নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধননামা-৪
ইসলামিতে ড্রাইভার, কংগ্রেসে সংসার
মফস্বল শহর দূরে থাক, খোদ রাজধানীতেই সচল কোনো কার্যালয় নেই। নির্বাচন কমিশনের আবেদনে যেসব ঠিকানা লেখা রয়েছে, সেসব ঠিকানায় পাওয়া গেছে ভিন্নচিত্র। কারও অফিসে থাকেন ড্রাইভার, কারও অফিসে আছে স্ত্রী-সন্তানসহ সংসার। আরটিভি অনলাইনের সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া ৭৬টি দলের অনেকেরই অবস্থা এমন। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, নিজস্ব অনুসন্ধান অথবা গোয়েন্দা তথ্যে এমন কিছু পাওয়া গেলে দেয়া হবে না নিবন্ধন।
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ‘নাকফুল বাংলাদেশ’ নামের একটি দল পাওয়া গেছে। দলটির ২৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা দলটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের ১০ম তলার যে কক্ষটিকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি একটি টেক্সটাইলের বায়িং হাউজ হিসেবে পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাকফুল বাংলাদেশের সভাপতি স্বপন রেজা জানিয়েছেন, তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। যে কার্যালয়টি অফিস হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি তার কোষাধ্যক্ষের অফিসে। পেশায় সরকারি কর্মচারী স্বপন থাকেন দিনাজপুরে। তিনি স্থানীয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কাজ করেন। তার শখ মূলত গান গাওয়া। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই নারী।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আছে কয়েকটি দলের কার্যালয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামি পার্টি অন্যতম। দলটির অফিস যে ভবনে সেখানে আশপাশে দোকান আর ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। দুটি কক্ষের একটিতে দলের চেয়ারম্যান বসেন, অন্যটিতে একজন কম্পিউটার অপারেটর ও ড্রাইভার থাকেন। তারা দুজনেই সেখানে বসবাস করেন। দলটির চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অফিসকে মডার্ন করার পরিকল্পনা আছে। আপাতত এখান থেকেই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস-বিজেসি’ নামে একটি নতুন দলের কার্যালয় দেখানো হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার আবাসিক ভবন বিজয় সরণি টাওয়ারে। যে ঠিকানাটি কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটি আসলে ফ্ল্যাটবাসা। বাড়িটি আবাসিক ভবন হিসেবেই পরিচিত। দলটির সভাপতি প্রকৌশলী আবুল হোসেন। তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক মাসুদ শেখ আরটিভি অনলাইনকে জানান, বাসায় কোনো রাজনৈতিক কার্যালয় আছে এমনটা তিনি জানেন না। এ ভবনে কোনো রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ জনতা পার্টি দুটি ঠিকানা উল্লেখ করেছে। প্রধান কার্যালয় হিসেবে ইস্কাটন রোডের যে ঠিকানাটি কার্যালয় হিসেবে বলা হচ্ছে। সেখানে একটি সাইনবোর্ডও পাওয়া যায়নি। ‘বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন’ নামে একটি দলের নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে। দলটি নিবন্ধনের আবেদন করেছে হাক্কানি মিশন। মিরপুরের মিশন কার্যালয়কেই তারা দলীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে কার্যালয় নিয়ে দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ ভবনটিতে বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টি নামে একটি দলের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে আম জনতা খেলাফত পার্টি (এজেকেপি) ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জোট নামে আরও দুটি রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড পাওয়া গেছে। তবে কার্যালয় বন্ধ থাকায় কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ফোন দিলেও দায়িত্বশীল কেউ ধরেননি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, নিবন্ধন দেয়ার আগে সব দলের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নেয়া হবে। গোয়েন্দা রিপোর্টও বিবেচনায় নেয়া হবে। যদি নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূর্ণ করে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করে, মাঠ পর্যায়ের তদন্তে যদি কোনো অভিযোগ না পাওয়া যায়, তবে নিবন্ধন দেয়া হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
- নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধননামা-১, কারো চালান নেই, কারো আলান নেই
- নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধননামা-২, ট্রাম্পকার্ড নয়, রেটকার্ড হতে চায় ওরা
- নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধননামা-৩, ১১ দলের আবেদনে ধর্মীয় রাজনীতির বীজ
এসজে/সি
মন্তব্য করুন