• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ষাঁড় প্রতিযোগিতার জন্য বিয়ে করেননি তিনি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:১৯

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর এক নারী ষাড় লড়াইয়ে অংশ নেয়ার জন্য বিয়ে করেননি। সেলভারানি কানাগারাসু নামের ওই নারীর বয়স এখন ৪৮ বছর। পেশায় দিনমজুর এই নারী কৈশোরেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি বাবা ও দাদা পদচিহ্ন অনুসরণ করবেন। খবর বিবিসির।

সেই ভাবনা থেকেই নিজের যৌবনের পুরোটা সময়ই প্রতিযোগিতার জন্য ষাড় প্রস্তুত করেছেন তিনি। রাজ্যটিতে ঐতিহ্যবাহী ষাড় লড়াই জাল্লিকাট্টু নামে পরিচিত। দুই হাজার বছরের বেশি পুরনো জনপ্রিয় এই খেলাটি সাধারণত বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসময়টায় সেখানে ফসল তোলার উৎসব পালিত হয়। যেটি পঙ্গাল নামে পরিচিত।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ৩৫ বছর পর সৌদিতে সিনেমা প্রদর্শিত

--------------------------------------------------------

তবে প্রাণির ওপর নির্মমতার যুক্তিতে দুই বছর এই খেলার ওপর সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু গণবিক্ষোভের মুখে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকার ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

কানাগারাসু বলেন, আমার বাবা ও দাদা ষাড় পালতো। ওগুলোকে নিজের সন্তান মনে করতেন তারা।

বংশপরম্পরায় ওই ষাড় পালনের দায়িত্ব কানাগারাসুর ভাইদের ওপর পড়েছিল। কিন্তু তারা সময় দিতে না পারায় ষাড় পালনের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন কানাগারাসু।

তিনি এখন যে ষাড়টির দেখভাল করছেন সেটির নাম রামু। ১৮ বছর বয়সী এই ষাড়টি স্থানীয় জাল্লিকাট্টুতে অনেকটা কিংবদন্তীর মতো। ১০ বছর আগে রামুকে কিনেছিলেন কানাগারাসু ।

সাতটি জাল্লিকাট্টুতে অংশ নিয়ে রামু পাঁচটিতেই জয়ী হয়েছে। এমনকি ভক্তদের কাছ থেকে সিল্কের শাড়ি এবং স্বর্ণের মুদ্রাও পেয়েছে রামু।

কানাগারাসু আরও বলেন, রামু আমার কাছে ছেলের মতো। ও পুরস্কার জিতেছে। এর চেয়েও বড় বিষয় সে গ্রামে আমার পরিবারের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। এসময় তিনি মজা করে বলেন, ওর দেহ বড় হলেও রামু আমার খুব ‘পছন্দের’।

প্রায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ ষাড় প্রতিযোগিতায় মারা যায়। এসময় শত শত দর্শক আহত হয়েছে।

বিয়ের পরিবর্তে ষাড় পালন করার কানাগারাসুর সিদ্ধান্ত খুবই অস্বাভাবিক একটি ঘটনা। বিশেষ করে ভারতের গ্রাম্য এলাকায় এটা দেখা যায় না। তিনি বলেন, প্রথমে আমার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা রাগ করলেও পরে আমার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

ষাড় লড়াই আর দিনমজুরি করে খুব একটা আয় হয় না কানাগারাসুর। তার বাড়িতে একটি রান্নাঘর ও একটি মাত্র রুম রয়েছে। কানাগারাসু প্রতিদিন প্রায় ২শ রুপি আয় করেন। যেটির সিংহভাগই তিনি রামুর পেছনে ব্যয় করেন।

কারণ প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে রামুকে ভালো ভালো খাবার দিতে হয়। খড় এবং তুষ ছাড়াও নারিকেল, খেজুর, কলা, তিল, বাদাম, ভুট্টা ও ভাত খাওয়াতে হয় রামুকে।

এমনকি কানাগারাসুর মেন্যুতে পর্যন্ত এতো পুষ্টিকর খাবার নেই।

কানাগারাসু বলেন, এমনও দিন গেছে আমি একবেলা খাবার খেয়েছি যাতে রামু ঠিক মতো খেতে পারে। বিশেষ ডায়েট ছাড়াও এক্সারসাইজ করাতে হয় রামুকে।

রামুর এই ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখে অনেকেই তাকে কিনতে চেয়েছে। তবে কানাগারাসু এক লাখ রুপির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার এক আত্মীয় ইন্দিরা সেলভারাজ।

তিনি বলেন, কানাগারাসু ষাড়ের দেখভাল করার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। রামুকে খেলার জন্য প্রস্তুত করা কানাগারাসুর একমাত্র লক্ষ্য। আমরা ওই অর্থের প্রস্তাব মেনে নেয়ার ব্যাপারে কানাগারাসুকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছি। এখন আমরা বুঝতে পেরেছি কারও প্যাশনের কাছে অর্থের কোনো মূল্য নেই।

কানাগারাসু এখন তার ১৮ বছর বয়সী ভাতিজি দেবদর্শনীকে ট্রেনিং দিচ্ছেন। যাতে তিনি ফুপুর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে পারেন। তবে দেবদর্শনী ষাড় প্রতিযোগিতার জন্য সারা জীবন ব্যয় করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত না। এখন পর্যন্ত আমি এটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করিনি। আমি এখনও পড়াশোনা করছি। আমি আমার পরিবারের প্রথম গ্রাজুয়েট হতে চাই।

আরও পড়ুন:

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদ্মশ্রী নিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা  
ভারত-পাকিস্তান সিরিজ প্রসঙ্গে রোহিতের সঙ্গে সুর মেলালেন আফ্রিদি
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যেদিন আসতে পারেন ঢাকায়
ভারত সিরিজ থেকে বাদ পড়লেন আম্পায়ার তানভীর
X
Fresh