• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এতো ‘দুর্বল’ কেন?

সিয়াম সারোয়ার জামিল, আরটিভি অনলাইন

  ১৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৩০

দেশে মোট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৩৪০টি। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর বড় অংকের বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু বিদ্যালয়গুলোতে আশানুরূপ শিক্ষার্থী মিলছে না। সরকারি স্কুলগুলোর চেয়ে বেসরকারি স্কুলকেই বেশি পছন্দ করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, সরকারি স্কুলগুলো বেসরকারি স্কুলগুলোর চেয়ে দুর্বল। কিন্তু কেন এই অবস্থা?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সরকারি স্কুলগুলো ভয়াবহ সংকটাবস্থা চলছে। সরকারি স্কুলের প্রতি শিক্ষককে দু'জনের সমান শ্রম দিতে হচ্ছে, নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস, দেখতে হচ্ছে অতিরিক্ত খাতা। এতে শিক্ষাদানের মান ক্রমশই কমে যাচ্ছে। আবার শিক্ষকদের অনেকেই চেষ্টা-তদবির করছেন এ বিদ্যালয় থেকে ঢাকার স্কুলে বদলি হতে।

অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় সুনাম এবং আস্থা হারিয়ে ফেলেছে সরকারি বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তীব্র শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার মান রক্ষা করে পাঠদানে ব্যর্থ হচ্ছে এসব স্কুল। এক সময়ের খ্যাতনামা জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্কুলও রয়েছে এগুলোর মধ্যে। এসব স্কুলের শিক্ষক পদায়নেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। তাছাড়া স্কুলগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও নেই। ফলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আস্থা হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, এসব স্কুলে শিক্ষক সংকট বড় আকার ধারণ করেছে। টানা সাত বছর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল। গত বছর থেকে তা আবার শুরু হয়েছে। এই সাত বছরে মৃত্যু অথবা অবসরজনিত কারণে প্রায় দুই হাজার ৮৭৫টি শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে।

জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে কারিকুলাম ও সিলেবাস পরিবর্তনের কারণে বিদ্যালয়গুলোতে গত সাত বছরে চারটি নতুন বিষয় চালু হয়েছে। এগুলো হলো- তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা। এসব ক্ষেত্রেও কোনো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নেই। এক বিষয়ের শিক্ষক পড়াচ্ছেন অন্য বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির মতো মৌলিক ও বিশেষ বিষয়ও পড়ানো হচ্ছে অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে। আবার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ানের পদ থাকলেও সরকারি বিদ্যালয়ে এ পদটি এখনও সৃষ্টি করা হয়নি।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রচুর পদ শূন্য রয়েছে। তারা সরাসরি বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য পিএসসিতে অনুরোধ করেছেন। এর আগে ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ শিক্ষক নিয়োগ করা গেছে।

তিনি বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে মামলা জটিলতার কারণে শিক্ষকদের পদোন্নতি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এ সময় সারাদেশে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এখন তারা পদোন্নতি দেয়ার কার্যক্রম সব শেষ করেছেন। পদোন্নতি দেয়া গেলে শিক্ষক শূন্যতা অনেক পূরণ হবে।

অভিভাবকদের আস্থা হারানো সম্পর্কে তিনি বলেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। স্কুলগুলোর মান ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সবসময় তো সবকিছু দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিছু ঘাটতি তো থাকবেই।

মাউশির মাধ্যমিক শাখার তথ্য মতে, ৩৪০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ ১৭১টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৭টি। প্রধান শিক্ষিকার ১৪৮টি পদের ৭৪টিই শূন্য। জেলা শিক্ষা অফিসার (প্রধান শিক্ষকের সমমান) পদের ৬৪টির মধ্যে ২৪টিই খালি। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ২৪৮টি পদের মধ্যে ২৪২টিই শূন্য। সহকারী প্রধান শিক্ষিকার ২১৬টি পদের মধ্যে ২১৫টিই শূন্য। আর সহকারী শিক্ষকের ১০ হাজার ৩৫০টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে দুই হাজার ২৬৩টি।

বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ইনছান আলী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একে তো ২০১২ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল, তার ওপরে বিভিন্ন সময়ে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নতুন বিষয় পড়ানো হচ্ছে অথচ সে জন্য নতুন নিয়োগ নেই! এতে জগাখিচুড়ি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোয় শূন্য পদ না থাকলেও গ্রামের স্কুলে শূন্য পদ তুলনামূলকভাবে বেশি।’

মাউশি জানায়, ৩৪০টি সরকারি হাইস্কুলের মধ্যে ১৪৩টি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি হয়নি তিন দশকেও! এরশাদ সরকারের আমলে বেসরকারি স্কুল থেকে জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোও এর মধ্যে রয়েছে। পদবিন্যাস অনুসারে, সরকারি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষক থাকার কথা। ডাবল শিফট বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকবেন ৫০ জন। অথচ এই ১৪৩টি বিদ্যালয় তিন দশক আগের সেই ১১ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে। নতুন করে পদ সৃষ্টি না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম রীতিমতো ধুঁকছে। অথচ পুরনো ও প্রতিষ্ঠিত এসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী বেড়েছে আরও কয়েক গুণ।

রাজধানীর উত্তরা অভিভাবক সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী কায়সার রিজভী কান্তা বলছেন, পদ সৃষ্টি না হলে কখনোই সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়বে না। একইভাবে উপজেলা সদরের কোনো সরকারি হাইস্কুলেই পদ সৃষ্টি করা হয়নি। পুরনো কাঠামোতেই চলছে এসব বিদ্যালয়।

এসজে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh