• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঈদ হয় বাংলাদেশে, শপিং ভারতে

মিথুন চৌধুরী

  ৩১ মে ২০১৮, ১৭:৪৬

আজ ১৪ রমজান। ১৬ দিন পর অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদু-উল-ফিতর। তাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিপণী বিতানগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা রং ও ঢঙের কাপড়। রাজধানীর নামিদামি বাজারগুলোয় বিক্রেতাদের এখন দম ফেলার সময়টুকু নেই। ঈদে যা বেচাকেনা হচ্ছে তার মধ্যে প্রায় সবই ভারতীয় পণ্য। প্রায় সব শো রুম ভারতীয় পণ্যে ঠাসা। মানুষের মধ্যে দেশীয় পণ্যের চেয়ে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি। যে কারণে ব্যবসায়ীরা মেয়েদের জন্য ভারতীয় শাড়ি, থ্রি-পিস ও লেহেঙ্গা, গ্রাউন ও শাড়ি তুলেছেন।

বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ হয় বাংলাদেশে মানুষ শপিং করে ভারতে। গতবারের মতো এবারও তারা অলস সময় পার করছেন। ভারতের অবাধ ভিসা দেয়ার কারণে শপিং সেন্টারগুলোতে ক্রেতা সমাগম কমে গেছে। তবুও তারা আগামী কয়েকদিন ক্রেতা পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের স্টাইল গার্লস, আরিশা কালেকশান, দিবা বাংলাদেশ, ড্রেস লাইন, বুল আইস, মিথুয়া ফ্যাশন, মীম কালেকশান, অণির্মা সিটি, স্মার্টেক্স, লিটল ফ্যাশন, বেটার চয়েস, দারুণ জান্নাত, আলিজা, শপার কালেকশান, ফ্যাশন ক্লাব গুরে ঘুরে ক্রেতার তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। বেশির ভাগ দোকানে এক-দুজন ক্রেতা। কোনোটি একদম খালি।

বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের বেটার চয়েসের বিক্রেতা আনিসুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ঈদের বাজারে ক্রেতাদের সমাগম অনেকটা কম। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানান অফার দিয়ে ক্রেতা নিয়ে যাচ্ছে। দিনকে দিন লোক ভারতমুখী হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় এক লাখ মানুষ ভারতে রয়েছেন। পুরো ঈদ মৌসুমে প্রায় দুই লাখ মানুষ ভারতে শপিং করবে। যদি প্রতিজন গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার শপিং করে তাহলে দেশের একশ থেকে দুইশ কোটি টাকা ভারতে চলে যাবে।

ভারতীয় ভিসা সহজ হয়ে যাওয়ায় ঈদের কেনাকাটা কমার কারণ উল্লেখ করেন বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের আরশি কালেকশানে মালিক সুলাইমান হোসেনও।

তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শবে বরাতের পর থেকেই আমাদের ঈদ বাজার শুরু হয়। কিন্তু এবার কিছুই বিক্রি হয় নাই। আজকে সকাল থেকে একটা ড্রেসও বিক্রি করতে পারলাম না। দামও তেমন রাখছি না। ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে উন্নত মানের কাপড় বিক্রি করছি। বিক্রয়মূল্য যে বেশি ধরা হয়েছে তাও না, ক্রয়মূল্য থেকে বাড়তি কিছু খরচ যোগ করে ধরা হয়েছে বিক্রয়মূল্য। ভারতীয় ভিসা সহজ করে দেওয়াতে ক্রেতারা অনেকে ভারত থেকেই কেনাকাটা করছেন। গত বছর থেকেই ঈদের বাজারের ভিড় কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এবার অবস্থা বেশি খারাপ।

বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের স্টাইল গার্লসের মালিক খোরশেদ আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ভারতে যাওয়ার ভিসা সহজ হওয়ার কারণে এবারের ঈদে মানুষ কেনাকাটার জন্য কলকাতামুখী হয়েছেন। যে কারণে গত ঈদের তুলনায় এবার ঈদে তৈরি পোশাক ৩০ শতাংশ কম বেচাকেনা হচ্ছে। যাতায়াত সহজ ও পণ্যের চোখ ধাঁধানো নকশার কারণে মানুষ কেনাকাটার জন্য কলকাতায় ছুটছেন। এতে এবার ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ প্রভাব পড়েছে। বেচাবিক্রি কিছুটা কমেছে।

কলকাতায় বাংলাদেশ থেকে পণ্যের দাম কমে পাওয়া যাচ্ছে তাই ক্রেতারা ভারতমুখী হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে খোরশেদ আলম বলেন, কলকাতায় পণ্যের দাম কিছুটা কম হলেও সেখানে গিয়ে এক রাত থাকা, যাতায়াত খরচ ও নিজের দুই দিনের শ্রমের দাম হিসাব করলে কলকাতার পণ্যের দাম বরং বেশিই পড়ে। তা ছাড়া কলকাতা থেকে পণ্য কেনার পর ছোট-বড় হলে তাৎক্ষণিক সেটি বদলানোর সুযোগ থাকে না।

দারুণ জান্নাতের বিক্রেতা সোলাইমান হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে দেশে পণ্য বিক্রি করি। তার উপর দোকানের খরচ রয়েছে। বাড়তি আয়ের টাকা দেশেই খরচ করছি। কিন্তু ক্রেতারা রাজস্ব না দিয়ে পণ্য আনতে পারছেন। এভাবে চললে আমরা খাবো কি? দেশের চাকা ঘুরবে কিভাবে। অন্তত রমজান মাসে ভিসা শিথিল করা উচিত।

ভারতীয় ভিসা ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মেলা হওয়াকে ক্রেতা না বাড়ার কারণ বলছেন অনেক দোকানি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারত থেকে কাপড় এনে অনলাইন বা বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসিয়ে ব্যবসা করছে। কোনো লাইসেন্স লাগছে না, সরকারকেও টাকা দিতে হয় না। কষ্ট করে মানুষ এখন না এসে ঘরে বসেই কেনাকাটা করছে।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব শেষ হওয়ার আগে ইরানে হামলা করবে না ইসরায়েল’
X
Fresh