• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ভারতে মুসলিম যুবককে বাঁচিয়ে হুমকি পাচ্ছেন শিখ পুলিশ কর্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০২ জুন ২০১৮, ১৪:০৩

উত্তর ভারত গো-বলয়ে হিন্দুত্বের প্রচার নতুন নয়। হিন্দুত্বের নামে অন্য ধর্মের মানুষকে পিটিয়ে মারার ঘটনাও নতুন নয়। তবে নতুন মনে হয়েছে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। আর তা হলো, হিন্দু মেয়ের মুসলিম প্রেমিক হওয়ার ‘অপরাধে' এক যুবককে প্রায় পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা রুখে দিয়েছেন তরতাজা এক পুলিশকর্মী। রক্ষাকর্তা সেই পুলিশকর্মী আবার শিখ ধর্মাবলম্বীর। সপ্তাহব্যাপী বিষয়টি ভারতজুড়ে বেশ আলোচিত হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।

মারমুখী জনতার রোষ থেকে ছেলেটিকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন শিখ পুলিশকর্মী গগনদ্বীপ সিং। ভিড়ের মধ্যে জনতার মার খেলেও হাল ছাড়েননি গগনদীপ। নিজে হেনস্থার শিকার হয়েও ‘ঢাল' হয়ে রক্ষা করেন অসহায় যুবককে। ক্ষিপ্ত জনতার নিন্দা বা গণপিটুনিতে অংশ নেয়া লোকজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পরিবর্তে ওই প্রেমিক যুবককে গণপিটুনির হাত থেকে রক্ষাকারী সেই পুলিশ আধিকারিকের ভূমিকার সমালোচনা শোনা যাচ্ছে অনেকের মুখে।

এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় গগনদীপকে ‘দেখে নেয়া-'র হুমকি ধেয়ে আসছে। কেন্দ্রের শাসকদলের একাধিক নেতা গগনদীপের সমালোচনা করেছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় বিজেপি নেতা রাকেশ নাইনালের বক্তব্য, এটা খুবই অন্যায়। ওরা (মুসলিম) পরিকল্পনা করেই হিন্দু মেয়েদের ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এই ঘটনায় মেয়েটিকে মন্দিরের মতো পবিত্র জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। এতো সাহস এলো কোথা থেকে?''

আর এক বিজেপি বিধায়ক রাজকুমার ঠাকরালের কথায়, আমরা হিন্দুরা তো মসজিদে গিয়ে অশান্তি করি না। তাহলে ছেলেটি কেন এসেছিল?

ঘটনা হলো, নিজের হিন্দু বান্ধবীকে নিয়ে মন্দিরে গিয়েছিলেন ওই মুসলিম যুবক। ঘটনাস্থল উত্তরাখণ্ডের রামনগর। কানপুর রেলস্টেশনে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল মুসলিম ছেলেটির। সেখান থেকেই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে কিছু লোক। এরপর স্টেশন চত্বরে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। এরপর শুরু হয় গণধোলাই। সেখানে মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চলছে, এই অভিযোগে যুবককে মারধর করতে শুরু করে জনতা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান পুলিশ কর্মকর্তা গগনদীপ সিং। তিনি উন্মত্ত জনতার হাত থেকে প্রেমিক-প্রেমিকাকে উদ্ধার করেন।

আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও। ভিডিওটি তুলেছে নির্যাতনকারী দলের কোনও এক সদস্যই। সেখানে দেখা গেছে, ক্রমাগত মার খাচ্ছেন ওই মুসলিম যুবক। যে মারছে তার মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজ, সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি। কতদিন মেয়েটির সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে, সেকথাও জানতে চাওয়া হয়েছে। দুই মিনিটের ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই হইচই শুরু হয়। ওই ভিডিওতেই কেউ কেউ বলছেন, যদি তোর জীবন বরবাদ না করে দিতে পারি, তাহলে আমাদের নামই বদলে দেবো!

এদিকে যখন প্রথমবার ইন্টারনেটে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে অনেকেই গগনদীপকে ‘হিরো' সম্বোধন করতে শুরু করেন। ভারতের প্রথম সারির দৈনিক সংবাদপত্রগুলো গগনদীপের খবর প্রকাশ করে৷। লেখক চেতন ভগত, লেখিকা তসলিমা নাসরিন, এমনকি বলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারহান আখতাররা ওই শিখ পুলিশকর্মী গগনদীপের ভূয়সী প্রশংসা করে টুইট করেছেন। তবে যাকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই গগনদীপ নিজে অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, আমি তো আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। এমনকি পুলিশের ইউনিফর্মে না থাকলেও একই কাজ করতাম৷ আমার মনে হয়, আমার জায়গায় যে কোনও ভারতীয় থাকলে তারও একই কাজ করা উচিত হতো।

তবে গগনদীপের কপালে এই প্রশংসা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এরপরই শুরু হয়ে গেছে গগনদীপের সমালোচনা, তার ভূমিকার নিন্দা। কেউ কেউ তো তাকে হুমকিও দিতে দ্বিধা করেননি। রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ তো ভিড়ের (জনতা) পক্ষ নিয়ে ওই মুসলিম যুবককে গণপিটুনির পক্ষেও কথা বলেছেন। স্বভাবতই যুবকটিকে রক্ষা করার জন্য গগনদীপের ওপর রোষ জন্মেছে অনেকের। তার প্রাণনাশের হুমকিও এসেছে। গগনদীপ নিজে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তার ‘উগ্র' ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে বহু মেসেজ পেয়েছেন তিনি। ঘৃণা এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, গগনদীপকে ছুটিতে পাঠিয়েছে পুলিশ দপ্তর৷ তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। তবে চিকিৎসকের কাছে ঠিক কী ধরনের পরামর্শ নিতে হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না : রিজভী
ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন নিয়ে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব!
বিএনপির ভারত বর্জন কর্মসূচির কারণ জানালেন নাছিম
ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার
X
Fresh