• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দেশে ঋণ খেলাপির পরিমাণ সাড়ে ৭৩ হাজার কোটি টাকা

মিথুন চৌধুরী

  ১৮ মে ২০১৭, ১৫:১৬

খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের প্রায় ১১ শতাংশ। এর বাইরে ভিন্ন ব্যাংক অবলোপন (রাইট অফ) করেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে গেলো বছরের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর বিতরণ হওয়া মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, আগের প্রান্তিক তথা ডিসেম্বর’ ১৬ শেষে যা ছিল ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক। ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ৪ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বেশি।

এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, ডিসেম্বর মাসের চেয়ে ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকা বেশি। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে অবশ্য কিছুটা কমেছে। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা।

এদিকে খেলাপি ঋণের কারণে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ৫টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। ঘাটতি মূলধন রয়েছে সোনালী ব্যাংক ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি, বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৬৮৪ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭৪২ কোটি টাকা।

ইতোমধ্যে আসছে বাজেটে সরকারের কাছে এ ঘাটতি পূরনে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি মূলধন জোগান চেয়ে আবেদন করেছে ব্যাংকগুলো।

মূলত ব্যাংকে বিনিয়োগকারীর টাকাকে ঋণ প্রদান করে আয় করে। কিন্তু ঋণের নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করায় তা ঋণ খেলাপিতে রূপ নেয়। এতে ব্যাংকের আয় ও গতি কমে গিয়ে বেড়ে যায় দায়বদ্ধতা। কমে যায় ব্যাংকের বিনিয়োগ। একসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যাংকের চাকা। এদিকে ব্যাংকের আয়ের বিশাল একটি অংশ খেলাপি ঋণের ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু খেলাপি ঋণ যদি ব্যাংকের আয়ের সমান হয় তাহলে আয়ের পুরোটা প্রভিশন ঘাটতিতে ব্যয় করতে হয়। অপরদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যদি ব্যাংকের আয়ের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যাংক নাজুক হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ঋণ প্রদানে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা-আমলা এবং ব্যাংকের অসৎ কর্তারা জড়িত হয়ে যোগসুত্রে কাজ করে। তবে ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কর্তারা খেলাপি ঋণ সৃষ্টির জন্য দায়ী থাকেন। আর বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা জড়িত থাকেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের যে সুবিধা দেয়া হয়েছিল, বিশেষ সেই সুবিধা পাওয়া ঋণের বর্তমান অবস্থা জানতে ১৭ এপ্রিল ব্যাংকগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব শর্ত মেনে বিশেষ সুবিধা নেয়া হয়েছিল সেগুলো মানা হচ্ছে কিনা, গ্রহীতারা ঠিকমতো ঋণ ফেরত দিচ্ছে কিনা, অথবা ওই ঋণ আবার খেলাপি হয়েছে কিনা, এসব বিষয়ে জানার জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। ৯ মের মধ্যে চিঠির জবাব পাঠাতেও নির্দেশনা দেয়া হয়।

গেলো ১৮ এপ্রিল খেলাপি ঋণ রোধে রাষ্ট্রায়াত্বসহ ২০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপণা পরিচালককে ঋণ খেলাপি কমাতে কঠোর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন, তারা ভালো গ্রাহক। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের গ্রাহককে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হয়। অথচ মন্দ গ্রাহকরা ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

এমসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh