• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিশ্বজয়ীদের অপেক্ষায়

অনলাইন ডেস্ক
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:৩১

অস্কার অ্যাওয়ার্ড । শুধু চলচ্চিত্রের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের শিল্প, সাহিত্যে আর সংস্কৃতির ইতিহাসে এ অ্যাওয়ার্ড সবচেয়ে আলোচিত, সম্মানজনক পুরস্কার। ১৯২৯ সালের ১৬ মে হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলের ব্লজম রুমে প্রথম অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এবারের ৮৯তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে জানা যাবে কারা হচ্ছেন এবারের অস্কারজয়ী। ওইদিন বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে থাকবেন বিজয়ীদের তালিকা জানার জন্য।

অস্কারজয়ীদের নিয়ে হলিউডভিত্তিক গণমাধ্যমগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় কিনা তা জানা যাবে সোমবার সকালে। হলিউড অ্যান্ড হাইল্যান্ড সেন্টারের ডলবি থিয়েটারে শুরু হবে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন এই পুরস্কারের ৮৯তম আসর। জমকালো আয়োজনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন টক শো সঞ্চালক জিমি কিমেল। এই আয়োজন এবিসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বিশ্বের ২২৫টিরও বেশি দেশে। বাংলাদেশেও স্টার মুভিজ চ্যানেলে দেখা যাবে এবারের অস্কার।

সেরা চলচ্চিত্র

এবার অস্কারদৌড়ে রেকর্ডসংখ্যক ১৪টি মনোনয়ন নিয়ে এগিয়ে আছে ড্যামিয়েন শেজেল পরিচালিত ‘লা লা ল্যান্ড’। পঞ্চাশের দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সংগীতনির্ভর প্রেমের ছবিটি বেশিরভাগ বিভাগে শেষ হাসি হাসতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষক ও সমর্থকদের। এর মধ্যে ১১টি পুরস্কার জেতে কি-না সেদিকেই বাড়তি কৌতুহল! কারণ অস্কারের ইতিহাসে এর আগে ‘টাইটানিক’, ‘বেন-হার’ (১৯৫৯) ও ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস : দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং’ (২০০৩) ছবিগুলো ১১টি করে পুরস্কার জয়ের রেকর্ডধারী। এরইমধ্যে ‘টাইটানিক’ (১৯৯৭) ও ‘অল অ্যাবাউট ইভ’ (১৯৫০) ছবির পাশে নাম লিখিয়েছে ‘লা লা ল্যান্ড’। অস্কারে ১৪টি বিভাগে শুধু এ ৩টি ছবিই মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ড গড়েছে। আর গেলো মাসে গোল্ডেন গ্লোবস-এ রেকর্ডসংখ্যক ৭টি বিভাগে পুরস্কার পায় ছবিটি।

লস অ্যাঞ্জেলেসের উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রী ও সংগ্রামরত জ্যাজ সংগীতশিল্পীর ক্যারিয়ার ও প্রেমকে ঘিরে সাজানো ‘লা লা ল্যান্ড’ এবারের অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র, পরিচালক, অভিনেত্রী, মৌলিক সুর ও মৌলিক গানসহ ১০টি বিভাগে ফেভারিট বলে মন্তব্য করলেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বিশেষজ্ঞরা। শিল্প নির্দেশনা ও পোশাক পরিকল্পনা বিভাগ দু’টিতে মনোনয়ন পেলেও এ দু’টি বিভাগে ‘লা লা ল্যান্ড’-এর পক্ষে বাজি খুব কমই হচ্ছে। যদি এ দু’টিতেও জেতে, তাহলে এ ছবি জিতবে ১০টি পুরস্কার। আর শিল্প নির্দেশনা ও পোশাক পরিকল্পনার মধ্যে একটি বিভাগে সেরা হলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৯।

অবশ্য সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে ‘লা লা ল্যান্ড’-এর জন্য বড় হুমকি ‘মুনলাইট’। সব হিসেব পাল্টে দিতে পারে এটি। এর গল্প আশির দশকের প্রেক্ষাপটে মাদকের বেড়াজালে বন্দি মিয়ামির বয়ঃসন্ধিতে পড়া কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে ঘিরে। ট্যারেল অ্যালভিন ম্যাকক্র্যানির ‘মুনলাইট ব্ল্যাক বয়েজ লুক ব্লু ’ নাটক অবলম্বনে নির্মিত ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সমালোচকরা। এটি পুরস্কারও জিতেছে বেশকিছু। তেমন কোনো তারকা না থাকলেও বক্স অফিসেও সফল এই ছবি। তাই অস্কারে বড় ধরনের আপসেট ঘটিয়ে দেবার আভাস দিয়ে রেখেছে ‘মুনলাইট’। সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে আরো মনোনয়ন পেয়েছে ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’, ‘অ্যারাইভাল’, ‘লায়ন’, ‘হ্যাকসো রিজ’, ‘হিডেন ফিগারস’ এবং ‘হেল অর হাই ওয়াটার’।

সেরা অভিনেত্রী

এবারের লড়াইয়ে সেরা তিন ছবিচমক দেখা যেতে পারে সেরা অভিনেত্রী বিভাগেও। ‘লা লা ল্যান্ড’ তারকা এমা স্টোনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ৬৩ বছর বয়সী ফরাসি অভিনেত্রী ইসাবেল হুপার (এল)। গেলো মাসে ‘অস্কারের পূর্বাভাস’ হিসেবে পরিচিত গোল্ডেন গ্লোবসে নাটালি পোর্টম্যানকে (জ্যাকি) হতাশ করে সেরা হন তিনি। অস্কারেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এমাই প্রথমবারের মতো অস্কার ট্রফি ঘরে নিয়ে যাবেন বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। নাটালিকে অস্কারেও হতাশ হতে হবে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া সেরা অভিনেত্রী বিভাগে মনোনীত অন্য দু’জন অর্থাৎ রুথ নেগা (লাভিং) ও মেরিল স্ট্রিপ (ফ্লোরেন্স ফস্টার জেনকিন্স) খালি হাতে বাড়ি ফিরলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সেরা অভিনেতা

সেরা অভিনেতা বিভাগেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। ‘লা লা ল্যান্ড’ তারকা রায়ান গসলিংয়ের এই সম্মান জয়ের সম্ভাবনা খুব কম। তাকে হতাশ করতে পারেন ক্যাসি অ্যাফ্লেক (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি) ও ডেনজেল ওয়াশিংটন (ফেনসেস)। এ দু’জনের মধ্য থেকে কে হাসবেন শেষ হাসি তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চান না কোনও সমালোচক! বেন অ্যাফ্লেকের ছোট ভাই ক্যাসি অ্যাফ্লেক জিতলে প্রথমবার অস্কারজয়ের স্বাদ পাবেন। তার জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৯০ ভাগ। মনোনীত অন্য দু’অভিনেতা ভিগো মর্টেনসেন (ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক) ও অ্যান্ড্রু গারফিল্ড (হ্যাকসো রিজ) খুব একটা পাত্তা বোধহয় পাচ্ছেন না।

গেলো বছর শ্বেতাঙ্গ অভিনয়শিল্পীরাই শুধু মনোনয়ন পাওয়ায় যে সমালোচনা হয়েছিল, ভোটাররা তা মাথায় রাখলে ৬২ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ তারকা ডেনজেল ওয়াশিংটনেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এর মধ্য দিয়ে তিনি নাম লেখাবেন তিনবার করে অস্কারজয়ী মেরিল স্ট্রিপ ও জ্যাক নিকোলসনের পাশে।

পার্শ্ব-অভিনেত্রী

‘ফেনসেস’ ছবিতে ডেনজেল ওয়াশিংটনের সহশিল্পী ভায়োলা ডেভিস পার্শ্ব-অভিনেত্রী বিভাগে সেরার স্বীকৃতি জিতে যেতে পারেন। এবার এই বিভাগে আরও মনোনীত নিকোল কিডম্যান (লায়ন), নাওমি হ্যারিস (মুনলাইট), অক্টাভিয়া স্পেন্সার (হিডেন ফিগারস) ও মিশেল উইলিয়ামস (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী) সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।

পার্শ্ব-অভিনেতা

তবে সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে থাকবে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। এতে মনোনয়ন পাওয়া হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দেব প্যাটেল (লায়ন) ও মাহারশালা আলির (মুনলাইট) মধ্যে। মাহারশালা প্রথম মুসলিম হিসেবে অস্কার জিতে ঢুকে যেতে পারেন ইতিহাসের পাতায়। জেফ ব্রিজেস (হেল অর হাই ওয়াটার), লুকাস হেজেস (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি) ও মাইকেল শ্যানন (নকটার্নাল অ্যানিমেলস) দর্শকসারিতে বসে দেব অথবা মাহারশালার অস্কারজয় দেখার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে ভুল করবেন না!

সেরা পরিচালক

পরিচালক বিভাগে মেল গিবসনের (হ্যাকসো রিজ) মনোনয়ন পাওয়াটা চমক জাগিয়েছে। ব্যারি জেনকিন্স (মুনলাইট), কেনেথ লোনারগ্যান (ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি), ডেনিস ভিলেন্যুভ (অ্যারাইভাল) মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এ বিভাগে ফেভারিট ড্যামিয়েন শেজেল (লা লা ল্যান্ড)। তারই অস্কারজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ২০১৫ সালে ‘হুইপ্ল্যাশ’-এর জন্য মনোনীত হলেও পুরস্কার জোটেনি কপালে। তবে এবার জিতে সবচেয়ে কমবয়সী পরিচালক হিসেবে অস্কার ঘরে নেওয়ার রেকর্ড গড়তে পারেন তিনি।

বিদেশি ভাষার ছবি

সেরা অভিনেত্রীর লড়াইয়ে তারাসেরা বিদেশি ভাষার ছবি হয়ে যেতে পারে ইরানের আসগর ফারহাদি পরিচালিত ‘দ্য সেলসম্যান’। এটা একরকম নিশ্চিতই বলা চলে! পুরস্কার পেলেও আসগরকে মঞ্চে দেখা যাবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশকে আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তাই অস্কার বর্জন করছেন আসগর এবং তার ছবির অভিনেত্রী তারানা আলিদুস্তি। এবার সেরা বিদেশি ভাষার ছবি বিভাগে আরো মনোনয়ন পেয়েছে ডেনমার্কের ‘ল্যান্ড অব মাইন’, সুইডেনের ‘অ্যা ম্যান কল্ড উবা’, অস্ট্রেলিয়ার ‘টেনা’ ও জার্মানির ‘টনি আর্ডমান’।

অ্যানিমেটেড ছবি

অ্যানিমেটেড ছবির বিভাগেও হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মনোনয়ন পাওয়া ‘কুবো অ্যান্ড দ্য টু স্ট্রিংস’, ‘মোয়ানা’, ‘মাই লাইফ অ্যাজ অ্যা জুকিনি’, ‘দ্য রেড টার্টেল’ এবং ‘জুটোপিয়া’র মধ্যে যে কোনও একটি ছবি জিতবে পুরস্কার। মৌলিক গান বিভাগে ‘লা লা ল্যান্ড’-এর ‘অডিশন-দ্য ফুলস হু ড্রিম’ কিংবা ‘সিটি অব স্টারস’-এর মধ্যে একটি গান পেয়ে যেতে পারে পুরস্কার। এ বিভাগে মনোনীত অন্য গানগুলো হলো- ‘কান্ট স্টপ দ্য ফিলিং’ (ট্রলস), ‘দ্য এম্পটি চেয়ার’ (জেম দ্য জেমস পোলি স্টোরি) এবং ‘‘হাউ ফার আই’ল গো” (মোয়ানা)।

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রাচীনতম, জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী এই পুরস্কার দিয়ে থাকে অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স এণ্ড সাইন্স (এএমপিএএস) নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। ১৯৩৫ সাল থেকে প্রিন্সওয়াটারহাউস (বর্তমানে প্রিন্সওয়াটার হাউস কর্পোরেশন) এই পুরস্কারের জন্য ভোট গ্রহণ করে আসছে।

এপি /জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh