• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ডায়াবেটিস রোগিরাও রোজা রাখবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ২৯ মে ২০১৭, ১৮:০৪

অনেকেই আছেন যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলেও রোজা রাখতে চান। তবে ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা বা কিভাবে রাখতে হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভোগেন অনেকেই। ইসলামেও এর অনুমতি আছে কিনা, তা নিয়েও বিভ্রান্তিতে ভোগেন কেউ কেউ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোজা রাখা অনেক সহজ করে দিয়েছে। ডায়াবেটিস হলে রোগি রোজা রাখতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎক এবং ইসলামি আলেম উভয়েই রোজা রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগে অনেক ধরণের জটিলতা হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকায় জটিলতার আশঙ্কা আরো বেশি। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যেতে পারে। যারা সালফোনাইলইউরিয়া জাতীয় ওষুধ খান, ইনসুলিন নেন, সেহেরী খান না বা খুব কম খান অথবা রোজা রেখে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন তাদের এই ঝুঁকিটা বেশি।

সুগার কমে গেছে বোঝার উপায় হলো, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম দেয়া, মাথা ঘোরা, শরীর কাঁপা, চোখে ঝাপসা দেখা। এতে রোগি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সুগারের পরিমাণ ৩ বা এর নিচে হলে রোজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত বা যে কোনো খাবার খেতে দিতে হবে।

রক্তের সুগার কখনও অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। এর লক্ষণ হলো জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, পানি শূন্যতা, দুর্বলতা, ঝিমুনি, বমি ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সুগার পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে। রোজা অবস্থায় ইনসুলিন ইনজেকশন নিলে রোজা নষ্ট হবে না বলেই অনেক ইসলামী চিন্তবিদগণের অভিমত।

শরীরের পানি শূন্যতা দূর করার উপায় হলো রাতের বেলা পানি বেশি বেশি পান করা। তারপরও যদি রোজা রাখা অবস্থায় পানি শূন্যতার পরিমাণ বেশি হয় যেমন জিহ্বা অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়া, বেশি বেশি মাথা ঘোরানো, প্রস্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত কম ইত্যাদির কোন লক্ষণ দেখা যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে রোজা ভাংতে হবে।

যারা শুধুমাত্র খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখেন তাদের জন্য রোজা হল সুবর্ন সুযোগ। রোজা তাদের জন্য কোন জটিলতা সৃষ্টি করেনা, বরং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। রোজায় দিনে বেলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা ও ইফতার এবং সেহেরিতে সময় মত পরিমিত আহারের অভ্যাস ডায়াবেটিসের চিকিত্সার মূল উপাদান।

অনেক রোজার সময় অতিরিক্ত খাদ্য খান, অনেকে আবার খুবই অল্প আহার করেন। মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দুটিই ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা যেতে পারে-

  • সেহেরীর খাবার সেহেরীর শেষ সময়ে খাওয়া
  • ইফতারের সময় বেশি বেশি চর্বিযুক্ত বা মিষ্টি জাতীয় খাবার না খাওয়া
  • ভাজা-পোড়া খাবার না খাওয়া
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও অন্যান্য তরল খাবার গ্রহণ করা
  • খাদ্যের ক্যালরী ঠিক রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
  • ইফতারে অতিভোজন এবং সেহেরীতে অল্প আহার পারিহার করা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখে খাবার ওষুধ দরকার হয়। এর মেধ্য যারা মেটফরমিন, গ্লিটাজোন অথবা ইনক্রিটিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার ঝুঁকি অনেক কম। তবে সালপোনাইলইউরিয়া জাতীয় অথবা ইনসুলিন রক্তের সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে দিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া করতে পারে। তাই রোজার শুরুতেই চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।

রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ওষুধের কিছু পরিবর্তন দরকার হতে পারে। সাধারণত যে সব পরিবর্তন করা হয় তা হল যারা ৩ বার ওষুধ খান তাদের বেলায় বেশি মাত্রা ইফতারের সময় খাবেন এবং কম মাত্রাটুকু সেহেরীর সময় খাবেন। যদি দিনে দু'বার খেতে হয় তবে সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহেরীর সময় খাবেন।

যারা ইনসুলিন নেন তারা রোজায় দীর্ঘ মেয়াদী ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারেন, এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। এই ইনসুলিন ইফতারের সময় নিতে হবে এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্প মাত্রায় নিতে হবে। ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীদের অবশ্যই রমজানের শুরুতেই ইনসুলিনের ধরণ ও মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের মতামত অনুযায়ী রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা এমনকি প্রয়োজনে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়া যাবে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তাই সম্ভাব্য জটিলতা এড়ানোর জন্য ডায়াবেটিক রোগির উচিত সেহেরীর ২ ঘন্টা পর এবং ইফতারের ১ ঘন্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা উচিত। ইফতার বা রাতের খাবারের ১ ঘন্টা পর ব্যায়াম করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিক রোগিদের রোজা রাখা যাবে কি যাবে না তা নিয়ে বহু বিতর্ক ছিল এবং আছে। যেহেতু রোজা আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বিধানে একটি অপরিহার্য ফরজ এবং আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর প্রতিদান দেবেন, তাই অজুহাত বা আলস্য করে রোজা পালন থেকে বিরত থাকা উচিত নয়।

ডা: ইফতেখার আলম
চিকিৎসক, রাজশাহী

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • লাইফস্টাইল এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh