• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

স্বর্ণার মৃত্যু ব্লু হোয়েলে নাকি অন্য কিছু

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:১০

কয়েকদিন আগেও গুগল সার্চে ব্লু হোয়েল ব্যবহারে কলকাতা ছিলো বিশ্বে সবার উপরে। ভারতের বিভিন্ন শহরে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এবার সীমান্ত পেরিয়ে ঢাকায় হানা দিয়েছে এটি। গেলো বৃহস্পতিবার কিশোরী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা এতে ‘আসক্ত’ হয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন তার বাবা।

রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন স্বর্ণা। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধনের দাবি, ব্লু হোয়েলের প্রতি আসক্ত হয়েই আত্মহত্যা করেছে তার সন্তান।

তবে গতকাল (রোববার) ফেসবুকে কেয়া চৌধুরী জুই নামের এক নারীর স্ট্যাটাসে স্বর্ণাকে নিজের ভাতিজি দাবি করে বলেন, স্বর্ণার মৃত্যুর সঙ্গে ব্লু হোয়েলের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, আমি নিজের হাতে মেয়েটাকে শেষ স্নান করিয়েছি। ওর গায়ে সামান্য কোন কাঁটা-ছেঁড়ার দাগও ছিল না, ছিল না কোন ট্যাটু। ওর ফোন ঘেঁটেও পাইনি এমন কোন প্রমাণ যার জের ধরে বলা যায় ও ব্লু হোয়েল খেলতে শুরু করেছিল। যে কথাটা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে, সে কথাটা নিতান্তই অবান্তর। ভুলটা আসলে আমারই। আমিই সর্বপ্রথম এরকম অমূলক সন্দেহটা করি। কিন্তু সবকিছু দেখে-শুনে বুঝতে পারি যে, সন্দেহটা একদমই ভিত্তিহীন।

জুই বলেন, এই অবান্তর খবর এবং আতঙ্ক ছড়াবেন না প্লিজ। ওর আত্মহত্যার পেছনের কারণটা আর যাই হোক, ব্লু হোয়েল নয়।

দ্য ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ কী:

সময়সীমা ৫০ দিন। খেলার নির্দেশ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীকে ৫০টি ‘টাস্ক’ শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিজেকে আঘাত করাসহ নানারকম ভয়ানক সব সেগমেন্ট। শেষ টাস্কটি হচ্ছে আত্মহত্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় দেড়শো মানুষ এর শিকার হয়েছেন।

গেলো কয়েক বছর ধরেই অভিভাবকদের কাছে ‘মাথাব্যথার’ কারণ হয়ে উঠেছে অনলাইন গেম। অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, বাড়ছে দুর্ঘটনাও। এর সঙ্গে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা।

২০১৩ সালে রাশিয়ায় শুরু হয় ওই মরণ খেলা। প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে দু’বছর পরে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নীল তিমিরা মারা যাওয়ার আগে জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে। যেন আত্মহত্যার জন্যই। সেই থেকেই এই গেমের নাম হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল' বা নীল তিমি।

বিভিন্ন দেশে একাধিক দুর্ঘটনা এবং আত্মহত্যার ঘটনায় নাম জড়ায় ব্লু হোয়েলর। গত তিন মাসে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় মোট ১৬ জন তরুণীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। তদন্তে নেমে পুলিশের নজরে আসে এই ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’। শুরুর টাস্কগুলি অবশ্য তেমন ভয়ংকর নয়। বরং বেশ মজারই। আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা।

প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা। তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি।

চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভোররাতে একা ভূতের ছবি দেখা। আবার অতিরিক্ত মাদকসেবনেরে নিয়ম রয়েছে।

এই খেলায় প্রত্যেকেই মারা গিয়েছেন, এমনটা নয়। মারাত্মক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়ছেন অনেকে। গেমের লেভেল যত এগোয়, ততই ভয়ংকর হতে থাকে টাস্কগুলি। এই টাস্কগুলিতে অংশগ্রহণের পর সেই ছবি পোস্ট করতে হয় এর গেমিং পেজে।

প্রতিযোগিতার একেবারে শেষ পর্যায়ে, অর্থাৎ ৫০তম টাস্কের শর্তই হলো আত্মহত্যা। গেলো মাসে মুম্বাইয়ের পূর্ব আন্ধেরির শের-এ-পঞ্জাব এলাকার বহুতলের ছ'তলা থেকে এক কিশোরকে ঝাঁপ দিতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি।

মৃত কিশোরের মোবাইল আর কম্পিউটার ঘেঁটে ব্লু হোয়েলের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ১৪ বছর বয়সী মনপ্রীত সিং ক্লাস নাইনের ছাত্র। কেরলের তিরুবনন্তপুরম শহরের পেরুকুলামের বাসিন্দা মনোজ সি মনু ব্লু হোয়েলের খপ্পরে পড়ে আত্মহত্যা করার আগে নিকট আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে লিখেছিল, ‘আমি আত্মহত্যা করলে তোমরা কষ্ট পাবে?'

এর মতো বিপজ্জনক অনলাইন গেমসের লিংক সরানোর নির্দেশ দি‌য়েছে ভারত সরকার। গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে হবে গেমসটিকে।

ওয়াই/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh