গাড়ির চাকা ঘুরলেই দিতে হয় চাঁদা!
গাড়ির চাকা ঘুরলেই দিতে হয় চাঁদা। আর এই চাঁদাবাজির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঢাকার বাস টার্মিনাল ও প্রধান প্রবেশপথগুলো। নামে-বেনামে আদায় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
এই অসৎ কাজে মালিক সমিতি, শ্রমিক সমিতি, ওয়ে বিল, স্থানীয় মাস্তানরাতো আছেই-সেইসঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যরাও। ফলে বাড়তি টাকার মাশুল গুণতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ছোট-বড় ভেদে একেক পরিবহনে চাঁদার পরিমাণ একেক রকম। এই চাঁদা দিতে গিয়ে পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যেমন নাভিশ্বাস উঠছে। ঠিক তেমনি এই বাড়তি টাকা তোলে আনতে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়তই হয়রানি করছে গাড়ির চালক ও হেলপাররা। এমনকি বাড়তি ভাড়া আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সরজমিনে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল হতে না হতেই চাঁদাবাজরা তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের হাত থেকে রেহায় পায় না ছোট-বড় কোনো পরিবহনই। ৭ ও ৮ নম্বর রুটের লক্কড়-ঝক্কড় লোকাল বাস থেকেও আদায় করা হচ্ছে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
এছাড়া ওয়েবিলের নামে প্রভাবশালী বাস কোম্পানিগুলো প্রতিদিন বাস প্রতি নিচ্ছে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা।
কিন্তু কেন এত টাকার বিল। কোথায় জমা হয় এ বিপুল পরিমাণ টাকা?
অনুসন্ধানে নামে আরটিভি সংবাদ দল। হাতে আসে চাঁদা তোলার খসড়া তালিকা। সে তালিকায় দেখা যায় শুকতারা, ভিলেজ, পদ্মা ও যাত্রীসেবা, এনএনবি, এসবি লিংক, এই পাঁচটি বাস সার্ভিস থেকেই মাসে আদায় করা হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা।
এছাড়া নগরীর অভ্যন্তরে চলাচল করা বাসগুলোকে ওয়ে বিলের পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনগুলোকে আলাদা চাঁদা দিতে হয়। আছে সে তালিকাও।
সব মিলে গাবতলির পাঁচটি ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বাস কোম্পানিগুলোকে প্রতিমাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয়।
এর সঙ্গে ট্রাক, লেগুনা ও চারটি টার্মিনালের চাঁদার হিসেব যোগ করলে অংকটি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল কমিটির সেক্রেটারি মো. আক্তার হোসেন জানান, প্রতিদিন সব বাস থেকে চাঁদা উঠানো হয় না। কিছু কিছু বাস থেকে উঠানো হয়। কিন্তু কেন এই চাঁদা তোলা হচ্ছে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারেননি তিনি।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নতুন কিছু নয়। আরটিভিতে প্রচার হওয়া ২০১৫ সালের দৃশ্য আর বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে পার্থক্য নেই বললেই চলে। বেপরোয়া এসব চাঁদাবাজির কারণে নিজের মুনাফা ঠিক রাখতে মালিকরা নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া।
পরিবহন খাতে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর প্রমাণ মেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও যখন প্রকাশ্যে এমন টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মো. মাহবুব-ই রাব্বানী জানান, পরিবহন খাতের এসব অনিয়ম দেখার দায়িত্ব পুলিশের।
এছাড়া গাবতলীতে রাতের লাঠিয়াল বাহিনীর দৌরাত্ম আছে আগের মতোই। মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রায় প্রকাশ্যেই চলছে চাঁদাবাজি।
আরকে/জেবি
মন্তব্য করুন