• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

নওগাঁর নিয়ামতপুরে 'অজানা' রোগে ৯ জনের মৃত্যু

এম আর রকি, নওগাঁ

  ১৭ জুন ২০১৭, ১৯:৫৬

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার পারইল ইউনিয়নের একটি গ্রাম কৃষ্ণশাইল। এ গ্রাম এখন 'মৃত্যুগ্রাম' নামেই বেশি পরিচিত। গেলো দু'বছরে এখানে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ রোগে আরো ৯ জন দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগটি জ্বিনগত সমস্যা। এ রোগের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।

জানা গেছে, নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষ্ণশাইল গ্রামের ঈমান আলী। ঈমান আলীর একমাত্র মেয়ে রহিমন খাতুন। রহিমনকে বিয়ে দিয়ে জামাই-মেয়েকে বাড়িতেই রেখে দেন ঈমান আলী।

হঠাৎ একদিন অজানা এক রোগ আক্রান্ত হন তিনি। বয়স তখন তার ৬৮ বছর। ধীরে ধীরো তার হাত-পা পঙ্গু হয়ে যায়।

দীর্ঘ ৪ বছর সেই রোগে ভোগার পর তিনি মারা যান।

একইভাবে রহিমনও ৬২ বছর বয়সে সেই অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ভোগার পর তিনিও মারা যান। রহিমনের ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে এরই মধ্যে এই অজানা রোগে আক্রান্ত মারা গেছেন। এই ৭ সন্তানের সন্তানাদির ৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগে।

মৃতরা হলেন- রহিমন খাতুনের ৩ ছেলে আমির (৬২), সমির (৫৮), সিরাজুল ইসলাম (৫২) এবং ১ মেয়ে নেকজান বিবি (৫০)। নেকজান বিবির ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৭), সিরাজুল ইসলামের মেয়ে তারামন বিবি (২৫)।

আক্রান্তরা হলেন- মোসলেমা বিবি, লাইলী, মজিদুল, শাবান, শবিফুন বিবি, শরীফুল, স্বপ্নাসহ ৯ জন।

মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম জানান, যাদের বয়স ৬০-৬৫ তারাই এই রোগে আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন ২০-২৫ বয়সের মানুষরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।

এই রোগে আক্রান্তরা বছর দুই-একের মধ্যেই মারা যান।

যোগান বিবি জানান, এই রোগে আক্রান্ত এই বংশের লোকদের সমাজে চলতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ঢাকাতে চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্তরা ভালো হয়নি।

রোগে আক্রান্ত শরিফুন বিবি জানান, ২ বছর আগেও ভালো ছিলেন শরিফুন বিবি। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন তার চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। শরীরে ব্যাথায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

পরিবারের অন্যদের হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

রহিমনের ছেলে গিয়াস উদ্দিন জানান, তার মা রহিমনের গর্ভে জন্ম নেয়া ৭ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে এই রোগে আক্রান্তে মারা গেছে। তিনি বর্তমানে ভালো আছেন। রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়েছে। চিকিৎসায় হাজার হাজার টাকা খরচ হলেও এখন পর্যন্ত কেউ ভালো হয়নি। এখন পর্যন্ত বংশগতভাবে ৮ জন মারা গেছে। তার ৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। তিনিসহ বাকিরাও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

সোহেল রানা জানান, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে তার চোখের পাতা, হাত-পায়ের আঙ্গুল লাফাতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্তরা বছর দু'য়েকের মধ্যে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে যান। কিছুই করতে পারেন না।

সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা খানম আরটিভি অনলাইনকে জানান, চিকিৎসকদের ভাষায় জ্বিনগত বা বংশগত রোগ বলা হয়। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা করা হলেও এখন পর্যন্ত এই রোগের প্রতিষেধক তৈরী না হওয়ায় এই রোগে আক্রান্তদের ভালো হবার সম্ভবনা নেই।

তিনি আরো বলেন, নিজেদের (বংশের) মধ্যে বিয়ে হওয়ায় এই রোগ হয়েছে। অন্য বংশের সাথে বিয়ে হলে ধীরে ধীরে তাদের এই রোগ ভালো হবার সম্ভবনা রয়েছে।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • রোগব্যাধি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh