• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘আজ রবিবার’ হিন্দিতে কেনো?

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:৫১

বাংলাদেশের টেলিভিশন অঙ্গনের মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ লাগামহীনভাবে এদেশে ভারতীয় চ্যানেলের আগ্রাসন। অথচ এদেশের টেলিভিশন চ্যানেল ভারতে প্রবেশই নিষেধ। অন্যদিকে এদেশের বাজারে ভারতীয় চ্যানেলের জয়জয়কার। ওসব চ্যানেল চালাতে সরকারকে কোনো মুনাফাও দিতে হচ্ছে না। এ ব্যাপারেও অভিযোগের অন্ত নেই।

ভারতীয় অনেক সিরিয়ালে গল্প না থাকলেও সেক্স আপিল অসামঞ্জস্য গল্পে দর্শকদের আটকে রেখেছে। ফিল্মি কায়দায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অন্তরঙ্গ দৃশ্য তো নতুন কিছু নয়। যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি কখনোই সমর্থন করেনা। কলকাতার স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ সিরিয়ালই তার উজ্জ্বল উদাহরণ। গল্প না থাকলেও হিন্দি গানের সঙ্গে পাত্র-পাত্রীর অন্তরঙ্গ পর্দায় উপস্থিতি দর্শক টেনেছে ঠিকই। প্রশ্ন থেকেই যায়, সেসব সিকুয়েন্স কি পরিবারের সব সদস্য নিয়ে দেখার মতো?

২০১৪ সালের কথা। প্রধান চরিত্র ‘পাখি’ (মধুমিতা সরকার) ওড়নাবিহীন পোশাক তরুণীদের এতটাই আকৃষ্ট করে। ওই বছর ঈদে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হয় সেই পাখি ড্রেসে। সেই পোশাক কিনে না দেয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় গ্রামের এক কিশোরী। এ পোশাকের জন্য আবার কেউ স্বামীর ঘরও ছেড়েছিলেন। এসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার হয়। তবে ভারতের বাংলা ও হিন্দি সিরিয়াল যে সে দেশে খুব বেশি ব্যবসা করছে এমন নয়। মাস খানেক আগের ঘটনা- টেকনিশিয়ানদের ওভারটাইমের টাকা ও বকেয়া পরিশোধ না করায় বন্ধ হতে চলেছে কলকাতার দর্শকপ্রিয় পাঁচটি সিরিয়াল। দুই বাংলায় জনপ্রিয় কিরণমালা ও ভুতু। অন্য তিনটি সিরিয়ালের মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা গিন্নি, পটলকুমার গানওয়ালা ও বেদেনি মলুয়ার কথা। অভিযোগ ওঠে ভেঙ্কটেশ ফিল্ম, সুরিন্দর ফিল্মস, রাজ চক্রবর্তীর প্রোডাকশন হাউস-সহ বেশ কয়েকটি প্রোডাকশন হাউস ওভারটাইমের টাকা দিচ্ছে না। তার মানে কি দাঁড়ায়! বিজ্ঞাপনের অভাবেই কি বন্ধ হতে চলছে কলকাতার সিরিয়াল?

জি বাংলা কিংবা স্টার জলসা বেশিরভাগ চ্যানেল হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন। সস্তা জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ভারতমুখী হচ্ছেন অনেক বিজ্ঞাপনদাতা। তাহলে কি এদেশেরই কিছু বিজ্ঞাপনদাতা ভারতীয় চ্যানেল জনপ্রিয় করতে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে।

এতসব দেশীয় স্বার্থবিরোধী ঘটনার নেই কোনো সুরাহা। এবার ঘটলো অন্যরকম এক ঘটনা। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘আজ রবিবার’ ধারাবাহিকটি ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন-এ প্রচার শুরু হয়। সে সময় তা ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আগে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’ নাটকের প্রচার সত্ত্ব কিনে নেয়। ‘চ্যানেল আই’য়ের কাছে থেকে এ নাটক হিন্দিতে প্রচারের জন্য কেনে ভারতের চ্যানেল স্টার প্লাস। ১ অক্টোবর থেকে স্টার প্লাস-এ নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘আজ রবিবার’ হিন্দিতে প্রচার শুরু হয়েছে। এ খবর বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনের মানুষদের প্রথমে গৌরবান্বিত করেছিল। তবে বেশ কিছু কারণে হিন্দিতে প্রচারের পর থেকে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সম্প্রতি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাস হিন্দি ডাবিংয়ে ‘আজ রবিবার’ (হিন্দিতে টুডে ইজ সানডে) নিয়ে এখন মিডিয়া অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। কথা ছিল হিন্দি ডাবিংয়ের পর স্টার প্লাস চ্যানেলের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বের ১৫০টি দেশে প্রচার হবে। কিন্তু ফারুকির দেয়া স্ট্যাটাসের পর আরটিভি অনলাইন-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, হিন্দিতে ডাবিং করলেও স্বয়ং সে দেশের দর্শকই ধারাবাহিকটি দেখতে পাচ্ছেন না। এমনকি আমেরিকা-ইংল্যান্ডেও প্রচার হচ্ছে না। যদিও ভারতেই সিরিয়ালটির সবচেয়ে বড় বাজার।

ফারুকির ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর গুঞ্জন উঠেছে তবে কি বাংলাদেশের দর্শকের টার্গেট করেই এটি করা হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে। তাহলে বাংলা সিরিয়াল তো বাংলা ভাষাতেই তারা দেখাতে পারতেন।

ফেসবুকে ফারুকি লিখেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের কাজ হিন্দি ডাব করলে হিন্দিভাষীদের উদ্দেশেই করার কথা। হিন্দীর প্রধান বাজার ভারত। সেখানে এটা নেই। তারপর আমেরিকা-ইংল্যান্ডেও নাই। তো বাকি থাকে কোন্ দেশ বাংলাদেশ ছাড়া? সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের পছন্দের চ্যানেল সান, বিজয়, অ্যাসট্রো, মাকাল এবং ভানাবিল। তাহলে কোন ভারতীয় দর্শককে টার্গেট করা হচ্ছে? কোরীয় বা জাপানিজরা নিশ্চয়ই হিন্দীতে দেখবেন না!’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘স্টার প্লাসের ব্যবসা গালি দেয়াও আমার উদ্দেশ্য না। আমার উদ্দেশ্য ব্যবসা এবং সংস্কৃতি বাণিজ্যকে আমরা কিভাবে ডিল করছি সেটা একটু খেয়াল করিয়ে দেয়া। স্টার প্লাস বাংলাদেশী কনটেন্ট এবং বাংলাদেশকে টার্গেট করতে চাইলে বাংলাতেই চ্যানেল করুক না। কর দিয়ে ব্যবসা করবে, কি অসুবিধা?’

ফারুকির স্ট্যাটাস থেকে-
‘এটাকে বাংলার জয় ভাবার কোনো কারণ নেই। এ নাটকের টার্গেট অডিয়েন্স ভারত নয়। কারণ ১৩০টি দেশে দেখানো হলেও নাটকটি ভারতে সম্প্রচার হচ্ছে না। তাহলে টার্গেট অডিয়েন্স কারা? কেন হুমায়ূন আহমেদের নাটক বেছে নেয়া হল? স্টার প্লাসে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন হিন্দিতে দেখানো হয়। মাশরাফি প্রাণ সস হাতে নিয়ে বলছেন, ম্যায় প্রাণ সস খাতা হুঁ। মাশরাফি প্রাণ সস খায় এটা দেখে ভারতের (কলকাতা বাদে) কয়জন লোক প্রাণ সস কিনবে? ভারতের বাজার ধরা অবশ্যই উদ্দেশ্য, তবে মূল উদ্দেশ্য না। হলে কোহলি এ মডেল হতেন। বাংলাদেশের দর্শক টার্গেট অডিয়েন্স জন্য সব মডেল বাংলাদেশের। বাংলা বিজ্ঞাপনটাই হিন্দিতে ডাব করা। মৌসুমীকে ব্যবহার করে ভারতে পণ্যের প্রচারণা করা যায়? স্টার প্লাস ও হিন্দি অভ্যস্ত বাংলাদেশের বিশাল টিভি দর্শকদের মধ্যে ঢোকার এক্সপেরিমেন্ট কি এটা? আর এটা কি করা হচ্ছে এ দেশের কোনো বহুজাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থার মাধ্যমে? আজ রবিবারের গল্পটা বুঝতে হলে বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবার বুঝতে চিনতে হবে। না হলে এর পুরো মজাটা বোঝা যাবে না। হিন্দিভাষীরা তা কি পাবেন? ভাইসব, আপনিই এর ভোক্তা। আজ রবিবারকে ব্যবহার করে আমাদের হিন্দিটা আরও ভালোভাবে শেখানো হচ্ছে। যার আসল ফল দশ বছর পর মিলেংগা।’

কার্যত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘আজ রবিবার’ হিন্দি ডাবিং-যতটা না আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল ততটাই ক্ষোভের উদ্রেক ঘটিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে।

বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বিষয়টিকে আমি ভালোভাবে দেখছি না। হিন্দি আমাদের ভাষাও না। হুমায়ূন আহমেদের নাটকটি আমরা দেখেছি। দেখা নাটক আমরা অন্য ভাষায় কেন দেখব? এটা আমি পছন্দ করলাম না। আমাদের বাংলা ভাষা বেশ উন্নত। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের লেখক। ওরা যেটা দেখবে না আমাদের দেখাবে কেন? হিন্দি ভাষা শেখার জন্য? আমাদের রাষ্ট্রভাষা তো হিন্দি না। বিষয়টি আমি পছন্দ করলাম না ।

এইচএম/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh