পাচার হওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরত আসবে কবে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড ও দুদকের কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই বিদেশে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না- এমন মন্তব্য বিশ্লেষকদের। আর এ কারণেই ২০১৩ সালে আরাফাত রহমান কোকোর পাচারের টাকা ফেরত আনার পর অন্য কারও টাকা আনার আর নজির নেই।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ পাচার ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
সিঙ্গাপুরের আদালতে আবেদন করে ২০১২ ও ১৩ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা তিন দফায় ফেরত আনে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
তবে গ্লোবাল ফিন্যানসিয়াল ইনটিগ্রিটি-জিএফআইয়ের গবেষণা বলছে, গত দশ বছরের মধ্যে ওই দুই বছরই পাচার হয়েছে সবচেয়ে বেশি; প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিভিন্ন দেশের অফ-শোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস করেছে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের রিপোর্টে উঠে এসেছে বাংলাদেশি বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের নাম।
পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩৮টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা করার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন সংস্থা এগমন্ড গ্রুপের সঙ্গে।
তবে টাকা পাচারের বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি নন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা।
অর্থ ও ঋণ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং আইন দিয়ে যদি ওইসব দেশকে বোঝানো যায়, তবে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব। কিন্তু কথা হচ্ছে- টাকার পেছনে দৌড়ানোর দরকার নেই। যারা পাচার করেছে তাদের পেছনে দৌড়ালেই তো হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। প্রয়োগের জায়গায় যেতে হবে। কার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছি- তার পরিচয় তুলে ধরতে হবে।
কবে নাগাদ এই লাখ লাখ কোটি টাকা দেশে ফেরত আসবে তার সময় জানা নেই বিশ্লেষকদের।
তবে তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন- পাঁচারের অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগ করা হলে, উন্নয়ন প্রবৃদ্ধিতে আরও গতি আসবে। পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত পরিবর্তন জরুরি বলেও জানান তারা।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, টাকা পাচারকারীদের একটা জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। তাহলে কেন সেখানে বিনিয়োগ করেছে, টাকা কোত্থেকে এসেছে- তার জবাব পাওয়া যেতে পারে। এতে বোঝা যাবে- টাকাগুলো বৈধ ছিল না অবৈধ।
তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির অনুপাতে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ। এটা অন্তত ৩০ শতাংশের উপরে উঠানো দরকার। আমরা যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে যেতে চাচ্ছি, তার অবকাঠামোর জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাইরে যে টাকাগুলো চলে যাচ্ছে, তা এখানে এনে খাটানো যেত। এটা করা গেলে আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরও দূর এগিয়ে যেতাম।
আরও পড়ুন:
এসআর
মন্তব্য করুন