• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে হত্যায় হাত ছিল আমেরিকার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৩৮

আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। অভিযোগ উঠে আফগানদের দিয়ে মার্কিন মদদে এই হত্যার ছক কষা হয়েছিল। খবর কলকাতা টোয়েন্টিফোর।

১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির পৌরসভা পার্কে আয়োজিত এক সভায় লিয়াকত আলি খানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করার কথা ছিল। ওই সভামঞ্চ থেকে মাত্র ১৫ গজ দূরে থাকা আততায়ী সৈয়দ আকবর তাকে গুলি করে। তার বুকে দুটি গুলি লেগেছিল। তিনি নিহত হন। তাকে হত্যার কারণ আজও জানা যায়নি। যদিও অভিযোগ উঠে এর পেছনে আমেরিকার হাত রয়েছে।

অভিযোগ উঠে আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারকে ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। ওই হত্যাকাণ্ডের ৬৪ বছর পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত সে সময়কার গোপন নথিপত্র থেকে এই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়।

পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই নথির বরাত দিয়ে ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান টুডে জানিয়েছিল, পঞ্চাশের দশকে মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোকে ইরানে তেলের চুক্তি পাইয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিল আমেরিকা। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

শুধু প্রত্যাখ্যান নয় উল্টো পাকিস্তান থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরানোর দাবি জানিয়েছিলেন। তার এমন অনড় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যার পরিকল্পনা করে আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কিন্তু তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার মতো কাউকে জোগাড় করতে পারেনি তারা। সিআইএ তখন কৌশলগত কারণে আফগানিস্তানের দিকে নজর দেয়। পঞ্চাশের দশকে দেশ দুটির মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল তিক্ত। তখনও পাকিস্তানকে মেনে নেয়নি আফগানিস্তান। ফলে লিয়াকতকে হত্যায় এ তিক্ত সম্পর্ককে কাজে লাগায় ওয়াশিংটন।

তখন আফগান রাজা জহির শাহর কাছে একজন আততায়ী চান কাবুলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিনিময়ে পাকিস্তান ও আফগান সীমান্তের পাশতুনিস্তানকে স্বাধীনতার প্রস্তাব দেয়া হয়। কৌশলগত কারণে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান জহির শাহ এবং আততায়ী হিসেবে সৈয়দ আকবর নামের একজনকে নিয়োগ করেন তিনি। সিআইএর পরিকল্পনা অনুসারে লিয়াকত আলী খানকে হত্যা করার পর হত্যাকারী আকবরকে হত্যার জন্যও প্রস্তুত রাখা হয় আরো দুই জনকে। সেই মতো হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে রাওয়ালপিন্ডির একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিল ওই তিন হত্যাকারী।

হত্যাকাণ্ডের পর পরিকল্পনা মাফিক বাকি দুই জন ঘাতক আকবরকে গুলি করে মেরে ফেলে। একটু পর ওই দুজনও বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে মারা যায়। ফলে হত্যাকাণ্ডের সব তথ্য-প্রমাণ শেষ হয়ে যায় তখনই। হত্যার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বুলেট সাধারণভাবে পাকিস্তানের বাজারে পাওয়া যেত না। ওই ধরনের বুলেট পদস্থ মার্কিন কর্তারা ব্যবহার করেন বলেও জানানো হয়েছিল।

মৃত্যুর পর লিয়াকতকে শহীদ-এ-মিল্লাহ উপাধীতে ভূষিত করা হয়। রাওয়ালপিন্ডির যে উদ্যানে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নিহত হন, সে উদ্যানের নামকরণ করা হয় ‘লিয়াকত বাগ’। ঘটনাচক্রে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানকে হত্যার ৫৬ পর বছর ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর একই স্থানে পাকিস্তানের আরেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো আততায়ীর হামলায় নিহত হন।

এপি/জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh