• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

শিশুরাই বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার!

মিথুন চৌধুরী

  ০৮ মার্চ ২০১৭, ১৭:৪৮

কেরানীগঞ্জের মান্দাইলে ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ৬৫ বছরের বৃদ্ধার দ্বারা। চাঁদপুরে রামদাসদী আশ্রায়ন প্রকল্পে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হৃদয় নামে যুবক। দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে পাঁচ বছরের শিশু পূর্জাকে ধর্ষণ করে ৪০ বছর বয়সী সাইফুল। এরকম ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় এবং মামলাও হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে থাকে।

প্রতিদিনের এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নারীদের চেয়ে শিশুরা’ই বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা বাড়ছে। যা শুধু আইন দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিচারহীনতাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনাকে উৎসাহিত করছে। এমন বর্বরতার শাস্তি না হওয়ায় ধর্ষণের ঘটনা ও মামলার সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।

এছাড়া অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেঁচে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

গেলো দু’ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রায় ৩০ জন শিশু। যার মধ্যে ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুই বেশি। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সুত্রে জানা যায়, শুধু ২০১৬ সাল জুড়ে ৩৪৩ জন শিশু শারিরিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে রয়েছে ধষর্ণের চেষ্টা, গণধষর্ণ, অপহরণের পর ধর্ষণ, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা, ধর্ষণের পর হত্যা। এর মধ্যে ধষর্ণের চেষ্টা করা হয় ৫৩ জন শিশুকে। যার মধ্যে ৬ বছরের নিচে ১০ জন, ৭ থেকে ১২ বছরের ১৬ জন, ১২ থেকে ১৮ বছরের ২৭ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬ বছরের নিচে ৫০ জন, ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত ৭৭ জন, ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ৭৮ জন। গণধষর্ণের শিকার হয়েছে ৬ বছরের নিচে ২ জন, ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত ৭ জন, ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ২৯ জন। অপহরণের পর ধষর্ণের শিকার হয়েছে ৬ বছরের নিচে ১ জন, ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত ১ জন, ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ২০ জন। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত ১ জন, ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৭ থেকে ১২ পর্যন্ত ১২ জন, ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ৮ জন। এছাড়া নির্যাতনের শিকার চারশতাধিক শিশুর বয়স জানা যায়নি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এর তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫২১টি। যাদের মধ্যে ৯৯টি শিশু গণধর্ষিত হয়েছে, ৩০টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৪টি শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। যাদের মধ্যে ২২টি শিশু গণধর্ষিত হয়েছে, ২১টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ২৩টি শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। ২০১৩ সালে ১৭০ টি এবং ২০১২ সালে ৮৬টি শিশু ধর্ষণ হয়।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে গবেষকরা বলছেন, ৫ বছরের নিচে থেকে ১৮ বছরের শিশু কেউই ঝুঁকিমুক্ত নয়। ধর্ষিত শিশুদের অধিকাংশের বয়সই ৫-১২ এর মধ্যে। এদের নানা কৌশলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। ৫ বছরের নিচে থেকে ১২ বছরের শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে চকলেট, খেলনা বা কোনো শৌখিন জিনিস দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কোনো নির্জন স্থানে বা বাড়িতে একা পেয়ে। এছাড়া ১৩-১৮ বছরের শিশুদের ধর্ষণ করা হয়েছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ও একা পেয়ে।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, ধর্ষণের শিকার হয় অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। শুধু লাঞ্চিত করে থমকে থাকে না ধর্ষকরা। সামাজিক আধিপত্যের কারণে তারা পরিবারকে ভয় দেখিয়ে বিষয়টা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায়। শুধু তাই নয় অনেকে নির্যাতিত শিশুকে বিদ্যালয়ে যেতেও বাধা দেয়। আর বখাটেদের প্রতিহত করতে গিয়ে খুন ও হামলার শিকার হন পরিবারের সদস্যরা।

তিনি বলেন, মামলা হলে যে চার্জশিট দেয়া হয় তাতে আইনের ফাঁক-ফোকর থাকে। নির্যাতিত শিশু দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত। আর অপরাধীরা ক্ষমতাবান প্রভাবশালী। ফলে মামলা গতি হারায়। শিশুর পক্ষে সাক্ষী পাওয়া যায় না। দরিদ্র অভিভাবক অনেক সময় অল্প টাকায় আসামির সঙ্গে আপস করে মামলা তুলে নেয়। আবার অনেক সময় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলে গরীব হওয়া সত্ত্বেও সম্মান খোয়ানোর ভয়ে নির্যাতিত শিশুর অভিভাবক মামলা করেন না। ফলে সমাজে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। ধরা পড়লেও বিচার হচ্ছে না। আবার বিচার হলেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। যারা এই ধরনের অপরাধ করছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই করছে। ফলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে অন্যরা সতর্ক হবে না।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh