্যাপ ‘আলাপন’। এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিছুটা ভাইবারের মতো এই অ্যাপের মাধ্যমে সরকারের কোনো কর্মকর্তা যে কোনো জায়গা থেকে চ্যাটিং, ভয়েস ও ভিডিও কল, গ্রুপ কনফারেন্স ছাড়াও নথি আদান-প্রদান করতে পারবেন। অ্যাপের অ্যাডভান্সড সার্চ অপশনে গিয়ে যে কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতাধীন যে কোনো কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও সংগ্রহ করা যাবে। আলাপন অ্যাপ ব্যবহারে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া অন্য কোনো খরচ হবে না।

সম্প্রতি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট। ভারতের সাধারণ মানুষ নোট নিয়ে কী ভাবছেন, সেটা জানতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাহায্য নিয়েছেন নিজের মোবাইল অ্যাপের। ‘নরেন্দ্র মোদি’অ্যাপ চালু করা হয়েছিলো গেলো বছর, সেখানেই এ জরিপে ১০টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে।

আমরা যে স্মার্টফোনগুলো ব্যবহার করছি, সেখানে ৩ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। আইফোনের জন্য আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ওএস এবং উইন্ডোজ ফোনের জন্য উইন্ডোজ ওএস। আর ৩ ধরনের ফোনের ব্যবহারকারীদের জন্যই রয়েছে আলাদা আলাদা অ্যাপ। আইওএস ব্যবহারকারীরা অ্যাপল আইটিউনস, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর এবং উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা উইন্ডোজ স্টোর থেকে নিজেদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

যতোই সময় এগোচ্ছে, বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। আর প্রযুক্তির নানামুখি ব্যবহারে আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে এসব মোবাইল অ্যাপ। সেজন্যই সাধারণ মানুষ থেকে প্রধানমন্ত্রী- সবার কাছেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল অ্যাপ।

এম / জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh