• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস (ভিডিও)

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ২৯ জুন ২০১৭, ১৪:১১

জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২শ’ ৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতক্রমে নতুন অর্থবছরের এই বাজেট পাস হয়। এর মধ্যদিয়ে আসছে ২০১৮ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ৪ লাখ ২শ ৬৬ কোটি টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে সংসদ।

গেলো ১ জুন ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২শ’ ৬৬ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপন করেন। যা অর্থমন্ত্রী তার জীবনের সেরা বাজেট বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এই অর্থ বরাদ্দের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে মোট ৫৫টি মঞ্জুরী দাবি সংসদে উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৬ জন সংসদ সদস্য ৫৯টি ছাঁটাই প্রস্তাব ও ৩২৫টি দাবি আনেন।

পরে এর মধ্য থেকে বেশ কয়েকটি দাবীর ওপর আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্যরা। তবে সবগুলো ছাঁটাই প্রস্তাবই কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে ৫৫টি মঞ্জুরী দাবী সরকার ও বিরোধী দলের কন্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। বাজেট পাসের পর সংসদ অধিবেশন আসছে ৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। দুপুরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াও সভাপতিত্ব করেন। শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপনের পর বাজেট পাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্পীকার সরাসরি মঞ্জুরী দাবিগুলো নিয়ে ভোটে দেন।

এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাব আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়।

এর আগে বুধবার সংসদে বিদ্যমান কর ও শুল্ক হারের পরিবর্তনের বিধান করে অর্থবিল-২০১৭ সংশোধিত আকারে পাস করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন।

বিলে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু অর্থবছরের জন্য আর্থিক বিধান সম্বলিত কর ও শুল্ক প্রস্তাবের জন্য কতিপয় আইন ও বিধানের সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া বিলে উল্লেখিত বিধানসমূহ ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করারও বিধান করা হয়েছে। উত্থাপিত বিলের বিভিন্ন কর প্রস্তাবের ওপর কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়।

এবারের বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ৮ বার বাজেট ঘোষণা করলেন। তবে সব মিলিয়ে তিনি ১০ বার বাজেট উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশে এই প্রথম এত বড় অংকের বাজেট পেশ করলেন তিনি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা।

বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে আসবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ।

আসছে অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির(এডিপি)আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর(মূসক) বা ভ্যাট হার রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ হার আগামী ৩ বছর অপরিবর্তিত থাকবে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

যাতে মৌলিক খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন, চিকিৎসা ও শিক্ষা, কৃষি, মৎস্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাতের এক হাজার ৮শ’ ৭৪টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে।

এছাড়া টার্নওভার করের সীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করা হচ্ছে। ‘এইচএস কোড’ ভুক্ত ৫১ হাজার ৪৩টি পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। আসছে ১ জুলাই থেকে এ আইন কার্যকর হবার কথা।

এক লাখ টাকার ওপরে ব্যাংক একাউন্টের জন্য আবগারি শুল্কের(এক প্রকার পরোক্ষ কর যা দেশজ উৎপাদনের ওপর আদায় করা হয়ে থাকে)হার বাড়ছে ৩০০ টাকা। যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ফলে বাজেট প্রস্তাবণায় এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বের আবগারি শুল্কের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৮০০ টাকা।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ এ হার নিয়ে বেশ সমালোচনা করেন। তবে এ হার বাজেটে পাস হওয়ার সময় কমতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

বাজেট প্রস্তাবকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ গেল অর্থবছরের তুলনায় ৬ হাজার ৮১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে। খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, ওষুধ, মেডিক্যাল সামগ্রী, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা উপকরণ, শিক্ষা উপকরণ ও কৃষি উপকরণ ইত্যাদি। তবে দাম বাড়তে পারে বিলাসী সামগ্রীতে।

ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা প্রস্তাবিত বাজেটে অপরিবর্তিত থাকছে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত আয় আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কর থেকে মুক্ত থাকছে। এর বেশি হলেই তাকে কর দিতে হবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা ছিল।

এইচটি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh