• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আব্দুল জব্বারের বর্ণাঢ্য জীবন

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১১:০৭

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এই গানটি শোনা মাত্রই যার মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল জব্বার। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের এ শিল্পী ১৯৩৮ সালে ৭ নভেম্বর বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কাল থেকে সঙ্গীতের চর্চা শুরু করেন। তিনি মূলত আধুনিক গানের শিল্পী। সঙ্গীতকে ভালবেসেই তিনি জীবনের পথ চলছেন। ষাট দশকে তিনি বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে খ্যাতি অর্জন করেন। এই কন্ঠ থেকে শ্রোতারা পেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান।

শিল্পী আব্দুল জব্বার ১৯৫৮ সাল থেকে বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। চলচ্চিত্র প্লে-ব্যাক শুরু করেন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সালে বিটিভির নিয়মিত শিল্পীতে পরিণত হন। ১৯৬৮ সালে ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে তার গাওয়া ‘তুমি কি দেখছ কভু, জীবনের পরাজয়’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। গানটি লিখেছেন ড: মোহাম্মদ মনিরুজামান ও সুর করেছিলেন সত্য সাহা।

পরবর্তী সময় বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই শিল্পীর গাওয়া বিভিন্ন গান, আপামর মুক্তিপাগল ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ও মনোবল বাড়িয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে। আবার কেউ কেউ যুদ্ধ করেছেন কন্ঠ দিয়ে, সুর দিয়ে। তাদের কন্ঠ, সুর উজ্জবীত করেছে সমগ্র বাংলা জাতিকে, মুক্তিকামী বাঙালীকে। যুদ্ধ শুরু হলে আব্দুল জব্বার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গাইতে শুরু করেন। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবি নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতে নিরলস ভাবে কাজ করতে থাকেন তিনি।

যুদ্ধের সময় যখন পাক হানাদার বাহিনী শতশত মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলো, তিনি তখন আর বাসায় বসে থাকতে পারেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পৌঁছলেন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে। নিজের চেয়ে তখন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিয়েই তার দুশ্চিন্তা। বেগম ফজিলাতুন্নেসা সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে পরলেন। রায়েরবাজারের দিক দিয়ে বুড়িগঙ্গা সাতরে পার হতে গিয়ে পড়লেন বিপদে। পাকিস্তানী অনুচর ভেবে তাকে আটক করেও পরে আওয়ামী লীগ এক নেতা তাকে চিনতে পেরে নিরাপদে চলে যেতে সাহায্য করেন। পরে হাটতে হাটতে দোহার নবাবগঞ্জ হয়ে পৌঁছলেন শিল্পীর নিজ গ্রাম কুষ্ঠিয়াতে। এরপর মেহেরপুর যশোর হয়ে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে চলে গেলেন ভারতে। কলকাতায় গিয়ে আব্দুল জব্বার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান করেন। সেই যুদ্ধকালীন সময় কলকাতা থেকে মাঝে মাঝে আগরতলা বেতারের কেন্দ্রীয় শাখাতে এসে গান করতেন।

স্বাধীনতার পর থেকে দরাজ কন্ঠের গানের জন্যে আব্দুল জব্বার পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার যার মধ্যে রয়েছে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদক। আরো পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরষ্কার ও সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননাসহ ছোট বড় আরো অনেক সম্মাননা।

আব্দুল জব্বার স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সংস্কৃতি আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রেডিও বাংলাদেশের সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে সে চাকুরী ছেড়ে দেন এবং রসায়ন শিল্প সংস্থার উচ্চতর পদে চাকুরী গ্রহণ করেন।

আব্দুল জব্বার এমনই একজন শিল্পী যার গান বিভিন্ন সময়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায়।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh