• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

রোজী এসেছিল, আমাকে ডাকলে না কেন?

পাভেল রহমান

  ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৪
ছবিতে লায়লা হাসান ও রাহিজা খানম ঝুনু

বাংলাদেশের প্রায় সব নৃত্যশিল্পীই তাকে ‘গুরুমাতা’ বলে সম্বোধন করেন। নৃত্যাঙ্গনের গুণী শিল্পী রাহিজা খানম ঝুনু সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজ রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঝুনু। দেশের বরেণ্য নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানম ঝুনুকে নিয়ে আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেছেন আরেক অগ্রজ নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাভেল রহমান

ঝুনু আপার সঙ্গে পরিচয় পঞ্চাশের দশকে

আমাকে তিনি চিনতেন রোজী নামে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির (বাফা) প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ঝুনু আপা। আমি ছিলাম দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। ঝুনু আপার সঙ্গে আমার পরিচয় পঞ্চাশের দশকে বাফাতে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই। তবে বাফাতে গিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ হয়েছে।

সবাই ভালোবেসেনৃত্যগুরু মাতা বলে ডাকেন

ঝুনু আপা এদেশের প্রায় সব নৃত্যশিল্পীর গুরু। আমাদের পরের প্রজন্মের যারা নাচ করেন তাদের গুরু ছিলেন ঝুনু আপা। ঝুনু আপার শিষ্যরা পরবর্তীতে শিক্ষক হয়েছেন। ফলে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সবাই ঝুনু আপারই শিষ্য। এজন্য সবাই তাকে ভালোবেসে ‘নৃত্যগুরু মাতা’ বলে ডাকেন।

প্রকৃতির লীলা নৃত্যনাট্য ঝুনু আপার সঙ্গে প্রথম কাজ

বাফাতে আমাদের গুরু ছিলেন অজিত সান্যাল। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু বুলবুল চৌধুরীর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। অজিত দা এখনো বেঁচে আছেন। তিনি ভারতের বর্ধমানে থাকেন। পঞ্চাশের দশকে অজিত দার পরিচালনায় আমরা ‘প্রকৃতির লীলা’ নামের একটি নৃত্যনাট্য করেছি। এটি ১৯৫৬/৫৭ সালের দিকে করা হয়েছিল। সেখানেই ঝুনু আপার সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি। পরবর্তীতে ‘চণ্ডালিকা’ নামের আরেকটি নৃত্যনাট্য করেছি। সেখানে ঝুনু আপা চুড়িওয়ালীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

‘নকশী কাঁথার মাঠ ঝুনু আপার কালজয়ী কাজ

ঝুনু আপার কালজয়ী নৃত্যনাট্যের মধ্যে ছিল পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। আমি বলবো, এটিই ঝুনু আপার সেরা কাজ। এই প্রযোজনাটি নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরেছি। এরপর বাফা থেকে আমরা অনেকগুলো নৃত্যপ্রযোজনা করেছি। শ্যামা, মায়ার খেলা, চিত্রাঙ্গদা প্রভৃতি। কিন্তু ‘নকশী কাঁথার মাঠ’-এ ঝুনু আপা চমৎকার পারফরমেন্স করতেন। তার সঙ্গে মঞ্চে উঠার সেই স্মৃতি কোনোদিন ভুলবো না।

কাজের সূত্রে কাছাকাছি থাকতে পেরেছি

ঝুনু আপার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত থেকেছি। তিনি নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে আমি নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি হয়েছি। তিনি উপদেষ্টা ছিলেন। তার সঙ্গে কাজের সূত্রে কাছাকাছি থাকতে পেরেছি। আমাদের মাঝে পারিবারিক বন্ধুত্বও ছিল।

হাসপাতালে অনেকবার দেখতে গিয়েছি

তিনি অসুস্থ হওয়ার পর আমাকে খুঁজতেন। সবাইকে জিজ্ঞাসা করতেন রোজী আসেনি? আমি তাকে দেখতে যেতাম। একবার আমি গিয়ে দেখি তিনি ঘুমিয়ে আছেন। আমি তার মেয়েকে বললাম, ডাক দিও না। আমি চলে আসার পর তিনি সবাইকে ধমক দিয়েছেন। রোজী এসেছিল, আমাকে ডাকলে না কেন?

ঝুনু আপা আমি রোজী তিনি আমার হাতটা চেপে ধরলেন

ঝুনু আপা ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হবার পর বেশ কয়েকবার দেখতে গিয়েছি। ১২ নভেম্বর একবার গেলাম। তিনি অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছেন। আমি কানে কানে গিয়ে বললাম, ঝুনু আপা আমি রোজী। তিনি আমার হাতটা চেপে ধরলেন। সেই নিস্তেজ অনুভূতি ভুলতে পারবো না। সবশেষ গতকাল (শনিবার) গিয়েছি। তখন তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আর আজ তো দিন শুরু হলো প্রিয় ঝুনু আপার মৃত্যু সংবাদ শুনে। এটা নৃত্যাঙ্গনের জন্য খুবই বেদনার খবর। আমার জন্য খুবই কষ্টের। প্রিয় ঝুনু আপা ওপারের জীবনে ভালো থাকুন।

পিআর/জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh