• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিনা পয়সায় ৫০ বছর গর্ভবতীদের সেবা দিচ্ছেন সোনাজান

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ

  ৩০ এপ্রিল ২০১৭, ১০:৫৩

ধরণীতে কালে কালে এমন কিছু সাধারণ মানুষ আসেন যারা তাঁদের অসাধারণ কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তরে নাড়া দিয়ে যান। বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। ৬৮ বছর বয়সী মানিকগঞ্জের সোনাজান এমনই একজন। গেলো ৫০ বছর ধরে তিনি নিঃস্বার্থভাবে গর্ভবতী নারীর প্রসবকালীন ও পরবর্তী সময়ে নবজাতকের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন।

এমন খবর পেলেই সোনাজান সংসারের কাজ ফেলে সেবা করতে ছুটে যান। পরম মমতা দিয়ে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের যত্ন করেন। সেই থেকে তার এই মহৎ কাজের জন্য তিনি সবার কাছে হয়ে ওঠেছেন সাদা মনের মানুষ।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের চৌবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক অকেল উদ্দিনের স্ত্রী সোনাজান। পড়াশোনা করেননি। সন্তান দুই ছেলে ও এক মেয়ে, তাদের বিয়েও দিয়েছেন। সন্তান ও নাতি-নাতনী নিয়ে যৌথপরিবার তার। স্বামী, ছেলে এবং ছেলেদের বউরা সবাই কৃষিকাজ করেন।

৫০ বছর আগে সোনাজানের বয়স ছিল ১৮। তখন তার একটি ছেলেও হয়েছে। সেসময় গর্ভবতী ছিলেন তার চাচীশাশুড়ি। একদিন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন- ছুটে যান তার কাছে। তখন একজন দাই আসলেন। মূলত সেসময়ই তিনি শেখেন- কিভাবে প্রসব করাতে হয়। এরপর থেকেই তিনি শুরু করেন এ মানবসেবা।

সোনাজান বলেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ায় স্বামীর সংসারে কষ্টে কাটিয়েছেন টানা ১০ বছর। মানুষের সেবা করলে পরকালে সুখ পাবেন এমন বিশ্বাস থেকেই মূলত তিনি এই সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান সোনাজান।

স্বামী আকেল উদ্দিন মাটি কেটেছেন আর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন। মাঝে মাঝে বাবুর্চির কাজও করেছেন। তার পরিবারের কেউ লেখাপড়া জানেন না। অথচ সোনাজানের এই মহৎ কাজে বাড়ির সবাই তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

নিজের সংসার চলে না অথচ দিনের পর তিনি বিনা পয়সায় মানুষের সেবা করেছেন। এটি অবাক করেছে তার নিজ গ্রাম চৌবাড়ীয়াসহ আশপাশের আঙ্গারপাড়া, ভালকুটিয়া, বামনা, সোদঘাটা, কালাচাঁদপুর এবং তার বাবার গ্রাম পুরানগ্রামের মানুষদের।

বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খানসহ এলাকাবাসী সোনাজানের এ কাজের প্রশংসা করে বলেন, চিন্তা করা যায় না এইরকম একটি মানুষ থাকতে পারে। তারা নিজেরাই অনেক কষ্টে চলে। তবু নিঃস্বার্থভাবে ৫০ বছর ধরে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, তিনি নারীর মরদেহ গোসল করান। তার নিজ এলাকা ছাড়াও আশপাশের কমপক্ষে ১০টি গ্রামের কোনো নারী মারা গেলে তিনি ছুটে যান এবং গোসল করান।

এসএস/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • এডিটর'স চয়েস এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh