• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

৩৩ নদী এখন মরাখাল

রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড়

  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৪২

এক সময় করতোয়া নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পঞ্চগড় জেলা শহর। এককালের স্রোতস্বিনী এই করতোয়া এখন পরিণত হয়েছে ধানক্ষেতে।

এক সময় যে করতোয়ার এ কূল ও কূল দেখা যেত না। বন্যার সময় নদীর পানি শো শো শব্দে প্রবাহিত হতো। এখন পানিও নেই, মাছও নেই। চোখের সামনেই নদীটি যেনো মিলিয়ে গেল। শুকনো মরা নদীর বুকে এখন শোভা পাচ্ছে কৃষকের চাষ করা বোরো ধান।

শুধু করতোয়াই নয় উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে হারিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ছোট বড় ৩৩টি নদী। প্রবাহ না থাকায় মরাখালে পরিণত হয়েছে এসব নদী। নদীর বুক চিরে এখন গড়ে উঠছে বিশাল ধান ক্ষেত। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে মাছ, জলজ উদ্ভিদসহ প্রাণিকুলে। হুমকিতে পড়েছে জেলেসহ নদী কেন্দ্রীক কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা।

পঞ্চগড় জেলার মধ্য দিয়ে ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বয়ে গেছে জেলার সর্ববৃহত নদী করতোয়া। উজানে ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণের করেণে এই করতোয়া এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। এছাড়া পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় ৩৩ টি নদী। এসব নদীর মধ্যে চাওয়াই, মহানন্দা, ডাহুক, বেরং, টাঙ্গন, তালমা, গোবরাসহ সব নদী অবস্থাও করতোয়ার মতই নাজুক। প্রতিটি নদীর উৎসস্থল ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় বছর জুড়ে এই নদীগুলোতে পানি থাকে না।

অপরদিকে নদীর নাব্যতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ না থাকায় নদীর বুকে চর জেগে উঠেছে। নদীগুলো বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে কিছু নদী। বেশির ভাগ নদীই এখন দখল হয়ে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভুমিহীন কৃষকদের ফসলের ক্ষেত হয়ে উঠা পানিশুন্য এসব নদীতে মাছ না থাকায় মানবেতর জীবন পার করছেন স্থানীয় জেলেরা। সারাদিন জাল নিয়ে নদীতে ঘুরে কোনো মাছ না পাওয়ায় পেশা বদলানোর কথা ভাবছেন তারা।

করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে আসা জেলে শামসুল হক বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। আগে নদীতে প্রচুর মাছ ধরতে পারতাম কিন্তু এখন উজানে বাঁধের কারণে আর নদীতে পানিও নেই মাছও নেই। এখন আর এই কাজ করে সংসার চালানো যায়না। আর বেশিদিন মনে হয় এই জেলে পেশায় থাকা যাবেনা।

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ৩৩ টি নদীর প্রায় সবগুলোরই ভারেত উৎপত্তি। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করা এবং উজানের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণের কারণে তাদের এই নদীগুলো নাব্যতা হারাতে বসেছে। আমরা জেলা নদী রক্ষা কমিটির মাধ্যমে জাতীয় নদী কমিশনের কাছে জেলার নাব্যতা হারানো নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিং করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এরইমধ্যে পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে বহমান ৮২ কিলোমিটার করতোয়া নদীর মধ্যে ৫ কিলোমিটার খননেন অনুমোদন হয়েছে। এই খনন কাজ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হতে পারে। এছাড়া জেলার প্রায় প্রতিটি নদীই খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’

জেএইচ

মন্তব্য করুন

daraz
  • এডিটর'স চয়েস এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh