• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আশুরা সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের কিছু অম্লান উক্তি

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৩৫

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত মনীষী, নেতা এবং নানা ধর্ম ও মতের অনুসারী খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হোসাইন (রা.) ও আশুরা বিপ্লব সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ মতামত ব্যক্ত করেছেন। এইসব বক্তব্য ও মন্তব্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু উক্তি বা মন্তব্য তুলে ধরা হল:

বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স:

যদি ইমাম হোসাইন পার্থিব কামনা বাসনার জন্য যুদ্ধ করতেন তাহলে তিনি তাঁর বোন, স্ত্রী ও শিশুদের সঙ্গে আনতেন না। তিনি শুধু ইসলামের জন্যই ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

ইংরেজ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল:

সৃষ্টিকর্তার প্রতি ইমাম হোসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের ঈমান ছিল মজবুত। তারা দেখিয়ে গেছেন যে, যেখানে সত্য ও মিথ্যা মুখোমুখি সেখানে সংখ্যার আধিক্য কোনো বিচার্য বিষয় নয়। ইমাম হোসাইন (রা.) মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন তা আমাকে বিস্মিত করেছে।

বিখ্যাত ইংরেজ প্রাচ্যবিদ অ্যাডওয়ার্ড ব্রাউন:

এমন কোনো অন্তর পাওয়া যাবে কি যে, যখন কারবালার ঘটনা সম্পর্কে শুনবে অথচ দুঃখিত ও বেদনাহত হবে না? এমনকি কোনো অমুসলিমও এই ইসলামি যুদ্ধকে ও তাঁর পতাকাতলে যে আত্মিক পবিত্রতা সাধিত হয়েছে তা অস্বীকার করতে পারে না।

ইংরেজ ঐতিহাসিক ও পার্লামেন্ট সদস্য এডওয়ার্ড গিবন:

সেই সুদূর অতীতের পরিবেশে ইমাম হোসাইনের মৃত্যুর করুণ দৃশ্য পাষাণতম পাঠকের হৃদয়েও জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি।

মার্কিন ঐতিহাসিক ওয়াশিংটন আরভিং:

ইমাম হোসাইন ইয়াজিদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু ইসলামের নেতৃত্ব ও আন্দোলনমুখি দায়িত্বভারের কারণেই ইয়াজিদকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। ইমাম বনি উমাইয়ার কবল থেকে ইসলামকে মুক্ত করার জন্য অচিরেই যে কোনো কষ্ট ও নিপীড়নকে বরণ করে নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। শুষ্ক মরু প্রান্তরের প্রখর সূর্য তাপের নীচে এবং আরবের উত্তপ্ত বালুরাশির মাঝে হোসাইনের আত্মা অবিনশ্বর হয়ে আছে।

ইংরেজ ঐতিহাসিক ফ্রেডরিক জেমস:

ইমাম হোসাইন ও অন্যান্য বীর শহীদদের শিক্ষা হল, দুনিয়ায় চিরন্তন করুণা ও মমতার মূলনীতি বিদ্যমান যা অপরিবর্তনীয়। অনুরূপভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, যখন কেউ এই গুণগুলোর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং এ পথে অবিচলতা দেখাতে সক্ষম হবে তখন এইসব মূলনীতি দুনিয়ায় চিরন্তন ও চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক টমাস মাসারিক:

আমাদের পাদ্রিরাও হজরত মাসিহর (ঈসা- আ.) শোক-গাঁথা বর্ণনার মাধ্যমে লোকদের প্রভাবিত করেন। কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.)’র অনুসারীদের মধ্যে যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায় তা হজরত মাসিহ’র অনুসারীদের মাঝে পাওয়া যাবে না। আর এর কারণ মনে হয় এটাই যে, ইমাম হোসাইন (রা.)’র শোকের বিপরীতে ঈসা (আ.)’র শোক যেন বিশালদেহী এক পর্বতের সামনে ক্ষুদ্র এক খড়কুটোর সমান।

বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও পর্যটক মরিস ডু কিবরি:

ইমাম হোসাইন (রা.)’র শোক মজলিসে বলা হয় যে, তিনি মানুষের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ইসলামের উচ্চ মহিমাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জান, মাল ও সন্তানদেরকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি ইয়াজিদের সাম্রাজ্যবাদ ও ছল-চাতুরীকে মেনে নেননি। তাই আসুন, আমরাও তাঁর এ পন্থাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি এবং সাম্রাজ্যবাদীদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হই। আর সম্মানের মৃত্যুকে অবমাননার জীবনের ওপর প্রাধান্য দেই।

জার্মান প্রাচ্যবিদ মরবিন :

ইমাম হোসাইন (রা.) প্রিয়তম স্বজনদেরকে উৎসর্গ করা এবং নিজ অসহায়ত্ব ও সত্য পন্থাকে প্রমাণিত করার মাধ্যমে দুনিয়াকে ত্যাগ ও আত্মোতসর্গের শিক্ষা দিয়েছেন এবং ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের নামকে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর বিশ্বে একে উচ্চকণ্ঠী করেছেন। ইসলামি জগতের এই সাহসী সেনা দুনিয়ার মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, অত্যাচার, অবিচার ও নিপীড়ন স্থায়ী নয়। আর অত্যাচারের ভিত বাহ্যিক দিক থেকে যত মজবুতই হোক না কেন, সত্যের বিপরীতে তা বাতাসে উড়ন্ত খড়কুটোর মত।

ইংরেজ প্রাচ্যবিদ স্যার পার্সি সয়েক্স:

সত্যিকার অর্থে এ মুষ্টিমেয় কয়েকজন যে সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা এমন উন্নতমানের ছিল যে, এ দীর্ঘ শতাব্দীকাল ধরে যারাই এ ব্যাপারে শুনেছে মনের অজান্তেই প্রশংসায় মুখ খুলেছে। হাতে গোনা এ কয়েকজন সাহসী পুরুষ কারবালার প্রতিরক্ষাকারীদের মত নিজেদের সমুন্নত নামকে চিরকালের জন্য অক্ষয় করে রেখেছেন।

খ্রিস্টান গবেষক অ্যান্টন বারা :

যদি হোসাইন ( রা.) আমাদের খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে হতেন তাহলে প্রত্যেক দেশেই তাঁর জন্য পতাকা উড়াতাম এবং প্রত্যেক গ্রামেই তাঁর জন্য মিম্বার স্থাপন করতাম। আর মানুষকে হোসাইন (রা.)’র নামে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাতাম।

খ্রিস্টান পণ্ডিত ও সাহিত্যিক জর্জ জুরদাক:

ইয়াজিদ যখন ইমাম হোসাইন (রা.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করত এবং রক্তপাত ঘটানোর নির্দেশ দিত তখন তারা বলত, কতো টাকা দেবেন? কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সঙ্গীরা তাঁকে বলতেন, আমরা আপনার সঙ্গে রয়েছি। আমাদেরকে যদি সত্তর বারও হত্যা করা হয় তবুও পুনরায় আপনার পক্ষে যুদ্ধ করতে ও নিহত হতে চাইব।

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রধান নেতা মহাত্মা গান্ধী:

আমি মনে করি ইসলাম তরবারির জোরে নয়, বরং ইমাম হোসাইন (রা.)'র চরম বা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলেই বিকশিত হয়েছে। ইমাম হোসাইনের মহৎ আত্মত্যাগের ব্যাপক প্রশংসা করছি এ কারণে যে তিনি মৃত্যু ও পিপাসার যাতনা সয়ে নিয়েছিলেন নিজের জন্য, নিজ সন্তানদের জন্য এবং নিজ পরিবারের জন্য, আর এই সবই সয়েছেন যাতে জালেম শাসকের কাছে নত হতে না হয়। মজলুম হওয়া অবস্থায় কিভাবে বিজয় অর্জন করতে হয় আমি তার শিক্ষা পেয়েছি ইমাম হোসাইনের কাছে। ভারত যদি একটি বিজয়ী রাষ্ট্র হতে চায় তাহলে তাকে ইমাম হোসাইনের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। ইমাম হোসাইনের ৭২ জন সেনার মত সেনা যদি আমার থাকতো তাহলে আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের স্বাধীনতা এনে দিতে পারতাম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:

ন্যায়বিচার ও সত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অস্ত্র ছাড়াই বিজয় আসতে পারে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে, ঠিক যেভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইমাম হোসাইন। ইমাম হোসাইন মানবতার নেতা। ইমাম হোসাইন শীতলতম হৃদয়কেও উষ্ণ করেন। হোসাইনের আত্মত্যাগ আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে তুলে ধরে।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh