• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কখন খুলবে গার্মেন্টস?

মিথুন চৌধুরী

  ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৪৩

কখন খুলবে গার্মেন্টস? জানা নেই কারো। হতাশ হয়ে কর্মস্থলের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া যেন ভুক্তভোগী শ্রমিকদের কোন কাজ নেই।

ক’দিন পরই মাস ফুরাবে। মাসের শুরুতেই পকেটে চলে আসতো আয়। আর সে টাকা ভাগ বাটোরোয়া করে সংসার চালানো হবে-প্রতিবারের মতো এমনই পরিকল্পনা ছিল তাদের। বাসাভাড়া, খাইখরচ বাদে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেবেন পরিবার-পরিজনের কাছে। কিন্তু কে জানতো-তাদের এ পরিকল্পনায় ভাটা পড়বে, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাবে।

কবে গার্মেন্টস ফের কাজ হবে, কবে সাধের মেশিনের চাকা ঘুরবে, কবে কাজ করা দিনগুলোর টাকা মিলবে-এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে।
শ্রমিকদের অনেকেই বলছেন, সবাইতো আর আন্দোলন করে নাই। আন্দোলন করেছে কয়েকজন মাত্র। শাস্তি হলে তাদেরই হওয়া উচিৎ। আমাদের কেন?

কয়েকটা গার্মেন্টস আন্দোলন করেছে সবগুলোতে আর করেনি। বন্ধ করলে সেসব গার্মেন্টস বন্ধ থাক, সবগুলো বন্ধ থাকবে কেন? এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আন্দোলন না, কাজে যোগ দিতে চান তারা।

শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে চলতি মাসের ২১ তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে আশুলিয়ার ৫৯ পোশাক কারখানা। কবে খুলবে এসব কারখানা জানা নেই কারো। কিন্তু কারখানা মালিকরা তা সচল রাখতে চান। কারখানা সচল থাকলেই তৈরি হবে পোশাক। মুনাফা হবে। রপ্তানি হবে।

এদিকে শনিবার বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গুজব ও বিভ্রান্তিমুক্ত হয়ে শ্রমিকরা যদি কাজে যোগ দিতে রাজি হয়, তবেই কেবল আশুলিয়ার বন্ধ পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেয়া হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোন গোষ্ঠীর চক্রান্তে যদি দেশের পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তবে সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৪০ লাখ পোশাককর্মী। তাই সরকার, কারখানা মালিক, শ্রমিক-সব পক্ষ এক হয়ে কাজ করলেই কেবল ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।

মালিকরা বলছেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শ্রমিকদের জন্য সবশেষ ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। পরের মজুরি কাঠামো দেয়া হবে পাঁচ বছর পর। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। মাঝের এই পাঁচ বছর শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কারখানায় বিক্ষোভের পেছনে গুটিকয়েক শ্রমিকনেতার ইন্ধন আছে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশে মোট রফতানি আয়ের ৮১ ভাগের বেশি আসে পোশাক খাত থেকে। সে সুবাদে দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা বাংলাদেশের। বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দু’কোটি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

তাজরীন গার্মেন্টে অাগুন ও রানা প্লাজা ধসের পর সবচে’ বড় ধাক্কা খায় পোশাক শিল্প। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর নাজুক অবস্থায় পড়ে পোশাক খাত। এসব ধকল কাটিয়ে পোশাক শিল্প যখন ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই শুরু হয়েছে আকস্মিক শ্রমিক অসন্তোষ। টানা নয় দিনের শ্রমিক বিক্ষোভে বন্ধ হয়ে যায় আশুলিয়ার ৫৯ পোশাক কারখানা।

এ ঘটনায় দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজার শ্রমিককে। সাময়িক বরখাস্ত শতাধিক। শ্রমিক নেতাসহ আটক হয়েছেন অন্তত ২১ জন।

এরইমধ্যে আশুলিয়ায় কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দশটি নিয়ন্ত্রণ অফিস খোলা হয়েছে। এসব অফিস থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দারা ৭-৮ শ্রমিক নেতার নাম পেয়েছেন। তারা নিশ্চিত হয়েছেন আন্দোলনের নামে ওই নেতারা শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পোশাক খাতে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন।

শ্রমিক নেতাদের বড় একটি অংশ সম্প্রতি সরকার ও পোশাক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, এ আন্দোলনে তাদের সমর্থন নেই। কিন্তু নেপথ্যে থেকে তাদের অনেকেই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে মালিক-শ্রমিকদের অনড় অবস্থানের মধ্যে মঙ্গলবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে মন্ত্রী বলেন, আসছে তিন বছর আশুলিয়ার বাড়িওয়ালারা যাতে ভাড়া না বাড়ান, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সার্বিক বিষয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


অন্যদিকে মালিকরা বলছেন, শ্রমিকরা ভুল পথে আন্দোলন করছে। পাঁচ বছর পর নতুন ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা হবে। এর আগপর্যন্ত শ্রমিকদের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছেন মালিকরা। আর দেশে মূল্যস্ফীতির হারও ৫ শতাংশের বেশি নয়।

এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, ২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো জারির সময় সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, তিন বছর পর কোন পক্ষ চাইলেও মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করা যাবে। আর পাঁচ বছর পর নতুন কাঠামো দেয়া হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, কোন শ্রমিক বা শ্রমিকনেতা সরকার ও বিজিএমইএ’র কাছে বেতন কাঠামো পর্যালোচনা বিষয়ে এখনো কোন আবেদন করেননি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্টসের চাকা বন্ধ থাকলে শ্রমিক, মালিক, দেশ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে যদি টানা গার্মেন্টস বন্ধ থাকে, তাহলে আমরা ক্রেতা হারাবো। আর এ সুযোগ কাজে লাগাবে অন্যান্য দেশ। তাই শিগগিরই গার্মেন্টসগুলো খুলে দিয়ে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিচ্ছেন তারা।

এমসি/এসজেড

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh