• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

পড়তে বাধা দেয়ায় স্বামীকে তালাক কিশোরীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১৮ জুন ২০১৭, ২১:১৭

মাম্পি খাতুন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার মন্দিরবাজার এলাকার ১৬ বছরের এ কিশোরীকে পড়তে বাধা দেয়ায় নিজেই নিলেন সাহসী পদক্ষেপ। তালাক দিলেন স্বামীকে।

স্বামীকে তালাক দিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়ার পরে ওই কিশোরীর পরিবার এখন ব্যাপক সামাজিক চাপের মধ্যে পড়েছে।

কিশোরী মাম্পি জনসমক্ষে তার স্বামীকে তিন তালাক দিয়েছে, কারণ শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েটির পড়াশুনো নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলা হচ্ছিল।

মুসলমান সমাজের একাংশ মনে করছে পড়াশোনা না করতে দেয়ার বিরুদ্ধে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে যেভাবে সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে তা এক কথায় বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।

ওই তালাক ইসলাম সম্মত নয়, এটা বলেও শরীয়তী আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন- পড়াশোনা না করতে দেয়াটাকে স্বামীর নির্যাতন হিসাবে প্রমাণ করে ইসলামী আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদ চাইতেই পারে ওই কিশোরী।

মাম্পি খাতুনের ১৪ বছরেই বিয়ে দিয়েছিলেন তার বাবা সুরজুল ঘরামি। যদিও ভারতে ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে দেয়া বেআইনি।

চায়ের দোকান চালিয়ে সামান্য আয় করা বাবার সামনে তখনই সে প্রতিবাদ করেছিল, চেয়েছিল আরো পড়াশোনা করতে। সেই সময়ে নবম শ্রেণিতে পড়তো মাম্পি।

অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে মাম্পির পরিবার এবং হবু শ্বশুরবাড়ি রাজি হয়েছিল দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষাটা অন্তত তাকে দিতে দেয়া হবে।

এ বছর মাধ্যমিকে সন্তোষজনক ফল করে উত্তীর্ণ হয় মাম্পি। ভর্তি হয় জেলার একটি নামকরা স্কুলে। কিন্তু সে যখন আরো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আগ্রহ দেখায়, তখনই শুরু হয় অশান্তি।

মাম্পি উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য যে স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সেই কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, মাম্পি আমাদের স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই শ্বশুরবাড়ি ভীষণ চাপ দিতে শুরু করে। হুমকিও দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, ও শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতেই থাকছিল। মেয়ের পড়াশোনার জেদ দেখে আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চাপ দেখে প্রথমে বিরোধিতা করলেও সম্প্রতি বাবা-মায়ের সমর্থন পাচ্ছিল মাম্পি। দিন কয়েক আগে বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির মধ্যে মাম্পির পড়াশোনা নিয়ে অশান্তি গড়ায় ঝগড়া আর হাতাহাতির পর্যায়ে। হঠাৎই মাম্পি সেখানে উপস্থিত তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে পর পর তিনবার তালাক উচ্চারণ করে দেয়।

পড়াশোনা করতে চেয়ে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে কোনো নারী, এমন ঘটনা মাঝে মাঝে শোনা গেলেও কোনো মুসলিম কিশোরী উচ্চশিক্ষার জন্য জনসমক্ষে স্বামীকে তালাক দিয়েছে- এর নজির খুব একটা মনে করতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজ।

তবে একই সঙ্গে শরিয়তী আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, এইভাবে কোনো নারী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য নারীদের আলাদা পদ্ধতি রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও জামিয়ত-এ উলেমা-এ হিন্দের শীর্ষ নেতা মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, মেয়েটি পড়াশোনার ব্যাপারে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়ে ওই কথা বলেছে। কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী মহিলারা তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। কিন্তু বিচ্ছেদের প্রশ্ন যদি কোনো মহিলার দিক থেকে ওঠে, তাকে মাহকামা শরীয়া বা এ ধরনের যেসব প্রতিষ্ঠানে ইসলামি বিধি-বিধান দেয়া হয়, সেখানে দরখাস্ত করতে হবে। দু্'পক্ষ মুখোমুখি বসবে, দরখাস্ত খতিয়ে দেখা হবে, তারপরেই বিচ্ছেদ হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, স্বামী নিরুদ্দেশ হলে, অথবা পুরুষত্বহীন বা মানসিক রোগগ্রস্ত হলে কিংবা খোরপোষ দেন না, নির্যাতন করেন - এসব ক্ষেত্রে মুসলমান নারী আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদ পেতে পারেন। পড়াশোনা না করতে দেয়াটাকে স্বামীর নির্যাতনের প্রমাণ হিসাবে দেখিয়ে হয়তো মেয়েটি বিচ্ছেদ চাইতে পারতো।

মাম্পি যে দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আরো পড়াশোনা করতে চেয়ে সামাজিক চাপের মধ্যে পড়েছে, সেই পরীক্ষায় এ বছরই রাজ্যে ১৭ নম্বর স্থান অধিকার করেছে এক মুসলমান ছাত্রী রুমানা। ওই পরীক্ষায় প্রতিবছরই ক্রমবর্ধমান হারে মুসলমান ছাত্রছাত্রীরা ভালো রেজাল্ট করছে।

এপি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh