• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সিচুয়েশনাল, কাটপিস অতঃপর আইটেম!

এ এইচ মুরাদ

  ৩১ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:৪৩

বলিউডের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢালিউড এখন আইটেম জোয়ারে ভাসছে। এ আইটেম গান নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। চটুল কথার গানে আইটেম কন্যার উদ্দাম নাচ দর্শকদের কাছে পরিচিত। আইটেম গান'কে দুষ্টু সঙ্গীতও বলা হয়।

বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত থেকে শুরু করে ক্যাটরিনা কাইফসহ অনেকেই এ আইটেম গানে নেচেছেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রে হালের আলোচিত নায়িকা ববি, মাহিয়া মাহি, পরী মণি, সিমলা, আইরিনও নেচেছেন আইটেমে।

বছর খানেক আগে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী 'মন জানে না মনের ঠিকানা' ছবির আইটেমে পারফরম করেন। তবে গানটিকে মৌসুমী আইটেম বলতে নারাজ। তখন তিনি বলেছিলেন, এ ধরনের গান আগেরদিনের ছবিতেও থাকতো। অবস্থার প্রেক্ষিতে এটিকে সিচুয়েশনাল গান বলা হতো।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে আইটেম গানের প্রচলন না থাকলেও এর আদলে অনেক ছবিতেই এ ধরনের গান যোগ করা হয়েছে। রাজা বাদশার কাহিনী নির্ভর ছবিতে জলসা ঘরে বাইজির যে নাচ দেখানো হতো তখন সেটিই ছিল আইটেম। সাদাকালো যুগের বাহাদুর ছবির 'রূপে আমার আগুন জ্বলে' গানটিকেও আইটেম গান বলা যায়। বুলবুল আহমেদকে তার অভিনীত 'দেবদাস' চলচ্চিত্রে সুরাপান করতে করতে 'পায়ের এই নূপুর আমার' গানটি উপভোগ করতে দেখা যায়। গানটিতে পারফরম করেছিলেন গুণী অভিনেত্রী আনোয়ারা। ওই সময়ে গানগুলোকে যথেষ্ট শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে চলচ্চিত্রে যেসব গান গল্পের দরকারেরই ব্যবহার করা হত।

সত্তরের দশকেও চলচ্চিত্রে ডিস্কোতে আইটেম ঘরানার গান ব্যবহার করা হতো। নায়করাজ রাজ্জাক, নায়ক আলমগীর, নায়ক জাফর ইকবাল, শাবানা, ববিতা, নূতন অনেকেই এসব গানে পারফরম করেছেন! তখনকার সময়ে সিচুয়েশনের দরকারে ভিলেনকে ফাঁদে ফেলার জন্য নায়িকারা ডিস্কো অথবা বারে নাচতেন, নায়ককেও ছদ্মবেশে অংশ নিতে দেখা যেত এসব গানে।

পুরনো দিনের বাংলা ছবির অনেক ক্ষেত্রেই খল-অভিনেতা নায়ক অথবা নায়িকার পরিবার কিংবা নায়ককে গুদাম ঘরে জিম্মি করে কোনো স্বার্থ আদায়ের লক্ষে নায়িকাকে নাচার জন্য বাধ্য করতেন। আবার নায়ককে উদ্ধার করার জন্য নায়িকা নিজেই ছদ্মবেশে ভিলেনকে কাবু করার জন্য আইটেমে পারফরম করতেন।

এর বাইরেও আইটেমের আরো একটি ধারা তখন লক্ষ্যনীয় ছিল। আর সেটি হলো সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকের অনেক ছবিতে নায়িকাকে, নায়কের মন জয়ের জন্য ছদ্মবেশে নাচতে গাইতে দেখা গেছে। এ ধারাটি চলচ্চিত্রে এখনো বিদ্যমান।

শুধু নায়ক-নায়িকাই না, অনেক ক্ষেত্রে কমেডিয়ান অভিনেতা-অভিনেত্রী নানান সময়ে আইটেম গানে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ছবিতে দিলদার ও নাসরিন জুটিসহ আরো অনেক কমেডিয়ানের পারফরম্যান্স দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

ঢাকাই চলচ্চিত্র নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অশ্লীলতার গহ্বরে বন্দী ছিল। প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। সে সময়ে অশ্লীলতাকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন বি-গ্রেডের কিছু শিল্পী। এদেশের চলচ্চিত্র ঐতিহ্য হারাতে থাকে তখন থেকেই। তবে তখনকার অনেক শিল্পীরই অভিযোগ, পরিচালক-প্রযোজকদের চাপের মুখেই বাধ্য হয়েছেন কাজ করতে!

ওই সময়ের ছবিতে যেসব বিশেষ গান রাখা হতো তাকে আইটেম কিংবা সিচুয়েশনাল কিছুই বলা যায় না। কাটপিস নামেই পরিচিত ছিল ছবির ওইসব অশ্লীল গান। কাটপিস নামের ভাইরাস ব্যাপক পরিচিতি পাবার ফলে কাটপিস নাম বদলে চাকা, ডিব্বা, চাক্তি (রূপক) এসব নামে হলে পাঠানো হত। আলাদাভাবেই শুটিং করা হতো এ অশ্লীল গানের। শুধু তাই নয়, প্রেক্ষাগৃহে কাটপিস দেখানোর মাঝে মাঝে কয়েক সেকেন্ডের শয্যাদৃশ্যে জুড়ে দেয়ার মতো ঘটনাও লক্ষ্য করা যায়। কোনো প্রচারণা ছাড়াই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেত এ সব ছবি। শুধু সিলেক্টেড হলের মালিক ও ওই ছবির এক শ্রেণীর দর্শকই জানতো কোথায় এ ছবি চলছে!

গেলো পাঁচ বছরে বলিউডে আইটেম গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রেওে এর প্রভাব পড়ে। তবে অনেক গানেরই ছবির সঙ্গে কোনো রকমের সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পার্শ্বচরিত্র ও নতুন মুখকে দিয়ে আইটেম করিয়ে অনেক প্রযোজক-পরিচালক অশ্লীল যুগকে ফিরিয়ে আনার আভাস দেন।

আইটেম গান আগেও ছিল এখনো আছে। শুধু ধারা বদলেছে। এখনকার অনেক আইটেম কন্যাকে পোশাকের ক্ষেত্রে খোলামেলা হতে দেখা যায়। অতীতে এ ধরনের গানে পারফরমাররা মার্জিত পোশাকই পরতেন। তাদের দক্ষতা ছিল নাচে।

আইটেম গান ভালো না খারাপ বিতর্ক বাদ রেখে সময় এসেছে চলচ্চিত্রে এ ধরনের গানকে আরো শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করার। চলচ্চিত্রকর্মীদেরই এ দায়িত্ব নিতে হবে। আর আন্তরিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ই ঢালিউডে আইটেম গান নতুন মাত্রা পাবে বলছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।

এইচএম/ এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh