তুমি যাদু দিয়ে আমাকে ভালো করে দিতে পারো না?
নন্দিত অভিনেত্রী রোজী আফসারীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘জোয়ার এলো’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন।
এরপর নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পান। চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
এর মধ্যে পাকিস্তানের জাগো হুয়া সাবেরা, পুনম কি রাতসহ ২৫টি উর্দু ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্য গ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম, জীবন থেকে নেয়া, তিতাস একটি নদীর নাম।
অন্যান্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ওরা ১১ জন, লাঠিয়াল, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, অশিক্ষিত, প্রতিকার ইত্যাদি। তার সর্বশেষ অভিনীত ছবি পরম প্রিয় ২০০৫ সালে মুক্তি পায়।
রোজি আফসারীর স্বামী মালেক আফসারী শুক্রবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তখন দিনের ৩ টা । রোজী ফিসফিস করে বললো, ‘আফসারী চকলেট খেতে ইচ্ছে করছে।’ আমি ডাক্তারের দিকে তাকাই। ডাক্তার ইশারায় বুঝালো, দেন। বুলুকে (রোজীর পার্সোনাল আয়া) বললাম নিয়ে আসো। বুলু ছুটে বেরিয়ে গেলো আইসিইউ থেকে। এখানে রোজী এসেছে মার্চের ৩ তারিখে আজ ৯ তারিখ। বারডেম হাসপাতালের নিচেই পান সিগারেটের দোকান থেকে একটি চকলেট নিয়ে আসে বুলু। আমি কাগজ ছিঁড়ে রোজীকে দেই। রোজী পুরাটা খেতে চায় না। আমি দাঁত দিয়ে কামড়ে একটু দেই। ও বাচ্চাদের মতো মুখে নিয়ে চুষতে থাকে।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: কলকাতার সবাই শাকিবকে ভীষণ পছন্দ করে: দীপা খন্দকার
--------------------------------------------------------
তারপর ইশারায় আমাকে ডাকে। আমি আমার কান ওর মুখের কাছে নেই। আস্তে করে বলে, আফসারী ডাক্তার আমাকে ভালো করতে পারবে না। তুমি তোমার যাদু দিয়ে আমাকে ভালো করে দিতে পারো না? আমি হেসে ওর হাত ধরে বসে পরি। ভাবতে থাকি ওর এখনো মনে পরছে সেই প্রথম দিনের কথা।
‘বিনি সুতার মালা’ (১৯৮০) ছবির শুটিংয়ের কোনো এক ফাঁকে আমি রোজী ম্যাডামকে যাদু দেখিয়েছিলাম। তখন আমি ৬০০ টাকা বেতনের প্রধান সহকারী পরিচালক আমি। উনাকে ম্যাডাম ডাকি। উনি শুধু আমার বয়সে না, সব দিক থেকেই অনেক বড়। উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি চালাকিতে আট আনার একটি আধলি দুইটা করে দেখিয়েছিলাম। আবার দুইটা আধুলি একসাথে গায়েব করে দিয়ে উনাকে আরো অবাক করে দিয়েছিলাম। উনি অবাক হয়ে আমার মুখে তাকিয়ে ছিলেন। বিশ্বাস করেছিলেন আমি জাদুকর।
সেই থেকে রোজী প্রতিদিন আমার কাছে জানতে চাইতো আসলে এইটা যাদু না হাতের কারসাজি। আমি মিথ্যা কসম কেটে বলতাম সত্যি যাদু ও বিশ্বাস করতো। আবার করতো না। একদিন বললো আমাকে শিখাবে। আমি বললাম শিখাবো। শিখাবার বাহানায় হাত ধরলাম।
হঠাৎ টুন টুন শব্দ করে উঠে রোজীর গায়ে লাগানো মেশিনগুলো। আমি চমকে উঠে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে দেখি, রোজী ঘুমাচ্ছে। কিন্তু নার্স ডাক্তার সবাই ছুটাছুটি করছে। আমি ওর কপালে হাত দিলাম। হালকা গরম। মনে হলো সব ঠিক আছে। ও ঘুমাচ্ছে । পরে ডেথ সার্টিফিকেটে লিখা দেখি। ৪ টা ৪৫মিনিট। ২৭ বছরের জার্নি এন্ড।
আরও পড়ুন:
পিআর/ এমকে
মন্তব্য করুন