• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকের অতি মুনাফা, কমছে গ্রাহক

মিথুন চৌধুরী

  ১৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪০

দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তবে কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা না বেড়ে উল্টো প্রতিনিয়ত কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, প্রতিমাসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার ব্যবহারকারী কার্ড জমা দিচ্ছেন ব্যাংকগুলোতে। ব্যাংকের অতিরিক্ত ও হিডেন সুদের কারণে ক্রেডিট কার্ডের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ কমছে।

ব্যবহারকারীর পরিমাণ কমার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটিং প্রতিনিধিদের অনুরোধ ও বিজ্ঞাপণ অফারে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক হবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন অনেকে। বহির্বিশ্বের অনেক দেশে ক্রেডিট কার্ডের ওপর সুদারোপ করা না হলেও বাংলাদেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ সুদ ধরা হয়। তবে ৪৫ দিন পর্যন্ত ক্রেডিট বা ঋণ নেয়া টাকার ওপর কোনো সুদ দিতে হয় না। এরপর পরিশোধ করতে গেলে বার্ষিক ৩০ শতাংশ হারে সুদ কাটা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, দেশে ২৫টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ২২টি আর বিদেশি বাকি ৩টি। এগুলো হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ও ব্যাংক আল ফালাহ্। এসব ব্যাংকের সুদের হার ১৮ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত।

ক্রেডিট কার্ডের ওপর দেশীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কমার্স, যমুনা ও ডাচ-বাংলার সুদ হার ১৮ শতাংশ । এইচএসবিসির সুদ হার ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ব্যাংক আল ফালাহ্’র সুদ হার ২১ থেকে ২৪ শতাংশ। জনতা, ঢাকা, আইএফআইসি, স্ট্যান্ডার্ড ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকের সুদ হার ২৪ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের সুদ ২৭, ব্র্যাক ব্যাংকের ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ২৮ এবং ওয়ান ব্যাংকের ২৮ দশমিক ৫০ থেকে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ১৩টি ব্যাংক সুদ নিচ্ছে ৩০ শতাংশ। সেগুলো হচ্ছে এবি, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন (ইবিএল), এক্সিম, মিডল্যান্ড, প্রিমিয়ার, মার্কেন্টাইল, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, ফারমার্স, সাউথ বাংলা, শাহজালাল ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এর বাইরে ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশ সুদ নিচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। আর দি সিটি ব্যাংকের সুদ হার ৩৬ শতাংশ।

জানা যায়, এক পয়সা লিমিট ক্রস করলে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা ওভার লিমিট ফি , আবার লাস্ট ডেট ছুটির দিন হলে লেট পেমেন্ট ফি, হিডেন চার্জ গুণতে হয় গ্রাহকদের। আর বেশি সুদ হারের পাশাপাশি এসব বাড়তি চাহিদা দূর করতে ক্রেডিট কার্ড নেয় না গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করা মানেই ফাঁদে পা দেয়া। লোন নিয়ে বাজার করলেই দিতে হয় প্রায় দিগুণ। মাত্রাতিরিক্ত সুদের পাশাপাশি ডলারের রেট নিয়েও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ অভিযোগ। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যারা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করেন তারা ব্যাংকে বিল পরিশোধ করতে গেলে ডলারের বাজার রেটের চেয়ে দেড় থেকে দু’টাকা বেশি দরে পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর দেয়া নিজস্ব রেটে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ব্যাংকগুলোকে ডলারে অর্থ পরিশোধ করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ডের ঋণে নাকাল অনেকে দ্বারস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। অভিযোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগে। তবে এ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেনে-শুনে, বুঝে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত। অজ্ঞতার কারণে অনেকে ঋণের পরিমাণ বেশি করে ফেলে। আর এ অজ্ঞতার সুযোগে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছে। এ বিষয়ে গ্রাহকদের সর্তক হবার পরার্মশ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্র জানায়, সাধারণত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী বা অন্য পেশাজীবী; যাদের ভালো আয় আছে এবং যারা বৈধ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন), তারাই ক্রেডিট কার্ড পাবার জন্য আবেদন করতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, একটি ক্রেডিট কার্ডের লিমিট বা টাকা খরচ করার সর্বোচ্চ সীমা ৫ লাখ টাকা। গ্রাহকের মাসিক আয়ের ভিত্তিতে এ সীমা নির্ধারিত হয়। ভিসা ও মাস্টার কার্ডের প্লাটিনামের বার্ষিক ফি সাড়ে ৪ হাজার টাকা, গোল্ড কার্ড আড়াই হাজার টাকা এবং ক্লাসিক বা সিলভার কার্ড দেড় হাজার টাকা। ক্রেডিট কার্ডে নগদ টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বা ১৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ কাটা হয়। ডলারে অর্থ নিলে ৩ শতাংশ বা ৫ ডলার চার্জ লাগে। সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করলে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ৫ থেকে ১৫ ডলার জরিমানা কাটে ব্যাংক। উল্লিখিত ফি একেক ব্যাংক একেকভাবে কাটে।

এমসি/ডিএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh