• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

কারবালার ময়দানে কয়েকজন বিধর্মীর আত্মত্যাগ আজও স্মরণীয়

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:২৯

ইমাম হোসাইন (রা.) এর সংগ্রাম ছিল বিশ্বের ইতিহাসে বহুমাত্রিক এক আন্দোলন। যার ব্যাপ্তি শুধুই যে আশুরার দিনের অন্যান্য মহান ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে তাই নয়, বরং এর ব্যাপকতা বুঝাতে প্রচলিত এই উক্তিটি উল্লেখ করাই যথার্থ , ‘প্রতিটি দিনই আশুরা আর প্রতিটি ময়দানই কারবালা।’

আমরা আজ যে সময়টাতে উপনীত হয়েছি, যেখানে মুসলমানরা ব্যক্তিগত এবং জাতিগতভাবেই তাদের পরিচয় ভুলে গেছে। প্রকট আত্মপরিচয়হীনতা এবং আদর্শশূন্যতা গ্রাস করে ফেলছে মুসলিম জাতিকে। আধ্যাত্মিক সত্তাকে হারিয়ে ফেলে ভোগবাদী ইন্দ্রিয়সর্বস্ব মানুষ পরিচয়ে বেড়ে উঠছে মুসলিম জাতি। কিন্তু মুসলিম জাতি দিন শেষে না পারছে ভোগবাদীতায় পাশ্চাত্যকে টেক্কা দিতে আর না পারছে বস্তুগত সুখ অর্জন করতে।

এই সংকট আজ নতুন নয়। রাসূল (সা.) এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই মিল্লাতে মুহাম্মাদি একই রাহুগ্রাসের সম্মুখীন হয়। তখনই ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসেন আখেরি নবীর কনিষ্ঠ দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। আত্মপরিচয়হীন মিল্লাত, স্বৈরাচারী পুঁজিবাদী শাসকশ্রেণি আর ইন্দ্রিয়সর্বস্ব আলেমশ্রেণির সামনে দাঁড়িয়ে কারবালার প্রান্তরে মহররমের ১০ তারিখ নিজের ৬ মাসের পুত্র আলী আসগার, নিকটতম আত্মীয় এবং মুষ্টিমেয় সঙ্গী সাথে নিয়ে শাহাদাতবরণ করেন এবং আদর্শহীন ঘুমন্ত উম্মতে মুহাম্মাদির উদ্দেশ্যে এই বাণীই রেখে যান যে, “জাগো! সাক্ষ্য দাও- স্বৈরাচার, পুঁজিবাদ, অনাচার, অযাচার, ভণ্ডামি, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে এবং তাওহীদ ও রিসালাতের পক্ষে।”

কারবালার সংগ্রাম ছিল ইমাম হোসাইন নামের এক মহান শিল্পীর দক্ষ হাতের তুলির ছোঁয়ায় আঁকা একটা অনবদ্য চিত্র।

আশুরার রাতে যখন ইমাম হোসাইন তাঁর সঙ্গীদেরকে বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আমার আর কোনো দাবি নেই। শত্রুরা কেবল আমার মাথা চায়, তোমাদের নয়। তোমরা নিরাপদে কারবালার প্রান্তর ত্যাগ করতে পার। কিন্তু যারা যাবে না, তারা জেনে রাখ, আগামীকাল আমাদের সবাইকেই হত্যা করা হবে।’

এই কথার প্রেক্ষিতে মুসলিম বিন আওসাজা বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই আপনাকে ছেড়ে যাব না, আমার হাতের বর্শা আর তরবারি মাটিতে পড়ার আগ পর্যন্ত আমি শত্রুদেরকে তা দিয়ে হত্যা করব, এরপর পাথর দিয়ে তাদের আঘাত করব, কোনো অবস্থাতেই নবীর বংশকে ফেলে যাব না। যদি আমাকে মেরে ফেলে আগুনে পোড়ানো হয় এবং আবার জীবিত করে পুনরায় একইভাবে হত্যা করে আগুনে পোড়ানো হয়, সেভাবে সত্তরবারও যদি মারা হয়, আমি তাও আপনার পক্ষে সংগ্রাম করেই যাব। আপনার পাশে থেকে শাহাদাতের সুধা লাভের প্রত্যাশায়।’

রাসুলের সাহাবি আবু যার গিফারির আযাদকৃত জন ইবনে হুয়াই নামের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী আবিসিনিয় দাসের জন্যেও ছিল এটা শেষ লড়াই এবং পরম মুক্তি।

আশুরার ঘটনার আগের দিন ইমাম হোসাইন (রা.) জনকে ডেকে বললেন, ‘এতটা কাল আমাদের জন্য তুমি যথেষ্ট করেছ। এখন তুমি আমাদের ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পার।’ জবাবে জন বলেছিলেন, ‘কত বড় অন্যায়ই না এটা হবে যে, আমি আপনাদের আপ্যায়ন এবং সাহচর্য থেকে এতকাল উপকৃত হয়ে আজ এখন আপনাদেরকে দুর্দিনে ফেলে চলে যাব!’

শুধু জন নয়। ইমাম হাসানের আযাদকৃত দাস মুনযেহ, হজরত আলীর আযাদকৃত দাস নাসর ইবনে নাইজার, ইমাম হোসাইনের আযাদ করা দাস আসলাম, সুলায়মান ইবনে রাজিন, ইমাম হোসাইনের মুক্ত দাসির পুত্র কারিবসহ এক বিরাট দাসশ্রেণি কারবালার ময়দানে তাদের চরম মুক্তি খুঁজে নেয়, যে মুক্তি তাঁরা পালিয়ে যাওয়ার লোভনীয় প্রস্তাবেও খুঁজে পাননি।

১০ মহররম চোখে বর্শার আঘাত পেয়ে জন যখন মাটিতে পড়ে গেলেন, ইমাম হোসাইন এমন ভাবে ছুটে এলেন যেন তাঁর নিজ সন্তান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন। জনের মাথাটা নিজের ঊরুতে রেখে একটা চুম্বন দিলেন তাঁর কপালে। সেদিন একজন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হয়ে ইমাম হোসাইনের পক্ষে যুদ্ধ করে আত্মত্যাগ করেছিলেন জন।

ইমামের ভাষা ছিল ফিতরাতের ভাষা। ফিতরাত হলো সহজাত প্রবৃত্তি। বিবেকবোধ। আকল। হৃদয়ের সকল সুকুমারবৃত্তি। এক কথায় মনুষত্ত্ব-হৃদয়ের ভাষা। সেই ভাষাতেই ইমাম ডেকেছিলেন!

পাপ করতে করতে একসময় মানুষ এই ফিতরাতের ভাষা ভুলে যায়। ভোগবাদ তাকে সত্য থেকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh