• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পড়তে চায় মঞ্জুরনগরের শিশুরা

মো. আল আমিন টিটু, ভৈরব

  ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ১৪:১১

তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে যখন তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তখন বসতি স্থাপনের ২৩ বছর পরেও প্রাথমিক শিক্ষাসহ আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি মঞ্জুরনগর নামের এক লোকালয়ে। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু মঞ্জুরনগরে আজও প্রতিষ্ঠা হয়নি কোনো প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে মেঘনার পাড়ে গড়ে ওঠা এই মঞ্জুরনগরের শিশু-কিশোররা এখনো রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখনো যাদের বর্ষায় ‘নাও’ আর গ্রীষ্মে ‘পাও’ই ভরসা। এমনি এক স্থানের সন্ধান মিলেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জোয়ানশাহী হাওরের বুকে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের দিকে সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের মঞ্জুর আলী মেঘনা পারের জোয়ানশাহী হাওরের বুকে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। দুই বছর পরে আরো ১০টি পরিবার বসতি স্থাপন করেন। ফলে প্রথম দিকে কিছুটা ভয়ভীতি ও চোর-ডাকাত আতঙ্কে বসবাস করলেও দিন দিন বসতি স্থাপন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বেশ আরামেই দিন যাপন শুরু করেন।

আর এই বসতির নাম লোকজনের মুখে ‘মঞ্জুরনগর’ হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে আশপাশের আগানগর ও শ্রীনগর এ দুটি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে অন্তত ৩০টি পরিবার নতুন করে বসবাস শুরু করেছেন। ফলে কোলাহল থেকে দূরে মুক্ত আকাশের নিচে স্নিগ্ধ কোমল বাতাসের মুখে মেঘনার পারে গড়ে ওঠা মঞ্জুরনগরের মোট পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৯০টির বেশি। জনসংখ্যা অন্তত ৫শ’। যার অর্ধেকের বেশি কোমলমতি শিশু-কিশোর।

তাছাড়া ভৈরবকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করলেও বৈদ্যুতিক বাতির আলো দেখেনি তারা। ফলে এখনো বিদ্যুতবিহীন এই নগর। এই নগরে জন্ম শিশু সজিব মিয়া, সুমাইয়া, রেফাত উল্লাহ ও মাহবুব রহমানের। তাদের সবার বয়স আটের ওপরে। আবার কারও বয়স দশের কিছু বেশি। তারা কেউ লেখাপড়া করে না। তাছাড়া এই বসতি থেকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে স্কুল থাকলেও কেউ যেতে চায় না। তাই বাবা-মাও তাদের সন্তানদের কিছু বলতে পারেন না। ফলে দিন দিন শিশু-কিশোররা তাদের শিক্ষা গ্রহণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।

মাহবুব রহমান নামে এক শিশু জানায়, পড়তে চাই। কিন্তু বাড়ির কাছে কোনো স্কুল নাই। তাই খুব খারাপ লাগে।

আরেক শিশু সুমাইয়া জানায়, তার খালাতো বোন সুমি ক্লাস চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সে এবার পুরস্কার পেয়েছে। তারও পুরস্কার পেতে ইচ্ছে করে।

এই মঞ্জুরনগরে এখনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক। তাদেরই একজন হেলিম মিয়া।

তিনি বলেন, আমরা পড়ালেখা না করার কারণে দুই চোখ থাকতে অন্ধ। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখুক। তাই আমাদের দাবি সরকার আমাদের এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে সন্তানদের পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেয়।

এ ব্যাপারে সাদেকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জাল হক আরটিভি অনলাইনকে জানান, মঞ্জুরনগর সাদেকপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি বসতি। তারা সবাই ২নং ওয়ার্ডের ভোটার। গেল ২০১৪ সালে ‘স্কুলবিহীন গ্রামে স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের জায়গা (ভূমি) দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে অঙ্গীকারনামা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।

জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বিষয়টি জেনে আমি এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগযোগ করেছি। এরইমধ্যে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে ও পাঠদানে একটি প্রাক-প্রাথমিক স্কুল স্থাপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশা করছি এই নতুন বছরে শিশুরা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নতুন জীবনে প্রবেশ করবে এবং মঞ্জুরনগরকে তারাই আলোকিত করবে।

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গরমে শিশুর যত্নে যা করবেন
শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা, সৎ মায়ের যাবজ্জীবন
ডাকাতিয়া নদীতে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ উদ্ধার 
তাপপ্রবাহে ‘অতি উচ্চঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ
X
Fresh