মহররম ও আশুরার গুরুত্ব
মহররমকে আমরা অনেকে সঠিকভাবে পালন করি, আবার অনেকে সঠিকভাবে করি না। আবার কোথাও কোথাও দেখা যায় অতিরঞ্জিতভাবে পালন করা হয়। এর কারণ হলো কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান না থাকা । পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মহররম ও আশুরা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সুরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতের একটি অংশে আরবায়াতুন হুরুম অর্থাৎ অতি সম্মানিত ও মর্যাদা পূর্ণ চারটি মাসকে বলা হয়েছে। আর তা হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব এই চার মাসের মধ্যে মহররমের নাম উল্লেখ আছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে মহররম মাসটি সম্মানিত মাস ।
হজরত কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন নবী করিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন (তিরমিজি শরিফ) ।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন । নবী করিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন। (ইবনে হিববান)
বুখারী ও মুসলিম শরিফের বর্ণনায় পওয়া যায় যে , হজরত আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে । তখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের রোজার কারণ জানতে চাইলেন। অতপর তা জেনে বলেন, এদিনে হজরত মুসা (আঃ) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন , এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে নদ-নদী অতিক্রম করেন । আর ফেরাউন সেই নদীতে ডুবে মারা যায় । তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এদিন রোজা রাখে । নবী কারিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুসা (আঃ) এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রাধিকারমূলক । অতপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন । যাতে ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের সাদৃশ্য না হয় ।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায় । তবু রমজানের রোজার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। ইসলামের ইতিহাসে এই মাস এমন কতগুলো স্মৃতি বিজড়িত। যে স্মৃতিসমুহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।
তবে সব ঘটনাকেই ছাপিয়ে যায় বিশ্ব নবী (সা.) দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)এর শাহাদাত বরণের ঘটনা। আশুরার দিন মিথ্যাকে পরাজিত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার দিন। ভোগবাদীতাকে কোরাবানি করে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার দিন। সেদিন ইয়াজিদ তার কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে মাত্র ১৭০ জনের ইমামের কাফেলার সাথে এক অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।শহিদ করেছিলো নবী পরিবারের সদস্যসহ ৭২ জনকে।
এমকে
মন্তব্য করুন