• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বেপরোয়া লেগুনা, মৃত্যুঝুঁকিতে যাত্রীরা

মিথুন চৌধুরী

  ৩০ মার্চ ২০১৭, ১৩:০৩

মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে লেগুনায় বাড়ি ফিরছিল অসুস্থ মারিয়া আক্তার (৯) নামের স্কুল ছাত্রী। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে সড়কের গতিরোধকের উপর দ্রুতগতিতে যাবার সময় প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে পড়ে গিয়ে মারা যায় মারিয়া। শুধু মারিয়া নয় তার মতো অনেকে এভাবে অকালে ঝরে পড়ছে অথবা গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেপরোয়া ড্রাইভিং, শিশু হেলপার, লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লেগুনার কারণে এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা যানবাহন নিয়ে প্রশাসনের নিশ্চুপ ভূমিকায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।

মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, এসব রুটে লেগুনার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। প্রতিটি রুটের একই চিত্র। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে চালক। যখন-তখন ব্রেক করে আবার জোরে টান। কার আগে কে স্ট্যান্ডে পৌঁছে লাইন দেবে এ নিয়ে রাস্তায় চালকদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। আর এমন ঘটনায় রীতিমত আতঙ্কে থাকে যাত্রী ও পথচারীরা। এ বুঝি কারো গায়ে উঠে পড়লো লেগুনা।

যাত্রী ওঠানামার ক্ষেত্রে লেগুনার কোন স্ট্যান্ড নেই। যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যাত্রী ওঠানামা করে। অনেক সময় মাঝ রাস্তাতেই নামতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা এমনটাই জানালেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার।

তিনি আরো বলেন, লেগুনায় ওঠানামা খুব বিপদজনক। তারপর এক জায়গায় নামাতে বললে নামায় আরেক জায়গায়। পাবলিক বাসে প্রচুর ভিড় থাকে বলে লেগুনাতে বাধ্য হয়েই উঠতে হয়। তার উপর ভাড়াও বেশি।

বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে নিবন্ধিত লেগুনার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর-মহাখালী-গুলশান-ফার্মগেট-মিরপুর, নিউমার্কেট-ফার্মগেট-ট্যানারি মোড়, গুলিস্তান-খিলগাঁও-লালবাগ-সদরঘাট-যাত্রাবাড়ী এলাকার রুটগুলো অন্যতম।

নিউমার্কেট টু ট্যানারি মোড় লেগুনা চালায় সুমন হাওলাদার। তার বয়স ১৫ থেকে ১৬। দু’ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই লেগুনা চালাচ্ছে সে।

কিভাবে চালায় জানতে চাইলে সুমন জানায়, আগে সে লেগুনার হেলপার ছিল। ওস্তাদের কাছ থেকে লেগুনায় হাতেখড়ি । তবে এখন সে ওস্তাদ। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও সমস্যা হয় না। মালিক সমিতির সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ আছে। পুলিশ ধরলে মালিক গাড়ি ও আমারে ছাড়াইয়া আনে।

মোবাইল কোর্ট ধরে কিনা এমন প্রশ্নে সে জানায়, মোবাইল কোর্ট বসলে তারা আগে থেকে খবর পেয়ে যায়। পরে মোবাইল কোর্ট উঠলে রাস্তায় আবার গাড়ি নামে।

এদিকে রাজধানীতে চলাচলকারী ৮০ ভাগ লেগুনার নেই ফিটনেস । কোনটার হেডলাইট নষ্ট তো আবার কোনোটার পাদানি ভাঙা। কিছু লেগুনার বাইরের অংশ চকচকা হলেও ভেতরের অবস্থা খুবই নাজুক।

একেকটি লেগুনার যাত্রী ধারণক্ষমতা ১২ জন। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকে আরও তিন থেকে চারজন। সামনে চালকের পাশে বসানো হয় আরও দু’জনকে। সব মিলিয়ে ১৮ জন যাত্রী, একজন চালক ও তার সহযোগী নিয়ে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে চলছে প্রতিটি লেগুনা। ফলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এ বলা হয়েছে, হেলপার বা শ্রমিক গাড়ি চালাতে পারবেন না। প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালালে, সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা না হলেও চালকের ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। গতিসীমা লঙ্ঘন করলেও একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী দু’ চাকা, তিন চাকার যানবাহন প্রায় এক তৃতীয়াংশ। সাধারণত প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মালিকানা পরিচয়ে এসব গাড়ি চলাচল করে। দুর্ঘটনায় যাত্রীর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পথচারীরা। এ ব্যাপারে সকল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মেয়রের বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে।

তিনি আরো বলেন, যে পদ্ধতিতে গাড়ীর ফিটনেস দেয়া হয় তা সঠিক নয়। দেশের প্রতিটি বিআরটিএ অফিসে ফিটনেস চেকিং মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গাড়ীর ফিটনেস প্রদান করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh