• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

‘মনে হচ্ছিল এটা যেন কসাইখানা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩

কাবুলে বিলাসবহুল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শনিবার রাতে বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। নির্বিচার ওই হামলার মূল টার্গেট ছিল বিদেশিরা। তবে বাদ পড়েনি স্থানীয়রাও। ওই হামলার রাতেই আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন আজিজ তায়েব নামের এক ব্যক্তি। তিনি লিখেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি হয়তো মারা যাবো।

হামলা শুরু হলে এই টেলিকম কর্মকর্তা একটি পিলারের পেছনে গিয়ে আশ্রয় নেন।

ওই হামলায় ১৪ জন বিদেশিসহ কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে ছয়জনই ইউক্রেনের নাগরিক। ১২ ঘণ্টার অভিযানের পর আফগান নিরাপত্তা বাহিনী হোটেলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।

তার ভীতিকর অনুভূতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের তায়েব বলেন, কয়েক মুহূর্ত আগেও যাদের দেখেছি হাসি-তামাশা করছেন, তারাই কিছুক্ষণ পর পাগলের মতো চিৎকার-চেঁচামেচি আর দৌড়ানো শুরু করেছে। কেউ কেউ বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন।

ছয়তলা ওই ভবনের পাঁচতলায় আটকা পড়েছিলেন তায়েবের এক সহকর্মী। তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হোটেলের কিছু অংশ দেখে হচ্ছে এটা যেন কোনো কসাইখানা।

পরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে হামলাকারীরা নিহত হয়।

তায়েব পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাতে একটি টেলিকম কোম্পানির আঞ্চলিক প্রধান। রোববার একটি বার্ষিক কনফারেন্সকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মকর্তারা জড়ো হয়েছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোটেলের রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বহু বিদেশিকে জিম্মি করে বন্দুকধারীরা। তায়েব ও তার নতুন এই বন্ধু হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন।

তিনি বলেন, আমি একটার পর একটা হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা অনেক গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা ফোন দেয়ার এক ঘণ্টা পর নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা যখন আমাদের বের করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমরা হোটেলের বাইরে পাঁচ-ছয়টি মৃতদেহ দেখতে পাই।

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চমতলায় আগুন ধরে গিয়েছিল।

হোটেল থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার পর হোটেলে আটকে থাকা সহকর্মীদের ফোন দেন তায়েব। তিনি বলেন, কয়েকজন কাঁদছিল। তারা ধোঁয়ার কারণে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছিল।

ওই হামলার নাটকীয় এক ফুটেজ প্রকাশ করেছে আফগানিস্তানের টোলো নিউজ। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, মানুষজন বেডশিটের সাহায্যে বিল্ডিং থেকে নিচে নামার চেষ্টা করছে। এসময় হাত ফসকে এক ব্যক্তি নিচে পড়ে যেতেও দেখা যায় ওই ভিডিওতে।

পালিয়ে গিয়েছিল নিরাপত্তাকর্মীরা

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, হোটেলের নিরাপত্তায় থাকা দলটি ‘কোনো ধরনের লড়াই’ ছাড়া পালিয়ে গিয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলের ২৪ বছর বয়সী ওই কর্মী বলেন, তারা পাল্টা হামলা চালায়নি। তারা হামলাকারীদের কিছুই করেনি। তাদের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না।

ওই হোটেলকর্মী নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, তিন সপ্তাহ আগেই একটি ব্যক্তিগত কোম্পানিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করে হোটেলটি। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হোটেলের শীর্ষ কোনো কর্মকর্তাকে মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।

নিজের সহকর্মীদের নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানান তায়েব। আরেকটি আবেদন জানানোর আগে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, এই দেশে বেঁচে থাকাটা নিছক কাকতালীয় ব্যাপার।

আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, আমার শতাধিক সহকর্মী ও বন্ধু জীবন-মৃত্যুর মধ্যে ফেঁসে আছেন। তাদের জন্য দোয়া করবেন।

তবে শেষপর্যন্ত একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কনফারেন্সের অংশপ্রার্থী অন্তত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন

এ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘শেষমেশ’-এ কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ ছিলো : পারসা ইভানা
ফেসবুকে মনের কথা লিখলেও তুলে নিয়ে যায় : মির্জা ফখরুল
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা বিসিবির
আবারও নেতৃত্বে ফিরছেন বাবর আজম!
X
Fresh