• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তামাক ব্যবহারে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হচ্ছে

মিথুন চৌধুরী

  ৩১ মে ২০১৭, ১৮:০৯

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা শহরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। তামাক ব্যবহারের কর্মক্ষম মানুষের বিরাট অংশ অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি দেশে বায়ু দুষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। তামাক বিরোধী একাধিক সংগঠন সুত্রে এ তথ্য জানা যায়।

তবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বেশি হয় শহরের মানুষ। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার না করেও, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে প্রায় ১ কোটি নারী।

বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে এবং অনেকে সফলও হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আইনও কঠোর হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আইনের প্রতি তোয়াক্কাই করছে না দেশের তামাকজাত কোম্পানিগুলো। নিত্যনতুন কারসাজিতে ব্যবহারকারীকে তামাক সেবনে আকৃষ্ট করছে। ফলে চিড় ধরছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সবশেষ জরিপরে মতে, প্রতিবছর ১ লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। ডব্লিউএইচও সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয় প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন তামাক ব্যবহার করে। এছাড়া বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর মাসিক খরচের ৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারে এবং ১০ শতাংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করে। তামাকজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ফলে বছরে আরো ৬৫২.৮৬ মিলিয়ন ডলার লাভ-ক্ষতি হয়। তামাক ব্যবহারে দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানায়, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে তামাকচাষের জমি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান তামাকচাষের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি লক্ষ্যমাত্রা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে।

বিশ্বে ধূমপায়ীর দুই-তৃতীয়াংশ মাত্র ১৩টি স্বল্পোন্নত দেশে বাস করে। এর অর্থ হচ্ছে, তামাকের ব্যবহার ধনী দেশ থেকে কমে গিয়ে ক্রমে নিম্ন আয়ের দেশে বাড়ছে এবং যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সক্রিয় নেই, সেখানে জেঁকে বসছে। যার মধ্যে তামাকজাত পণ্য ব্যবহার উৎসাহে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ এর ভেতরে।

এদিকে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ সালের বিধিমালা অনুসারে ১৯ মার্চ ২০১৬ থেকে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট-মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আইন বাস্তবায়নের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে ৫১ ভাগ তামাক পণ্যে কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করছে না কোম্পানিগুলো।

তামাক রোধ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তামাক দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার বলেন, ধূমপান ও তামাকের কারণে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, এজমাসহ নানাবিধ প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি হয়। এদিকে দেশে তামাক নিয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য, খাদ্য ও স্বরাষ্ট্র এ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশে তামাকপণ্যরোধের অংশে হিসাবে বিড়িতে বিনিয়োগ না করতে বিড়ি ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে সচিবালয়ে বলেন, বিড়ির সময় শেষ। এটা অনেক ক্ষতিকর। এটা রাখা যাবে না। সিগারেট থেকে বিড়ি ইজ সো ব্যাড। তবে আপনাদের যা বিনিয়োগ রয়েছে সেটা শেষ হবার জন্য ৩ বছর সময় দেয়া যাবে। এসময় অল্প ট্যারিফ বাড়ানো হবে। নতুন করে আর বিনিয়োগ করবেন না।

সম্প্রতি তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে তারা জানান দেশের ৮টি বিভাগের ১২০টি দোকানে ১,৮২৭টি তামাক পণ্যের ওপর তারা এ গবেষণা চালায়। প্রজ্ঞা’র কো-অর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার উপস্থাপিত গবেষণায় দেখা যায়, বিড়িতে ১০০ ভাগ, জর্দায় ৯৬.৪ ভাগ, গুল-এ ৭৫.৮৬ ভাগ এবং সিগারেটে ২০.৮৮ ভাগ ক্ষেত্রেই শতভাগ আইন মেনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া ৯২ ভাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ না করেই তামাক পণ্য বিক্রি করছে। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই ১৯.২ ভাগ তামাক পণ্যের প্যাকেটে। ৪৪টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে ৩৫টি এবং ১৭টি ব্র্যান্ডের বিড়ির মধ্যে ১২টি প্যাকেট আগের ছবিসহ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বিড়ির প্যাকেটে শুধু বাংলাদেশে বিক্রির জন্য অনুমোদিত বিবৃতি মুদ্রণ হার শূন্য শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ক্ষেত্রেও আইন প্রতিপালনের হার খুবই উদ্বেগজনক। ৪০.২ শতাংশ জর্দা এবং ২৩.৭ শতাংশ গুল কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।

প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর অবস্থান বিষয়ক চিত্র খুবই ভয়াবহ। ৯১.৭শতাংশ বিড়ির প্যাকেট, ৮৫.২ শতাংশ জর্দা এবং ৪২ শতাংশ গুল কৌটায় সতর্কবাণী সঠিক স্থানে মুদ্রণ করা হয়নি। তামাক পণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ নিয়ে জানে না বিক্রেতারা। জানে না, ৩ মাস অন্তর সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিবর্তন বিষয়ক আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাবে। যার বেশির ভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের। বর্তমানে বিশ্বে ১৫ বছরের বেশি বয়সের জনসংখ্যার ২১ শতাংশ ধূমপায়ী। যার মধ্যে পুরুষ ৩৫ শতাংশ এবং নারী ৬ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী ৩৪ কোটি ৬০ লাখ, যার বেশির ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস করে। নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বেশি পাওয়া যায় তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

তামাক রোধে সংগঠনগুলোর সুপারিশে জানা যায়, তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার নূন্যতম ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী যেনো আইনসম্মত উপায়ে মুদ্রণ করা হয় তা নিশ্চিত করা। আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সতর্কবাণী ছাড়া এবং আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এমন তামাক পণ্য ধ্বংস করা এবং বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া।

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh