সাদ্দামকে কী প্রশ্ন করেছিলেন নিক্সন
ডিসেম্বর, ২০০৩। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে মার্কিন বাহিনী আটক করেন। আটক হবার পর যিনি প্রথম সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তিনি হলেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইএ কর্মকর্তা জন নিক্সন।
নিক্সন ১৯৯৮ সালে সিআইএতে যোগ দেন। তখন থেকে সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে স্টাডি করেন তিনি। যে কারণে তার কাঁধেই পড়ে সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্ব।
নিক্সন বলেন, ‘সাদ্দামকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, এ মানুষটিই সাদ্দাম। আমার টেবিলে অনেক বছর ধরে পড়ে থাকা একটি বইয়ে সাদ্দামের যে মুখভঙ্গি রয়েছে, কথা বলা শুরু করার পর দেখি সেই একই মুখ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিজের গায়ে চিমটি কেটে নিশ্চিত হয়েছিলাম, আমিই বিশ্বের সবচে’ বড় ফেরারিকে জিজ্ঞাসা করছি। আমার কাছে একেবারে অন্যরকম লেগেছিল বিষয়টি।’
নিক্সন বলেন, ‘মার্কিন গণমাধ্যমে সাদ্দামকে যেভাবে তুলে ধরা হয়, তার ঠিক উল্টো তিনি। আমি যত মানুষকে জেরা করেছি, তাদের মধ্যে সবচে’ বিস্ময়কর চরিত্র ছিলেন সাদ্দাম। চমৎকার, নম্র আচরণ করতেন। কৌতুকবোধও ছিল তার মধ্যে।’
সাদ্দামের ভালো দিকের পাশাপাশি তাঁর মন্দ চরিত্রের কথাও বলেন নিক্সন । তিনি বলেন, মাথা গরম হয়ে গেলে সাদ্দামের প্রচণ্ড বদরাগী, অসভ্য ও নীচু মানসিকতাই প্রকাশ পেতো।
ছোট একটি রুমে সাদ্দামকে জেরা করেন নিক্সন। একটি চেয়ারে তাঁকে বসতে দেয়া হয়েছিল। জেরার সময় শুধু নিক্সন, জবানবন্দি ধারণকারী এবং একজন দোভাষী থাকতেন।
জেরার শুরুতেই সাদ্দামের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন নিক্সন। শুরুটা ভালোই হয়েছিল। তবে ক্রমেই সাদ্দাম অনেক বেশি রহস্য সৃষ্টি করতে শুরু করেন।
জেরার একটি বড় অংশজুড়ে ছিল গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ডব্লিউএমডি)। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাদ্দামের বিরুদ্ধে এ অস্ত্র তৈরির অভিযোগ এনেছিলেন। নিক্সন বলেন, এ বিষয়টির প্রতিই হোয়াইট হাউসের মূল আকর্ষণ ছিল। তবে সাদ্দামকে জেরা, তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা এবং বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, সাদ্দাম তাঁর দেশের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছিলেন এ যুদ্ধের কয়েক বছর আগেই। আর এ কার্যক্রম শুরুর কোনো ইচ্ছেও ছিল না সাদ্দামের।
সাদ্দামকে জেরার ৫ বছর পর ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সেই জেরা সম্পর্কে জানানোর ডাক পান নিক্সন। তিনি বলেন, সাদ্দামকে উৎখাতের পর ইরাকে যা ঘটেছে, তা নিয়ে তিনি লজ্জিত।
এপি/এসজেড
মন্তব্য করুন