• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সবজির দাম পাইকারির চেয়ে খুচরা বাজারে ১০-৩০ টাকা বেশি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৮

রাজধানীর বাজারে সবজির সরবরাহ প্রচুর। কিন্তু দাম এখনো চড়া। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী। অথচ কৃষক পর্যায়ের সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়ে দামের পার্থক্য কোনো কোনোটিতে প্রায় দ্বিগুণ। রাজধানীর পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামে দেখা যায় কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পার্থক্য।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান, সেগুনবাগিচা, মগবাজার কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তারা বলেছেন, বাজারে তদারকি না থাকায় এ অবস্থা।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় সবজির আড়ত কারওয়ান বাজার। দেশের নানা প্রান্ত থেকে সবজি আসে এ বাজারে। দেখা যায়, কারওয়ান বাজার থেকে কাঁঠালবাগান বাজারের দূরত্ব এক কিলোমিটারের কম। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের দূরত্ব হবে প্রায় তিন কিলোমিটার। আর মগবাজার কাঁচাবাজারের দূরত্ব হবে প্রায় ২ কিলোমিটার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওই দুই বাজারের সঙ্গে কারওয়ান বাজারের সবজির দামের পার্থক্য অনেক।

দামের পার্থক্য সম্পর্কে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা আরটিভি অনলাইনকে জানান, ঢাকার বাইরে থেকে সবজিবোঝাই ট্রাক আসার পর পাইকারি বাজারে সবজি কয়েক দফায় হাতবদল হয়। আর দাম বাড়ে হাতবদলে। ঢাকার অন্য বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে সবজি কেনেন। তারা আবার যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ যোগ করেন এবং মুনাফা রেখে বেশি দামে বিক্রি করেন। এসব কারণে আড়তে যে সবজি ১০ টাকা, সেটি খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা দাঁড়ায়।

কারওয়ান বাজারে খুচরায় সবজির মধ্যে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিম ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আড়তে এগুলোর দাম আরো কম। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম ৬০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা সুমন খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গ্রামের তুলনায় কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে দাম খুব বেশি নয়। মুনাফা বেশি করেন মূলত খুচরা ব্যবসায়ীরা। তদারকি ব্যবস্থা জোরদার না করলে এটা চলতেই থাকবে।

অপরদিকে কাঁঠালবাগান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শিম ১২৫ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম ৬৫ টাকা। এতে দেখা যায় পাইকারি বাজার থেকে এক কিলোমিটারের কম ব্যবধানে প্রতি কেজি পণ্যে ১০ টাকা বেড়েছে।

কাঁঠাল বাগানের বাসিন্দা সিন্দুনীল মৈত্রেয় সবজি কিনছিলেন। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সবজির দামই অনেক বেশি। জীবিকার তাগিদে অনেকে ঢাকায় আসলেও বাস্তবতায় বেশির ভাগ নাগরিককে জীবন নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সঙ্গে এ বাজারের তারতম্য বেশি হলেও বাসার পাশে এ বাজার হওয়ায় কিনতে হচ্ছে। তবু মাসিক বাজারগুলো তিনি কারওয়ান বাজার থেকে করেন বলে জানান সিন্দুনীল।

ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শিম ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১১০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম ৭০ টাকা। এতে দেখা যায় পাইকারি বাজার থেকে তিন কিলোমিটারের কম ব্যবধানে প্রতি কেজি পণ্যে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

ফকিরাপুল কাঁচাবাজার থেকে লাউ কিনছিলেন নয়া পল্টনের বাসিন্দা ডাক্তার আনিসুর রহমান। তিনি আরটিভি অনলাইনকে জানালেন,

সবজির তালিকায় তিনি লাউকে বেশি পছন্দ করেন। তাই লাউ কিনছেন। তিনি প্রতিটি কিনেছেন ৫০-৬০ টাকায়। তিনি জানালেন, গাজীপুরে উনার এলাকায় এ সাইজের লাউ ২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়। কিন্তু গাজীপুর থেকে ঢাকায় আসতেই এ পণ্য ৩০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে?

আনিসুর রহমান আরো বলেন, দেশে পুষ্টিহীনতা বাড়ার মূল কারণ সবজি মানুষ কম খাচ্ছে। এজন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে তিনি দায়ী করছেন। মানুষ টাকা দিয়ে পর্যাপ্ত সবজি পাচ্ছে না। মূলত বাজার মনিটরিং এর অভাবে কারণে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে একেক বাজারের একেক দামে পণ্য বিক্রি করছেন। এতে সরকারের নজর বাড়ানো উচিত।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় না আনার কারণে তারা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এজন্য বাজার মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এমন একটি আলাদা বিভাগ করা উচিত- যাদের কাজ হবে বাজার মনিটরিং ও গবেষণা করা। যাতে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। যতদিন বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততদিন ব্যবসায়ীরা নানান অজুহাতে দাম বাড়িয়ে তুলবে।

এমসি/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড
কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু, সরানো হচ্ছে ডিএনসিসি কার্যালয়
হিলিতে কমেছে পেঁয়াজের দাম, অপরিবর্তিত আদা-রসুনের দাম 
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার পরও কমেছে দাম
X
Fresh