• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঘরে ঘরে এত জ্বর কেন?

সিয়াম সারোয়ার জামিল

  ১৪ জুন ২০১৭, ১২:১৯

রাজধানীর ঘরে ঘরে মানুষ এখন জ্বরে আক্রান্ত। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশজুড়ে পাড়া মহল্লার প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কেউ না কেউ জ্বরাক্রান্ত হচ্ছেন। সেই জ্বরের মাত্রা ১শ' দুই তিনে গিয়ে ঠেকছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মে মাসের শুরু থেকে জ্বরের প্রকোপ বেড়ে গেছে। জুনে সেই মাত্রা আরো বেশি হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গেলো এক দশকের মধ্যে এবার জ্বরাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন যত রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের মধ্যে জ্বর আক্রান্ত রোগী প্রায় ৯০ ভাগ।

চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন, তীব্র গরম, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশক নিধনের জোরালো কার্যক্রম না থাকায় বিভিন্ন ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ বেড়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন একইসুরে। তারা বলছেন, মশা নিধন কর্মসূচি হাতে না নিলে চিকুনগুনিয়াসহ ভাইরাসজনিত রোগের প্রকোপ কমবে না। গেলো বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় চিকুনগুনিয়ার বিস্তার প্রতিরোধে এডিস মশা ও এর লার্ভা নিধনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

হঠাৎ করে মানুষ কেন এত বেশি জ্বর আক্রান্ত হচ্ছেন জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: আবুল কালাম আজাদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে বাতাসের আর্দ্রতা অত্যন্ত বেশি। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হয়, আবার কিছুক্ষণ পরই তীব্র গরম অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এ ধরনের পরিবর্তনের প্রভাব জনজীবনে পড়ছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন ভাইরাস ও টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এখন চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। এতে মৃত্যুর কোনো রেকর্ড নেই। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি ভোগান্তির শিকার হন। চিকুনগুনিয়া নিজেই সেরে যায়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠােরন (আইইসিডিআর) জরিপেও চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুসহ ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপের চিত্র উঠে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত আইইডিসিআর ২৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ১৯৬টি নমুনায় চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: মুশতাক হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এখন জ্বর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হয়, জয়েন্টে ব্যথা হয়। রক্তচাপ কমে যায়। পাতলা পায়খানাও হতে পারে। চোখ-মুখ ফুলে যেতে পারে।

তিনি বলেন, শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। ৩ থেকে ৭ দিন এ জ্বর স্থায়ী হতে পারে। মুশতাক জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের বেশ কজন চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, কর্মকর্তাও জ্বরে ভুগছেন। অফিস করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পানি, শরবত, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি খেতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করবেন। বমি বা অন্যান্য উপসর্গ অনুযায়ী কিছু ওষুধ দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজে আসবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাক্সিন এখন পর্যন্ত বাজারে আসেনি।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডা: অনুপ কুমার সাহা বললেন, খুব গরম এড়িয়ে চলতে হবে আর প্রচুর পানি খেতে হবে। আর জ্বর যদি হয়েই যায়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার ও প্যারাসিটামল খেতে বলেছেন। তবে তিনি আরো বলেছেন, জ্বরের সঙ্গে যদি ইনফেকশন যুক্ত হয়, তাহলে একটা অ্যান্টিবায়োটিক লাগতেও পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সবকিছু করতে হবে

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh