• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০৯ গুণ

মিথুন চৌধুরী

  ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:৪৮

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঠেকানোই যাচ্ছে না। আমদানি ও উৎপাদন কমের অজুহাতে একবছরের মাথায় পেঁয়াজের দাম ২শ ৯ গুণ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয় একমাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৩ গুন।

রোববার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর দৈনিক বাজার দরের তালিকায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এ চিত্র দেখা গেছে।

এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ফলে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অপরদিকে ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।

মাস হিসাবে, চলতি বছরের ১০ নভেম্বর দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ফলে মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরের ১০ নভেম্বর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ফলে মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

এদিকে রোববার রাজধানীর পাইকারি কাঁচা বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, যা শনিবার বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, যা শনিবার বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী কুতুবদিয়া বিজনেসের মালিক শরিফুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গেল কয়েকদিন ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে কম এসেছে। এতে দামটা বেড়ে যায়। এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে তুলেছে। বাজারে দাম উঠে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ভারতীয় নতুন পেঁয়াজের ঝাঁঝ কম থাকায় গৃহিণীরা দেশি পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে দেশি পেঁয়াজের ঝাঁঝের পরিমাণ বেশি। ফলে বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একটি সিন্ডিকেট বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে তুলছে। তবে সরকারি মনিটরিং বেড়ে গেলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে জানান কোন কোন ব্যবসায়ী।

কারওয়ান বাজারের অপর ব্যবসায়ী খাজা ট্রেডার্সের মালিক জোবায়ের হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ খুব কম। তাই দাম একটু বাড়তির দিকে রয়েছে। আর দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ এখনও তেমনভাবে বাজারে আসেনি। তবে সপ্তাহ খানেক পর বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে, তখন পেঁয়াজের দাম আবারও কমে আসবে।

কারওয়ান বাজারে মগবাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, কোরবানির ঈদের পর থেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থা তেমনিভাবে বাজার মনিটরিং করছে না। এভাবে সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে ভোক্তাদের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন। পাইকারদের থেকে পণ্য কিনে আমরা ১ থেকে ২ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষ খুচরা টাকা বাঁচাতে পাইকারি বাজারের পাশে খুচরা কারবারিদের কাছ থেকে পণ্য কিনছেন। খুব বেশি বিপদে না পড়লে মহল্লার দোকান থেকে তারা পণ্য কিনেন না। ফলে ব্যবসাও কমে যাচ্ছে দিনকে দিন।

কাঁঠালবাগান থেকে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। যা কেজি প্রতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কিন্তু কারওয়ান বাজারে পাল্লা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই তিনি অফিস থেকে ফেরার পথে দুই পাল্লা পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন। শুধু শহিদুল ইসলাম নয় তার মতো অনেকে পাইকারি বাজার থেকে পাল্লা ধরে পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন।

একসাথে বেশি পরিমাণ পচনশীল পণ্য কিনার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা মগবাজারের দিলু রোডের বাসিন্দা সালমা আক্তার নামের এক গৃহিণী আরটিভি অনলাইনকে জানান, তার ৮ জনের পরিবারে মাসে ১০ কেজি পেঁয়াজ লাগে। পেঁয়াজের দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় তিনি একসাথে পুরো মাসের পেঁয়াজ কিনতে কারওয়ান বাজার এসেছেন।

হিলি স্থল বন্দরের আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় সে দেশেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। আর এ কারণে দেশে পেঁয়াজের আমদানি কম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

গেল সপ্তাহে ভারত থেকে আমদানিকৃত যে পেঁয়াজ হিলি বন্দর মোকামে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। হঠাৎ করে সে পেঁয়াজ আজ রোববার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা। দেশে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় এবং আমদানি কম হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে বলে জানান তারা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, দেশীয় পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই পচনশীল পণ্যটির বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে দেশে উৎপাদন ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কৃষকদের স্বল্প মেয়াদে ঋণ সুবিধা ও কারিগরি সুবিধা দিতে হবে। যাতে কৃষকরা বেশি বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারেন। উৎপাদন বাড়াতে না পারলে পেঁয়াজের দামের ঘন ঘন বৃদ্ধির হাত থেকে কখনো মুক্তি পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি সরকারের কঠোর মনিটরিং বাড়াতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে।

এমসি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ ও আমিরাতে ভারতের পেঁয়াজ কূটনীতি
রাজবাড়ীতে ‘কালো সোনা’ পেঁয়াজ বীজ চাষে স্বপ্ন দেখছে কৃষক
পেঁয়াজ আমদানিতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হয়েছে : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
৩৮ টাকায় নেমেছে পেঁয়াজের দর 
X
Fresh