ইবি’র শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস

আবারো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস হয়েছে। চাকরি প্রার্থী প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য ২০ লাখ টাকা লেনদেনের কথা ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা গেছে।

শিক্ষক ও প্রার্থীর কথোপকথনের ফাঁস হওয়া ওই অডিও থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী ৩ শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে।

সূত্র মতে, গেলো শুক্রবার (১৩ জুলাই) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। এই বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কুষ্টিয়ার এক স্থানীয় প্রার্থী ২০ লাখ টাকা উৎকোচ দেন। এ লেনদেনে প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদত হোসেন আজাদ।

চাকরি প্রার্থী ও তার স্বামীর ফোন রেকর্ডের এসব তথ্য পুরো ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ওই প্রার্থী নিয়োগ না পেলেও তাদের কথোপকথনে বিভিন্নভাবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের প্রমাণ মিলেছে। এতে জানা যায়, প্রার্থী থেকে জুনিয়র ওই শিক্ষক টাকা নেন।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : কোটা নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ইবি শিক্ষার্থীকে পিটুনি
--------------------------------------------------------

ফাঁস হওয়া রেকর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে দেয়া হলো-

ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল ও প্রার্থী ফারজানা আক্তারের ১ম রেকর্ড:

ফারজানা: আসসালামু আলাইকুম স্যার।

ড. বাকী বিল্লাহ: হ্যাঁ, দেখ বাবু আমি..।

ফারজানা: স্যার আমি তো আপনাদের কথা শুনে একদম ডিপেন্ডেবল। কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার যখন বলল, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম বিশ লাখ টাকাও হাতে ধরিয়ে দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার কেন এমনটা করল? জাহাঙ্গীর হোসেন (ইতিহাসের সভাপতি) স্যার।

ড. বাকী বিল্লাহ: আরে বাবু, না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সঙ্গে কেবলই উঠে এলাম। এখন এই জিনিসটা মামুন ভাই (ফারজানার স্বামী) বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি তাকে জানাচ্ছিলাম না। কালকে সিন্ডিকেটের পরে জানাবো। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরও বিব্রত হলাম দেখছি।

ফারজানা: জী স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি (৮০) পার্সেন্ট হয়ে গেছে। অসুবিধা নেই। এর জন্য আপনি যখন যে শর্ত দিয়েছেন, টাকা দেয়া বলেন, জাহাঙ্গীর স্যারের কথা অনুযায়ী। কোনো সত্যতা যাচাইও করতে যাইনি। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।

৩য় রেকর্ডে ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল এবং মামুনের টাকা ফেরত নেবার স্থান নির্ধারণ হয়। এতে রাতের বেলা না নিয়ে সকালে টাকা ফেরত নেবার কথা বলেন মামুন। পরে ড. বিকুল তাকে রাতেই কুষ্টিয়া থেকে নিরাপদে বাসায় পৌঁছে দেবার নিশ্চয়তা দিয়ে ডেকে নেন।

৪র্থ রেকর্ডে প্রফেসর ড. আজাদ এবং ফারজানার ফোনালাপ:

ফারজানা: আপনি কি আজাদ স্যার বলছিলেন? আমি ফারজানা বলছিলাম, ক্যান্ডিডেট।

আজাদ স্যার: জী, জী বলো।

ফারজানা: কালকে আপনারা এত কিছু করলেন, আমাকে আশ্বস্ত করলেন, আম্মু তোমার চাকরি হয়ে গছে। তুমি টেনশন করো না।

আজাদ স্যার: শোন শোন, সেভাবেই কথাবার্তা ছিল। কিন্তু জাহাঙ্গীর স্যার বললেন অন্যান্য বোর্ডে ভিসি এভাবে রোল প্লে করে না, জোড় করে নেয় না। কিন্তু কালকে ভিসি রংপুরের একটা প্রার্থী নিয়েছে এবং সালেহ স্যারের যে ভাগ্নি, যেটা নেয়ার কথা ছিল না, যেটার বিষয়ে অনেক কম্পেলেন। রাবির জামায়াতের আমির সালেহ স্যারের শ্বশুর। ওই মেয়েকে প্রক্টর ঢুকিয়েছে।

ফারজানা: কিন্তু স্যার, আমি আপনাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে টাকা পয়সা সব পে করলাম, কথা সব ঠিক চলছিল, স্যার আমিতো টাকা পয়সা দিয়েছি ফেরত নেয়ার জন্য নয়, চাকরি নেয়ার জন্য দিয়েছি। আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে টাকাটা দিয়েছি। আপনারা চেয়ারম্যানের উপর চাপ প্রয়োগ করে এটা করবেন। কারণ চেয়ারম্যান (ড. জাহাঙ্গীর) স্যার নিজে আমাকে হ্যান্ডেল করেছে। চেয়ারম্যানের নিজের ক্যান্ডিডেট ছিলাম আমি। সে আপনাদের কথা আমাকে বলেছে, না হলে কি আমি আপনাদের পর্যন্ত পৌছাতে পরতাম? আমি সব ডিল করলাম, আমি সব কিছু করলাম।

ফাঁস হওয়া রেকর্ড নিয়ে ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমি উপকার করতে গিয়ে শত্রু হয়ে গেলাম। এখানে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণই দুরভিসন্ধি মূলক।’

এ ব্যাপারে ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি জানি না। বিকুল আমার কাছে এক প্রার্থী নিয়ে আসছিল। আমি বিষয়টি দেখবো বলেছিলাম।’

ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমি এর যথাযথ মূলোৎপাটন করবো। দুর্নীতিবাজ কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’

এসএস