• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সন্তানের সামনে ঝগড়া নয়

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ০৪ জুলাই ২০১৭, ১৬:৫৯

শিশুরাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতের কর্ণধার। বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা সব স্বপ্ন। কিন্তু সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা যে চাট্টিখানি কথা নয়!

শিশুরা পর্যবেক্ষণ ও বোঝাপড়ায় খুব দক্ষ। বাবা-মা’র কথা এবং কাজ সহজে শিশুদের চরিত্রের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যদি বাবা-মা শিশুদের অনুভূতির কথা বিবেচনা না করে তাহলে শিশুদের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেজন্য প্রত্যেক বাবা-মার উচিত শিশুর সামনে নিজেদের কথা ও কাজের প্রতি খেয়াল রাখা।

বাচ্চাদের সামনে বাবা-মা যদি ঝগড়া করে বা অন্যদের সঙ্গে ঝগড়া করে তাহলে বাচ্চারা ভীত হতে পারে। তাই বাচ্চাদের সামনে সবধরনের ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলা উচিত।

বাবা-মায়ের রোজকার কলহ, চেঁচামেচি, সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কারণে বাচ্চাদের আচরণে অনেকরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। উৎকণ্ঠা, ডিপ্রেশনের শিকার হয় তারা, আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় না। এমনকি স্কুলের পরিবেশেও তাদের মানিয়ে নিতে অনেকসময় অসুবিধে হয়।

এরকম পরিস্থিতিতে বাচ্চারা ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিজেদের খুব অসহায়ও মনে করে। বাবা-মা একসঙ্গে হলে আবার হয়তো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হবে, এই ভয়ে তারা মনে-মনে আতঙ্কিত থাকে। বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখে ক্লান্ত শিশুটি বুঝতেও পারে না এই যুদ্ধে সে কার পক্ষ নেবে! এর ফলে ছোট থেকেই সে ইনডিসিশনে ভুগতে থাকে।

এছাড়া বাকিদের সঙ্গে তার ব্যবহার কী রকম হবে তার প্রথম পাঠ কিন্তু শিশুটি তার বাবা-মায়ের কাছ থেকেই পায়। তাই সেখানে যখন সে দেখছে, পরস্পরের প্রতি অশ্রদ্ধা, অন্যের মতকে গুরুত্ব না দেয়া, কোনো ক্ষেত্রে গায়েও হাত তোলা, পরবর্তীকালে কিন্তু শিশুটির আচরণে তার ছাপ থাকে।

স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অশান্তির কারণে মন হয়ে থাকে তিক্ত। অনেকসময় পুরো রাগটা গিয়ে পড়ে শিশুটির উপর। ফলে বাবা-মায়ের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্কটাই গড়ে উঠতে পারে না।

তাই সন্তানকে একটা সুস্থ ভবিষ্যৎ দিতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। হতে পারে আপনাদের মধ্যে অনেক অমিল আছে কিংবা হয়তো মিলমিশ আছে কিন্তু ঝগড়া হলে কোনো কাণ্ডজ্ঞান থাকে না। এসব ক্ষেত্রে যতই রাগ হোক না কেনো নিজের সন্তানের মুখ চেয়ে কিছুক্ষণের জন্য কন্ট্রোল করুন। অপরজনকেও সেটা বোঝান। তারপর এমন জায়গায় গিয়ে ঝামেলা মেটান যেখানে সন্তান তা শুনতে পাবে না তবে সেটা একই বাড়িতে দরজা বন্ধ করে নয়। বাচ্চাদের বোকা বানানো সহজ নয়। তাই নিজেকে শান্ত করার উপায় খুঁজুন।

যদি পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্ভব না হয় তাহলে সন্তানকে শান্তভাবে তার একটা আভাস দিন। অবশ্যই তাকে বিস্তারিত বিবরণ দেবেন না। কিন্তু সম্পর্কটা যে ভালো নেই কিংবা আপনারা সেটা শোধরানোর চেষ্টা করছেন সে ব্যাপারে বাচ্চাটি যেন অন্ধকারে না থাকে। সেই সঙ্গে তাকে এটাও বোঝান যে আপনি ওর পাশে সবসময় আছেন।

আপনাদের পরস্পরের মতের অমিল হতেই পারে কিন্তু একে অপরের মতামতকে সম্মান করুন। তা হলে আপনার সন্তানও পরবর্তীকালে আপনার বক্তব্যকে সম্মান দিতে শিখবে।

আর সন্তান শুনছে না ভেবে ওর সামনেই এমন কথা বলবেন না যা ওর শোনা উচিত নয়। বাচ্চাদের কিন্তু চোখ-কান খুবই সজাগ। আপনাদের মধ্যে মতানৈক্য হলে সন্তানকে কোনো একজনের দিকে টেনে নেবেন না বা তার কাছ থেকে সাপোর্ট খুঁজবেন না। এর ফলে সে আর একজনের থেকে মানসিকভাবে দূরে চলে যায় যা একটি সুন্দর পরিবারের ভারসাম্য নষ্ট করে।

আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হলে সেটা বাড়তে দেবেন না। সন্তানের কথা ভেবে কেউ একজন চুপ করে যান কিংবা ঘর থেকে বেরিয়ে যান।এতে সাময়িক সুরাহা হবে।

রোজ রোজ ঝগড়া-অশান্তিতে সম্পর্কটা তিক্ত হয়ে যেতে থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন। মনে রাখবেন, সুস্থভাবে বাবা-মায়ের ডিভোর্স শিশুদের মনে ততটাও খারাপ প্রভাব ফেলে না যতটা ফেলে বাবা-মায়ের নিত্য অশান্তি।

আরকে/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • লাইফস্টাইল এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh