কোরআন ও হাদিসে রোজার গুরুত্ব
রোজা বা সিয়াম সাধনা আল্লাহর অন্যতম বিধান। পূর্ববর্তী ধর্মগুলোতেও এই বিধান ছিল। রোজা হলো একটি অপ্রকাশ্য ইবাদত। আর নামাজ ও হজ দৃশ্যমান ইবাদত। রোজা অপ্রকাশ্য ইবাদত বলে তা দিয়ে নিজেকে জাহির করা বা লোক দেখানোর সম্ভাবনা কম। রোজা মানুষের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। যারা একমাস ধরে দিনের বেলায় সব ধরনের খাদ্য-দ্রব্য ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে দূরে থাকে, তারা অন্যের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের লোভ-লালসাকে দমন করতে সক্ষমতা লাভ করে। রোজা মানুষকে উদার হতে শেখায়। যারা একমাস ধরে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করে তারা ক্ষুধার্তদের কষ্ট বুঝতে পারে এবং তাদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে ও সহানুভূতিশীল হয়। রোজা গুনাহ বা পাপ বর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ পাপ পেটপূজা ও ইন্দ্রিয় পরায়ণতা থেকেই জন্ম নেয়। রোজা এই দুই প্রবৃত্তিকে দমনে রেখে সমাজে দুর্নীতি ও পাপ হ্রাস করে এবং খোদাভীরুতা বা পরহেজগারিতা বাড়ায়।
সূরা বাকারাহ’র ১৮৩তম আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ (২: ১৮৩)
সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে’।
পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি সহি হাদিস তুলে ধরা হলো ঃ-
- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) ঘোষণা করেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
- অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) ঘোষণা করেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এরমধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিস, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)
- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুম হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকী)
- বুখারী শরিফের আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কেউ যদি (রোজা রেখেও) মিথ্যা কথা বলা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু পানাহার ত্যাগ করা (অর্থাৎ উপবাস ও তৃষ্ণার্ত থাকা) আল্লাহর কোনো দরকার নেই।
- হযরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন একবার রাসুল (সা.) আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবজাতি! তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে এক মহান মাস, মোবারক মাস। এটি এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এই মাসের রোজাগুলোকে করেছেন (তোমাদের ওপর) ফরজ আর রাতে নামাজপড়াকে তোমাদের জন্য করেছেন নফল। এই মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এইমাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্যমাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো। এটা ধৈর্য্যের মাস। আর ধৈর্য্যের সওয়াব হলো বেহেশত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এটা সেই মাস যে মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। এছাড়া তার ছওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব কমবে না।
- হযরত আবু ওবায়দা (রা.) রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হুজুর (সা.) ঘোষণা করেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরুপ। (ইবনেমাজাহ, নাসাঈ)
এমকে
মন্তব্য করুন