• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভাষা ও ভালোবাসার গল্প ‘রেগরেসা’

এ এইচ মুরাদ

  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:৫১

রেগরেসা স্প্যানিশ শব্দ, যার ইংরেজি কামব্যাক, বাংলা অর্থ প্রত্যাবর্তন। মেক্সিকান এই সিনেমাটি ২০১০ সালে মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ পাদিলা। প্রধান দুটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেইমে কামিল ও ব্লাঙ্কা সটো। বাস্ক ভাষায় সিনেমাটির ট্যাগ লাইন ‘আস্কো মাইতে জাইটুউট’ যার অর্থ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

গল্পের শুরুটা হয় স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে। দুই বান্ধবী পাটো এবং ইসাবেল তাদের আরেক কাছের বান্ধবী মারিয়াকে নিয়ে থেরাপিষ্ট অলগারের শরণাপন্ন হন। অতীত জীবন সম্পর্কে জানার জন্যই তারা সেখান যান। কিন্তু সেই অতীত থেকে মারিয়া আর ফিরে আসতে পারেন না। জাগ্রত হবার পর কাউকেই চিনতে পারে না সে। অস্বাভাবিক আচরণ সবাইকে শঙ্কায় ফেলে।

দুই বান্ধবী ও অলগার কেউই তাকে থামাতে না পেরে ইসাবেল মারিয়ার স্বামীকে বারবার ফোন করতে থাকেন। কিন্তু আর্নেস্টের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অবশেষে তারা মারিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এরই মধ্যে আর্নেস্ট হাসপাতালে আসেন কিন্তু মারিয়া কোন ভাষায় কথা বলছেন কেউ বুঝতে পারছিলেন না। চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। মেয়েটি আসলে কী বলছেন এ নিয়ে দ্বিধায় সবাই। এমন অবস্থায় তার কথা রেকর্ড করে কোন ভাষায় মারিয়া কথা বলছেন তার সন্ধানের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন স্বামী আর্নেস্ট।

কিন্তু কেউই এই ভাষা বুঝতে পারছিলেন না। অবশেষে ইনাকি নামে একজনকে খুঁজে পান আর্নেস্ট যিনি ভাষাটি বুঝতে পারেন। তিনি আবিস্কার করেন এই মারিয়া আসলে ১৫০০ শতাব্দী অতীতে চলে গেছেন এবং এই অতীত জীবনে তিনি ছিলেন নাভারে সম্রাজ্যের রাজকুমারী। তার এক রাজকুমারের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল।

চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেয়ায় স্ত্রীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে আর্নেস্ট শহর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেই ভাবা সেই কাজ। স্ত্রী ও তার বান্ধবীসহ ইনাকি সবাই মিলে ছুটে চলেন এক নির্জন গ্রামে। সেখানে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তে ফুটে উঠেছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসার চিত্র। নানা হাস্যরসাত্মক ঘটনায় এগিয়ে চলে সিনেমার গল্প।

সিনেমাটিতে একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে ফিরে পাবার আকুলতা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। কিন্তু মারিয়া আসলে কি বলছেন তা বোঝাই কঠিন হয়ে যায় আর্নেস্টের জন্য। কারণ বাস্ক ভাষা বোঝেন না তিনি। অনুবাদকের ভূমিকায় তখনো সেই ইনাকি, আর্নেস্ট’র জন্য যন্ত্রণার নামও এই ইনাকি। কারণ এই ইনাকি নানাভাবে আর্নেস্টকে বিব্রত করেন।

এদিকে ইনাকির কাছে বাস্ক ভাষা শেখার চেষ্টা করেন আর্নেস্ট। যাতে করে স্ত্রীর সঙ্গে একটু ভাব হয় তার। মারিয়ার সঙ্গে বাস্ক ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফল খুব একটা ভালো হয় না। সব সময় মারিয়া যেন বিরক্ত। কারণ আর্নেস্টে আসলে বাস্ক ভাষা ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারেন না। ইনাকি পরামর্শ দেন আর্নেস্টেকে আরো বেশি বেশি চর্চা ভাষার চর্চা করার। নানা ঘটনায় সিনেমাটির গল্প আগাতে থাকে। আর্নেস্টে কী আদৌ তার প্রিয়তমাকে অতীত জীবন থেকে বর্তমানে ফিরতে আনতে পারবেন জানতে হলে সিনেমাটি দেখতে পারেন।

একটা সাধারণ গল্পকে পরিচালক আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ পাদিলা দারুণভাবে নির্মাণ করেছেন। ভালোবাসা তো এমনই হয়। এই সিনেমাটি দর্শকদের আপনজনকে নতুনভাবে ভালোবাসতে শেখাবে। শেখাবে ভালোবাসায়ময় সুন্দর এক পৃথিবী গড়তে। ব্যক্তি থেকে পরিবার পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।

সম্পর্কের মাঝে ব্যবধানের দেয়াল পেরিয়ে প্রিয় মানুষকে ফিরে পাবার আনন্দ সত্যি অসাধারণ। যা রেগরেসা সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে। মনোরম লোকেশন, অভিনয় শিল্পীদের সাবলীল অভিনয় সবমিলে সিনেমাটি দর্শকদের বিনোদনের খোরাক জোগাবে।

এম/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh