সপ্তাহব্যাপী টানা ঘুমে ফাঁকা রাজধানী
২৭ এপ্রিল থেকে ৫ মের মধ্যে মাত্র দুই দিন অফিস খোলা। শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, ২৯ এপ্রিল রবিবার বুদ্ধপূর্ণিমার সরকারি ছুটিতে অন্যান্য অফিস খোলা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ৩০ এপ্রিল সোমবার অফিস খোলা। ১ মে মঙ্গলবার মহান মে দিবস। পরদিন ২ মে বুধবার পবিত্র শবে বরাতের ছুটি। ৩ মে বৃহস্পতিবার অফিস খোলা। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। বাকি দুদিনও (৩০ এপ্রিল-৩ মে) ছুটি নিয়ে তারা পেয়ে ঈদের মতো লম্বা ছুটি (টানা ৯ দিন)।
এমন টানা ছুটিতে অনেকটাই বদলে গেছে যান্ত্রিক ঢাকার চিত্র। প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানীর পরিবহন চলাচলের রাস্তাগুলো। রাস্তায় নেই গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত পরিবহনের আধিক্য। নেই যাত্রীবাহী পরিবহনে ওঠার কোনো ঝক্কিঝামেলা।
অফিস বন্ধ থাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন বাসাবাড়িতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসাবাড়ি ও গলি (বাসার নিচের রাস্তা) থেকেই বের হয়নি অধিকাংশ স্কুলপড়ুয়ারা। এতে রাজধানীতে ঈদের ছুটি কাটাননি এমন যে কেউ অবাক হতে পারেন রাস্তার চিত্র দেখে।
বুধবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। রাজধানীর কোথাও দেখা মেলেনি যানজটের। এমনকি যানজটপ্রবণ মোড়গুলোতেও (সিগন্যাল পয়েন্ট) ব্যক্তিগত অথবা গণপরিবহনে অলস সময় কাটাতে হচ্ছে না।
প্রতিটি রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে হাতেগোনা কিছু গাড়ি। আর যাত্রীর আধিক্য না থাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনও চলাচল করছে হাল্কা পাতলা। বন্ধ রয়েছে ব্যাংক-বীমা, শেয়ারবাজারের কার্যক্রম। কোনো কোনো স্থানে রাস্তায় নেমে ক্রিকেট খেলতে দেখা গেছে স্কুলপড়ুয়াদের।
বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা যায়, যে পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের অনেকটা লড়াই করতে উঠতে হতো সে পরিবহনগুলোতেই অত্যন্ত স্বচ্ছন্দে উঠছেন যাত্রীরা। পরিবহনে উঠতে ধাক্কাধাক্কি, দৌড়াদৌড়ি কিছুই করতে হচ্ছে না। স্টপেজে (বাস থামার স্থান) বাস এলেই সহজে উঠে যাচ্ছেন যাত্রীরা। কোথাও কোথাও হাতের ইশারাই বাস থামিয়ে উঠছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর, মুগদা, কমলাপুর, মিরপুর, ধানম-ি ও মোহাম্মদপুরসহ সব রুটেই যানজটহীন পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিন এই রুটগুলোতে বাসের যেমন ভিড় থাকে মঙ্গলবার তা দেখা যায়নি। ট্রাফিক মোড়গুলোতে পরিবহন নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো প্রয়োজন পড়েনি। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারীরা অনেকটাই অলস সময় কাটান।
ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল, শাহবাগ ও মৎস্য ভবন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার প্রতিটি রুটে স্বল্পসংখ্যক গণ ও ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল করছে। পরিবহনের আধিক্য না থাকায় কোথাও কোনো যানজট দেখা যায়নি।
রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক এলাকায় স্বাভাবিক কর্মদিবসে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। পরিবহনে উঠতে বড় ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। কিন্তু মঙ্গলবার যানজটের কোনো চিত্রই দেখা যায়নি। পরিবহনগুলোতেও কোনো ভিড় নেই। পরিবহনের আধিক্য না থাকায় ট্রাফিক পুলিশদের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকার পরিবহন চলাচল রুটগুলোতে যানজট স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতিটি সিগন্যাল পয়েন্টেই সব ধরনের পরিবহন যানজটে আটকে থাকা। তবে মঙ্গলবার এর কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি। রাস্তা প্রায় ফাঁকা বললেই চলে।
এদিকে রাজধানীর চিরাচরিত যানজট না দেখে বেশ খুশি ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইডমুক্ত ভেজালহীন অক্সিজেন পেতে অনেকেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন বিভিন্ন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে। কর্মদিবসে ব্যস্ত থাকা অনেক রাস্তায় স্কুলপড়ুয়ারা ব্যাট-বল নিয়ে মেতে উঠেছেন ক্রিকেট খেলায়।
মতিঝিলের দিলকুশায় কথা হয় আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র রাফাত হাসানের সঙ্গে। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিটেক খেলায় ব্যস্ত এ স্কুলপড়ুয়া বলেন, স্কুল ছুটি। রাস্তায় তেমন কোনো পরিবহন চলাচল করছে না। তাই বন্ধুরা মিলে খেলতে চলে এসেছে। ছুটির দিনে খেললে আব্বু-আম্মু নিষেধ করে না। আব্বু-আম্মুর অনুমতি নিয়েই খেলতে এসেছে।
গুলিস্তান থেকে সুপ্রভাত গাড়ির চালক মো. মাসুদ বলেন, তারা গাজীপুর-সদরঘাট রুটে চলাচল করেন। এই রুটের প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রতিনিয়ত দীর্ঘ যানটজ লেগেই থাকে। ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে এক ঘণ্টার ওপরেও লেগে যায়। কিন্তু এদিন গাজীপুর থেকে আসার পথে কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। রাস্তা এমন ফাঁকা থাকলে গাড়ি চালিয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। যাত্রী কম হলেও কারও সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে হয় না। যাত্রীরাও আরামে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন, তারাও ঝামেলামুক্ত গাড়ি চালাচ্ছেন।
এসজে
মন্তব্য করুন