• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এসির ব্যবহার বাড়ায় পরিবেশ-স্বাস্থ্যগত সমস্যা বাড়ছে (ভিডিও)

আতিকা রহমান

  ২০ জুলাই ২০১৭, ১৬:২৬

ঢাকায় শপিংমল, বাণিজ্যিক ভবন ও বাসাবাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার-এসির ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এতে ভবন ঠাণ্ডা থাকলেও বাইরের তাপমাত্রা বাড়ছে। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। বাড়ছে মানুষের রোগ, কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

এসি ব্যবহারকারীদের একজন বললেন, আগে একটা রুমে এসি থাকতো। আমরা সবাই ওই রুমেই ঘুমাতাম। কিন্তু এখন প্রতিটি রুমেই এসি লাগানো হচ্ছে। কিছু করার নেই। এসির প্রতি আমাদের এতো বেশি ইন্টারেস্ট ছিল না। কিন্তু আমার মেয়ে এসি ছাড়া থাকতে পারে না।

আরেকজন বললেন, আমরা যদি গাছ লাগানোর জন্য একটু হলেও সময় দিই, তাহলে ঢাকার জন্য অনেক ভালো হবে।

তবে ঘরে ঠাণ্ডা বাইরে গরম, এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হচ্ছে অস্বস্তিকর অবস্থাও। এ প্রসঙ্গে একজন বললেন, এসির জন্য হয়তো রুমের মধ্যে ঠাণ্ডা অনুভব করছি। কিন্তু রুম থেকে বের হলেই তো সেই গরম।

আরেকজন বললেন, সামনে-পেছনে ও চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রেখেই প্রতিটা উঁচু ভবন নির্মাণ করা উচিত। এছাড়া ছাদে গাছ লাগাতে হবে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বললেন, আমরা গেলো বছর একটা জরিপ করেছি ঢাকা শহরে। তাতে দেখা গেছে, ধানমন্ডিতে যেহেতু লেক আছে ও এর পাশে গাছপালা আছে, সেহেতু এখানে যে পরিমাণ তাপমাত্রা পল্টনে তার চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশি একই সময়ে।

বাংলাদেশ পরিবেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি’র প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বললেন, এসির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা, ওজন লেয়ার ডিপ্লিশন বাড়ছে। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরাও অবদান রাখছি। ফলে জাতীয়ভাবে দোষী হবার পাশাপাশি আমরা বৈশ্বিকভাবেও দোষী হয়ে পড়বো।

কৃত্রিম কোনো সমাধানই আসলে সমাধান না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, আমরা পয়সা খরচ করে, বিদ্যুৎ অপচয় করে মানুষকে গরম বাতাস উপহার দিচ্ছি আমার বড়লোকি প্রমাণ করার জন্য। প্রকৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আমরা আর্টিফিশিয়াল কিছু সিচুয়েশন ক্রিয়েট করছি। আর সেটার ভোগান্তিতে আমাদেরকেই ভুগতে হচ্ছে।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’র সদস্য ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ঘরের ভেতরে ও বাইরের আর্দ্রতা দ্বারা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে প্রভাবিত। এসির কারণে একটি ভারসাম্যহীন আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষ নিজের জীবনটাকে আনন্দদায়ক ও আরামদায়ক করার জন্য এসি ব্যবহার করছে। কিন্তু সেই এসিই অন্যের জীবনের জন্য কষ্টের এবং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, যারা সার্বক্ষণিকভাবে বা দিনের বেশির ভাগ সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গায় থাকে, তাদের বিশেষ কতকগুলো অসুখ হয়ে থাকে। এগুলো হলো- মাথাব্যথা, ক্লান্তিবোধ, নিম্ন রক্তচাপ আরো কমা, শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা বাড়া, অ্যালার্জি বাড়া প্রভৃতি।

এ চিকিৎসক বলেন, এসিতে থাকার ফলে মানুষের শরীরের চামড়া শুকিয়ে যায়। চোখও শুকিয়ে যায়, চোখে একধরনের অস্বস্তিবোধ হয়।

ভবন নির্মাণ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাশাপাশি ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তুলতে শিগগিরই ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে।

বছর দশেক আগেও রাজধানীতে বাণিজ্যিক ভবন ছাড়া এসির ব্যবহার তেমন ছিল না। কিন্তু বছর বছর বাড়তে থাকা গরম ও অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে বাসাবাড়িতেও এসির ব্যবহার বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বহুতল ভবনই এর প্রমাণ।

কে/জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh